বুধবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২১

'তীরন্দাজ' হবেন ?

'তীরন্দাজ'হবেন ?
কর্মক্ষেত্রে সফলতা : শংকরের পরামর্শ

কয়েক দশক ধরে কলকাতার বইবাজারে 'বেস্ট সেলার' তালিকায় একজন লেখকের নাম জ্বলজ্বল করেছে। তিনি শংকর, পুরো নাম মণিশংকর মুখোপাধ্যায়। কী এমন ছিল তাঁর লেখায় ? কেন পাঠকেরা দশকের পর দশক তাঁর বই কিনে চলেছেন ?
          আমি ভাল পাঠক নই, তবুও শংকরের কয়েকটি বই কিনলাম। সাহিত্যের মূল্য কোথায়, কেন, কতটা তা আমি জানিনা। কিন্তু দেখলাম প্রচুর মণি-মানিক‍্য ছড়িয়ে আছে গল্প উপন্যাস জুড়ে। একটা ছোট নোটবুকে লিখলাম, যা আমার কাধের ব‍্যাগে স্থায়ী আসন নিয়েছিল। সময় পেলে, মন খারাপ হলে, সমস্যায় পড়লে নোটবই দেখতাম। আমায় সাহস যোগাত, উৎসাহ পেতাম।
          আমি কেউকেটার ধারে কাছের কেউ নই। আমার ছোটজীবনের ছোট কথাই বলছি।হঠাৎ একটা নোটবই পেলাম হাতের কাছে। দেখা যাক কী আছে নোটবইয়ে। 
          লক্ষ্যে পৌঁছাতে ,  বিশেষকরে ব‍্যবসায়িক লক্ষ্যে পৌঁছাতে শংকর-এর উক্তিগুলি সঞ্জীবনী সুধার ন‍্যায় উজ্জিবক।
          আজকের লেখাগুলি শংকরের 'তীরন্দাজ' উপন্যাস থেকে নেয়া। সপ্তচত্বারিংশ সংস্করণ, বৈশাখ-১৪০০ ।

### পাতা- ৯

"প্রত‍্যেক মানুষের বুকের মধ্যে একজন তীরন্দাজ আছে - যে তাকে সুযোগ সুবিধে দেবে সে এগিয়ে যাবে, যে দেবেনা সে তার ফল ভোগ করবে।"-- জোনাথন হার্ভার্ড।

### পাতা-১৫
অগোছালো মানুষের পক্ষে মানসিক পরিচ্ছন্ন হওয়া সম্ভব নয়। যতই প্রশ্রয় দেয়া যায় ততই এই অগোছালো স্বভাব পাঁকের মত মানুষের ডুবে যাবার পথ সুগম করে দেয়।

### পাতা-১৫
কোথাও কখনো জড়িয়ে পড়বে না।অফিসে যে যত জড়িয়ে পড়ে সে তত বেশি কষ্ট পায়।

### পাতা-১৬
পিছনে যত আঠা কম থাকবে এক সিট থেকে উঠে আরেক সিটে সরতে তত কম কষ্ট হবে।

### পাতা- ১৬
কার্ড ইনডেক্স মেমোরি ডেভেলপ করতে হবে, যাতে যে মুহূর্তে যা প্রয়োজন তা স্মরণ করতে পারেন। কেউ যেন সাময়িক বিস্মৃতির সুযোগ নিতে না পারে।

### পাতা-১৬
নির্দেশ দিলে অমান্য করে না কিন্তু নির্দেশ না পেলেও কিছু করেনা -- হাওয়া বুঝে ব‍্যবস্থা নেবার দূরদৃষ্টি নেই।

### পাতা- ১৯
চিঠির উত্তর দিতে যে ম‍্যানেজার যত দেরী করে তার অবনতি তত আসন্ন।

### পাতা- ১৯
অন্যলোক যখন ষোল আনা করবে তখন আঠারো করতে হবে আমাদের ; প্রতিযোগিতার বাজারে বেঁচে থাকার এইটাই সহজ উপায়।

### পাতা- ২০
..........পার্সোনাল ফাইল দেখতে হবেই

### পাতা -২০
অফিসের স্বার্থেই.....। শারীরিক ফিটনেস ছাড়া এখানে লড়াইয়ে টিকবো কী করে ?

### পাতা- ২৩
কর্মক্ষেত্রকে আনন্দের ক্ষেত্র করে রাখা প্রয়োজন।

### পাতা- ২৬
অনেকক্ষন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে থাকলে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কিছুক্ষণ চোখ বুজে নিজের চেয়ারে বসে থাকো। কল্পনা করো, সীমাহীন অন্ধকারের মধ্যে তুমি ডুবে রয়েছো, কেউ তোমাকে দেখতে পারছে না এবং নিজের অঙ্গ-প্রত‍্যঙ্গগুলি তুমি সুনীল জলস্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছো, তোমার ওজন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ৫/৭ মিনিটে  ম‍্যাজিকের মত ফল দেবে, তোমার ধৈর্য ফিরে পাবে

### পাতা- ২৬

"লড়াই ইজ লড়াই।"

### পাতা - ৪৬
প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে মাথা ঠান্ডা রাখা ...... ইন্টারনাল ফিলজফি।

### পাতা ৪৭
মুখে কিছু না বললেও অভিজ্ঞ ম‍্যানেজাররা যা গোপনে শিক্ষা করে থাকেন তার নাম - বডি ল‍্যাংগুয়েজ।

### পাতা - ৫৭
ভয় পেলেও প্রকাশ করবে না। দেহের ল‍্যাংগুয়েজকে আয়ত্তে রাখতে হবে যাতে কোথাও ভয়ের প্রকাশ না থাকে।

### পাতা ৪৮
যারা প্রতি পদে পদে নির্দেশ প্রত‍্যাশা করে, ..... আধুনিক ইন্ডিয়ান বিজনেসের জগৎ তাদের জন্য নয়।

### পাতা - ৫০
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে পরীক্ষা চলছে, ...সামনের পরীক্ষায় কি প্রশ্ন আসছে তা আগাম না জানলে বিজনেস চালানো যায় না -- ভদ্রভাষায় এর নাম 'ফোরকস্টিং'।

### পাতা ৫০
বিনয়াবনত মানসিকতার কোন মূল্য নেই এখানে।

### পাতা ৫১
বিজনেসের এই দুনিয়ায়, না চাইলে কেউ তোমাকে কিছু দেবে না।

### পাতা ৫৫
....অফিসে দীর্ঘদিন ধরে ভুল ধারণা রয়েছে, সময় অঢেল; কিন্তু... প্রতিটি কর্মীর সময় অনেক টাকায় কিনতে হয়।

### পাতা ৫৬
যে কোনো সমস্যা উঠলেই তা উপরের কর্তার কাছে ঠেলে দিয়ে পরমানন্দে হাত গুটিয়ে বসে থাকবার নাম ম‍্যানেজমেন্ট নয়।

### পাতা -৫৭
আমরা কেউ অপ্রিয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাই না।

### পাতা ৫৭
অকারণে শত সহস্র নোট... কাগজ বাচাঁন, উৎপাদন বাড়ান।

### পাতা ৫৭
যাদের আত্মসম্মান জ্ঞান প্রখর কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্যে দুঃখ তোলা থাকে।

### পাতা ৫৮

তর্কে হার ভাল, মামলায় জিত ভাল।

### পাতা ৬৫
গ্রাম‍্য মেয়েদের যেমন পতিনিন্দে তোমাদের তেমনি অফিস নিন্দে--যতই ভাল হোক কর্মচারীদের মুখ কিছুতেই বন্ধ হবে না।

### পাতা-৬৬
মাইনে যাইহোক, কাজের যে দায়িত্ব যে নিয়েছে তাকে তা পালন করতেই হবে।

### পাতা-৬৭
খরিদ্দারই রাজা - কাস্টমার ইজ দি কিং।

### পাতা-৬৮
অফিস বা কারখানাটা মানুষকে ভালবাসার জায়গা নয়। মানুষকে কাজে লাগিয়ে তোমার লক্ষ্যস্থলে পৌঁছনোই কাজ - কর্মকুরুক্ষেত্রে মানুষ সম্বন্ধে সত‍্যিকারের ভালবাসা থাকলে নিজেরও বিপদ, প্রতিষ্ঠানেরও বিপদ।

### পাতা- ৬৮
এখন মানুষকে বিচার করা হয় তার পরিশ্রম কতখানি ফল দিলো তা মেপে দেখে।

### পাতা- ৭১
বারেবারে পরিস্থিতি বদলায় এবং বারেবারে অগ্নিপরীক্ষা দেবার জন্য পদস্থ কর্মীদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।

### পাতা- ৭১
প্রত‍্যেক অফিসারই টোয়েন্টিফোর আওয়ার সারভেন্ট।

### পাতা-৭২
মানুষ এখন বর্তমানকে নিয়েই ব‍্যস্ত। নগদ সুবিধে দিতে না পারলে কেউ তোমাকে পয়সা দেবেনা।

### পাতা-৭৫
অফিসে কারও সঙ্গে কাজ ছাড়া অন্য কোন বন্ধনে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়।

### পাতা-৮৩
ঝুঁকি না নিলে মানুষ কখনো এগিয়ে যায় না।

### পাতা-৯৩
বিজনেস মানে সময় থাকতে অবস্থা বুঝে নেয়া। বিজনেস মানে বুদ্ধি খাটিয়ে প্রতিকুল অবস্থাকেও নিজের সুবিধেয় লাগানো। বিজনেস মানে এমন দামে  জিনিস কেনা এবং এমন দামে বেচা যাতে লাভের মাত্রা স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে থাকে। বিজনেস মানে .... কাজ হাসিল করা।

### পাতা- ৯৭
পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে হবে। ম‍্যানেজমেন্ট অফ চেঞ্জ - পরিবর্তনকে ম‍্যানেজ না করলে আমাদের পতন অনিবার্য।

### পাতা-১১৫
প্লানিং এবং স্ট্রাটেজি ছাড়া দূর্গম লক্ষ্যস্থানে আদৌ পৌঁছনোর সম্ভাবনা নেই।

### পাতা- ১১৫
প্লানিং  -  কোথায় যেতে চাও। লক্ষ্য।

স্ট্রাটেজি  -  কিভাবে পৌঁছাবে। রণকৌশল।

### পাতা - ১১৫
SOWT :
S. -. স্ট্রেংথ।  কোন শক্তি কতটুকু আছে তার                ‌‌‍        হিসেবনিকেশ।
O. -. অপরচুনিটি। কোথায় কি সম্ভাবনার সুযোগ       
        রয়েছে তা খোঁজ করা।
W  -  উইকনেস। প্রতিষ্ঠানের দূর্বলতাগুলো খুঁজে   
        চিহ্নিত করে রাখতে হবে। যাতে তার 
        সংশোধন করা যায়।
T  -  থ্রেট। কোথায় কি ভয়ের সম্ভাবনা দেখা 
        দিচ্ছে তা তালিকাবদ্ধ করা।

### পাতা- ১১৫
যারা বিজনেস চালায় তাদের নির্ভিক হতে হয় সৈন্যদের মত।

### পাতা- ১১৫
লক্ষ্যস্থানে নিরাপদে পৌছাতে হলে আমাদের জানতে হবে- আমাদের শক্তি কোথায়, দূর্বলতা কি, সামনে কি সুযোগ এবং বিপদও কি আসতে পারে।

### পাতা- ১২২
অফিসে মানুষের চিন্তাধারায় গোলমাল রয়েছে। লক্ষ্য সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা নেই বলেই তারা বারবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে।

### পাতা- ১২৩
তাড়াতাড়ি কাজ করতে শেখো।

### পাতা- ১২৩
শক্তির অপর নাম একাগ্রতা।

### পাতা - ১২৩
সুকৌশলীরা সময় বুঝে নিজের দূর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করেন।

### পাতা- ১২৪
প্রতিটি বিপদের মধ্যে কিছু সুযোগ এবং প্রতিটি সুযোগের মধ্যে কিছু বিপদের সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে।-চীনা প্রবাদ।

### পাতা- ১২৪
পৃথিবীর সমস্ত মহাপুরুষেরা পাবলিক রিলেশনে খুব শক্তিমান।

###পাতা -১২৭
কর্মক্ষেত্রে কিছু মানুষকে হিড়হিড় করে টানতে হয়,আর কিছু মানুষ নিজস্ব শক্তিতেই চলমান, ইংরেজরা যাকে বলে সেল্ফ মোটিভেটেড।ইস্কুল ছাত্রের মানসিকতা নিয়ে যারা কর্মক্ষেত্রে আসে তারা সব সময় কড়া হেডমাস্টারকে সম্মান করে। পরীক্ষা, তিরস্কার, পুরষ্কার ছাড়া এরা মোটেই চলমান নয়।

### পাতা- ১২৯
সময় আমাদের দিকে নয়, আমরা ধার করা সময় নিয়ে.... চালাচ্ছি।

### পাতা- ১২৯
প্রতিষ্ঠানে কতদামে আমরা 'শান্তি' এবং 'অকর্মন‍্যতা' কিনবো তা আর আমাদের উপর নির্ভর করছে না। আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সব রকম সিদ্ধান্ত যার মর্জির উপর নির্ভর করছে তাঁর নাম  - মি: কাস্টমার।

### পাতা- ১৩১
জনমানবশুন‍্য হলেই ম‍্যানেজারদের একাগ্রতা বাড়ে, তীরন্দাজের সফল হবার সম্ভাবনা ছেড়ে যায়।

### পাতা- ১৩১
যা ভাবা যায় তা কর্মে পরিণত হওয়ার আগে প্রকাশ করলে অকর্মন‍্যতা বেড়ে যায়।

### পাতা- ১৩২
কোন চিন্তাই শেষ পর্যন্ত থাকে না।

### পাতা- ১৩৫
নো নিউজ ইজ গুড নিউজ।

### পাতা- ১৩৭
পৃথিবী পাল্টায়না, মানুষই পাল্টে যায়, আর পৃথিবীকে দোষ দেয়।

###পাতা- ১৩৮
ত‍্যাগ আর ভোগ, গ্রহণ ও বর্জন, বন্ধন ও মুক্তি - একসঙ্গে এই পৃথিবীতে হয়না। -- গৌতম বুদ্ধ।

### পাতা - ১৪৬
সবচেয়ে ভালটা আশা করবে আর সবচেয়ে খারাপের জন্য তৈরি থাকবে।

### পাতা - ১৪৭
পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ অথচ সবচেয়ে সফল এবং সম্মানিত কোম্পানি শ্লোগান - "থিংক"। চিন্তা করুন। ভালমন্দ সবরকম চিন্তা করুন।।



শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

কবিতা : অন্যপারে, অন্য দরজায়

কবিতা: অন্য পারে, অন্য দরজায়

আজকের কবিতা দেশভাগের নয়। তবে দেশভাগের সাথে এক ফল্গুধারা যোগ আছে। আর যন্ত্রণা আছে, একটু ভিন্নতর।

তখন আমি ভার্সিটিতে পড়ছি। প্রিয়বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া আকছার ঘটতো। আসলে ছোটবেলায় যে মাতৃত্বের অভাববোধ ছিল, তার কিছুটা যেন পুষিয়ে যেত বন্ধুদের মায়েদের আদর পেয়ে। আমার মত গেঁয়ো ছেলেকে তাঁরা ভালবাসত।

তেমনি এক বন্ধুর বাড়ি মাঝে মাঝে যেতাম।তার ছোটভাইয়ের সাথে গল্প করতাম, মাসিমার সাথে ফেলে আসা দেশের গল্প করতাম। আমাকে পেলে তিনি প্রাণখুলে দেশীয় ভাষায় কথা বলতেন। তাঁর আঞ্চলিক ভাষা আমার আঞ্চলিক ভাষা থেকে আলাদা, সব বুঝতাম না। তবে ভাবের আদান প্রদানে কোন সমস্যা ছিল না।

একসময় পড়া শেষ হল। চাকরি পেলাম, বন্ধুও পেল। সময়ের অভাব হল। তবুও যেতাম, ছমাসে নমাসে সুযোগ করে যেতাম। ছোটভাইয়ের সাথেই বেশি গল্প হতো। তার আশ্চর্য দুনিয়ায় আমি সঙ্গী ছিলাম।

তেমনি কোন একদিনে গল্পশেষে ঘরে ফেরার জন্য পা বাড়ালাম। মাসিমাকে বললাম- আসি।
মাসিমা হঠাৎ বেশ গম্ভীর গলায় বললেন
 - এসো, তবে আর এসোনা। 
          বেশ হতভম্ব হয়ে গেলাম। মাসিমার মুখের দিকে তাকালাম। মাসিমা আবার বললেন
 - তোমার বন্ধু এখন এখানে থাকেনা। তোমার এখানে আসবার আর কোন দরকার নেই।
   তিনি আর দাড়ালেন না। নিজের ঘরে চলে গেলেন।

সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। মাসিমা কেন আমায় বারন করলেন জানিনা। ভারীমনে সিড়ি ভেঙ্গে নামছিলাম। হঠাৎ কানে এল 
- দাদা আবার আসবে।
পিছন ফিরে দেখলাম, ভাই। ওকে কথা দিলাম
 - আসবো।

তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। আমার আর ভাইয়ের কাছে যাওয়া হয়নি। একদিন বন্ধুর কাছে শুনলাম, ভাই আর এ পৃথিবীতে নেই। অকালে মারা গেছে।

মন ভারী হল। ভাইয়ের শেষ অনুরোধ কথা দিয়েও রাখতে পারিনি। মনের যন্ত্রণা প্রকাশ করতে চেষ্টা করলাম।

   সিঁড়ির কয়েকধাপ নিচে বাঁক নিলাম
   সোনা দরজায় দাঁড়িয়ে ;
   নিষ্পাপ আদুরে স্বরে বলল আবার আসবে।

   আসবো বলে নামতে থাকলাম।

   নামতে নামতে ত্রিশ বছর কেটে গেছে কবে,
   সোনা কি এখনো দাঁড়িয়ে আছে দরজায় ?
   আদুরে আবদারে ?

   আর একটু দাঁড়াও সোনা
   এবার উপরের সিড়ি ভাঙ্গার পালা
   সময় ফুরিয়ে আসছে, কথা রাখতে হবে।
   এবার আসবো, আসবো ঠিক
   এপারে নয়, অন‍্যপারে অন্য দরজায়।।

#writings, #goutamaalee, কবিতা

বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২১

ধৈর্য । Patience

সবুরে মেওয়া ফলে: ধৈর্য
#ধৈর্য #Patience

ছবিগুলো দেখছি। গ্রামের ছবি। একটা সেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠান। মুন্ডাপাড়ায় স্বাস্থ্য শিবির। শহর থেকে নানা ধরনের লোক এসেছে। আমি ছবি তুলছি। হাস-মুরগির-মানুষের, প্রকৃতির। একটা বাচ্চা ছেলে খালিগায়ে হাফপ্যান্ট পরে স্কুলের দেয়ালে ঠেস্ দিয়ে দাঁড়িয়ে। একটা ভাল ছবি হতে পারে। তুললাম। তারপর ছবির খোঁজে এদিক ওদিক।

অতিথি অভ‍্যাগতদের আসা যাওয়ার ছবি তুলেছি। অনেক ছবিতে দেখা যাচ্ছে ছেলেটিকে।  কারণ ওর দাড়ানোর জায়গা হলে /স্কুলে ঢোকার কাছেই। ছেলেটার সমবয়সীরা হৈ হৈ করে ছোটাছুটি করছে। সে ব‍্যতিক্রম। ভাবলেশহীন দাড়িয়ে আছে।

ঘন্টা দেড়েক পর টিফিন এলো। ছেলেটা তখনও দাঁড়িয়ে। টিফিন খেতে গিয়ে দুইজন অতিথির নজরে এলো বাচ্চা ছেলেটা। দুইজন দুটো কলা দিল তাকে। এবার তার মধ্যে চাঞ্চল্য এলো। প্রথমে কলার খোসা ছাড়িয়ে এক কামড় খেল। তারপর সেখান থেকে ছুটে গেল তা বন্ধুদের ভিড়ে। #patience

এবার আরো কয়েকটি ছবি , আরেকটু গল্প।
          একটা বকের ছবি। একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে মনে হবে ঘুমাচ্ছে। আমি যদি ওর ঘুম ভাঙ্গা পর্যন্ত অপেক্ষা করি, একসময় বিরক্ত হয়ে যাবো বা চোখে ঘুম এসে যাবে। ধৈর্যের পরীক্ষা। এক বা দুঘন্টা কেটে যাবে। যখন রণে ভঙ্গ দিতে চাইবো, হয়তো সেই সময় দেখবো যে বকের ঠোটে একটা মাছ। অবাক হয়ে ভাববো, কখন মাছটা ধরলো !
          একটা ব‍্যাপার নিশ্চিত যে বকটা ঘুমাচ্ছিল না। আমি অস্থির হলেও সে ছিল স্থির। বকের লক্ষ্য ছিল মাছ ধরা। লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত বক স্থির, একাগ্র। #firmness

আমরা মাকড়সার জাল দেখেছি। জাল তৈরি করে মাকড়সা থাকে জালের কেন্দ্রে। জালের যে কোন অংশে কিছু একটা পড়লেই সে টের পায় আর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে চলে যায়। অতি তৎপরতার সাথে তার শিকারকে নিজের জাল দিয়ে মুড়ে দেয়। কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও মাকড়সা সদা সতর্ক থাকে। একাগ্র থাকে জালের কোথাও কিছু পড়লো কিনা সেটা বুঝতে। #calmness

বিড়াল। আমরা সবাই চিনি। দুধভাত, মাছ, মাছের কাঁটা তার অতিপ্রিয়। ইঁদুরকে শায়েস্তা করতে গ্রামে বিড়াল পোষা হয়। বিড়াল রাতে যেমন ইঁদুর ধরে তেমনি দিনের বেলা চড়ুই পাখিও ধরে। কিন্তু যদি বিড়ালের ইঁদুর ধরা বা চড়ুই ধরা দেখি, বুঝতে পারবো কী ধৈর্য, একাগ্রতা নিয়ে সে তার খাদ্য ধরে।
          আমার বাড়ির পিছনের দিকে একটু ফাকা পোড়ো জায়গা আছে। ময়লা ফেলে কেউ কেউ। সেখানে ইঁদুরের গর্ত আছে। একবার দেখলাম, একটা সাদা বিড়াল গর্তের মুখে ওৎ পেতে আছে। ক‍্যামেরাটা নিয়ে জানালার ধারে বসলাম। একসময় ধৈর্যের অবসান হলো। উঠে গেলাম। বাজার থেকে এসে দেখি বিড়াল বসেই আছে। দুপুরে স্নান সেরে সেখানে গেলাম। বিড়াল গা এলিয়ে শুয়ে আছে। ভাবলাম সে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর পরক্ষণেই ঘটল সেই বহুপ্রতিক্ষিত ঘটনা। বিড়ালটা যেন ঘুমন্ত অবস্থাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল গর্তের মুখে। একটা ধেড়ে ইঁদুরের মাথার নিচে কামড়ে ধরেছে।
          প্রশ্ন হচ্ছে, বিড়ালটা কি সত্যি ঘুমাচ্ছিল ? নাকি সমস্ত ইন্দ্রিয় গর্তের দিকে সজাগ রেখে  ভান করে পড়েছিল?  এখানেও বিড়াল একাগ্রতা, ধৈর্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাল।
#endurance

আরেকটি গল্প বলি।
          আমাদের গ্রামের ভরতদা দাবা খেলতেন গ্রামের প্রভাবশালী ডাক্তারবাবু তথা নাট‍্যশিল্পী বিমলবাবুর সাথে। অনেক সময় বেলা ফুরালেও তাঁদের খেলা ফুরাতো না। ভরতদা মাঝে মাঝে মাছ ধরার কোচ নিয়ে বিলের দিকে যেতেন। বিকালে তিন চারটে শোলমাছ দড়িতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরতেন। গ্রামের মানুষ তাঁকে ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুর পাড়ে বসে থাকতে দেখতে অভ‍্যস্ত।
          সেই সময় বিলে সারাবছর জল থাকতো। চাষীরা নীচু জমিতে পুকুর কাটতো। বিলের জল কমতে থাকলে মাছ পুকুরে জড়ো হতো। পুকুর সাধারণত কচুরিপানায় ভর্তি থাকতো। ভরতদা পুকুরের মাঝের দিকে কিছু পানা তুলে পরিষ্কার করে নিতো। সেখানে মাছ নিশ্বাস নিতে বা ছাড়তে এলেই ভরতদার তাক করা কোচ পড়তো মাছের উপর। যতক্ষণ মাছ ধরতে পারছেন, কোচ তাক করে দাবাখেলার মত ধ‍্যানমগ্ন হয়ে পুকুরপাড়ে বসে থাকতেন। #inspiration

সব কয়টা গল্পই একাগ্রতার গল্প, ধৈর্যের গল্প, বুদ্ধি সচল রাখার গল্প। এবার একটা বিপরীত গল্প বলি, পানকৌড়ির গল্প। 
          পানকৌড়ি জলে ডুবে ডুবে মাছ ধরে। সে সদাচঞ্চল । বারবার ডুব দেয়। সব সময় মাছকে তাড়া করে। মাছেরা পালাতে থাকে। যে পালাতে পারে না তাকে ধরে। পুকুরপাড়ে বসে এমন মাছধরা অনেকবার দেখেছি। মাছ ধরতে দেখেছি আবার অনেকরার ডুব দিয়েও মাছধরতে না পেরে চলে যেতে দেখেছি। #tolarance
          আমরা ছাত্রজীবনে বা কর্মজীবনে বেশিরভাগই এই পানকৌড়ির দলে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। এলোপাতাড়ি কাজ করি। কখনো সফল হই কখনো ব‍্যর্থ হই। ভাগ‍্যকে দোষারোপ করি।

এবার এগল্পের নায়কের কাছে আসি। অন্য বাচ্চারা যখন হৈ হুল্লোর করে বেড়াচ্ছে, তখন ছেলেটি স্থির। তার তৃতীয় সত্বা তাকে বলে দিয়েছে - অতিথিদের জন্য খাবার আসবে। হয়তো পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। তার বয়সী সহজাত ছেলেমী সে আটকে রেখেছে। এটা ঐ বয়সে ব‍্যতিক্রমী প্রয়াস। অপেক্ষা নাকরে দূরে থাকতে পারতো। খাবারের সময় সামনে এসে দাঁড়াতে পারতো। দেড়ঘন্টা সময় সে যে হাভাতের মত ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে তাকিয়ে ছিল- তাও নয়। সে লক্ষ্য হারাতে চায়নি আবার নজরে থাকতে চেয়েছে। অবশেষে লক্ষ্যপূরণ। তারপরেই সে ছুটে গেছে খেলার সাথীদের কাছে।

এই ছেলে মনে করিয়ে দিল সেই প্রবাদ --
          সবুরে মেওয়া ফলে।

এর থেকে শিখতে হয় কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে হয়। আর সজাগ রাখতে হয় নিজেকে, কী ঘটতে পারে বা কী করলে কী হতে পারে। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ধীর স্থির হয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়, আর গন্তব্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত ক্ষান্ত দিতে হয়না। ধৈর্য ও বুদ্ধি- দুটোর প্রয়োগ করতে পারলে সাফল্য আসবেই।।
#lifestyle, #motivation, #inspiration

মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

কবিতা চর্চা : কাশ্মীর।

কবিতা চর্চা : কাশ্মীর
কাশ্মীর মানে গরম খবর। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরবর্তী একটা অত্যন্ত জটিল সমস্যার চটজলদি সমাধান করা হল। আমি চাই, সমাধান যথার্থই সমাধান হোক। মানুষ শান্তিতে বসবাস করুক।

কাশ্মীর নিয়ে আমি অন্য যন্ত্রণা অনুভব করি। আমার যন্ত্রণা পাঞ্জাব ভাগের যন্ত্রণা, আমার যন্ত্রণা বাংলা ভাগের যন্ত্রণা। দেশভাগ ভারত উপমহাদেশের এক স্থায়ী ক্ষত তৈরি করেছে। কাশ্মীরিদের যে যন্ত্রণা ছিল, সে যন্ত্রণা আরো বেশি তীব্র হল কাশ্মীর আবার ভাগ হওয়ার জন্য। কাশ্মীর যেন লুটের বাতাসা। চিন নিল, পাকিস্তান নিল, ভারত নিল। নিয়েই ক্ষান্ত হল না । একটা জাতিসত্তাকে খন্ডবিখন্ড করে দেয়া হলো। যেমন করা হয়েছে বাংলার ক্ষেত্রে। বাংলা যেন পচা মাংসের আধার। শকুনেরা তাকে টেনেহিঁচড়ে ভাগ করেছে।শুধু পূর্ব আর পশ্চিম নয় সে বিলিয়ে গেছে বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, ত্রিপুরার মধ্যে। আরো ভাগের চর্চা চলছে।
          বাংলাভাগের কষ্ট নিয়ে আমি কাশ্মীরকে দেখি। বাঙালি জাতিসত্বা বিভাজনের যন্ত্রণা নিয়ে আমি কাশ্মীরকে দেখি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে নিজের কষ্ট, আনন্দ, যন্ত্রণা শব্দের মাধ্যমে ধরতে। সে চেষ্টা কখনো কবিতার মত দেখতে হয় কিন্তু কোনমতেই কবিতা হয়ে ওঠেনা। তবুও লিখি। তেমনি কাশ্মীর নিয়ে আমার লেখার চেষ্টা।

কারা যেন বলেছিল হিটলারের সমাধী হয়েছিল বাঙ্কে
সভ‍্যসমাজে তার পূনরুথ্থান হবেনা কখনো,
তার নাম উচ্চারিত হবেনা রাজ-অন্তরালে।
তবে এ দামামা কিসের ?
গণতন্ত্রের কফিনে কার উচ্চারণ 
আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়া
এই ভারতবর্ষে ? এই বাংলায় ?

সেদিনের জার্মানি ঘোষণা করেছিল-
  জাজ মিউজিক বন্ধ
  হিটলারের ছবি থাকবে রাস্তায়, কোনে কোনে
  নাজির বিরুদ্ধাচারী সব বই ধংস হবে
  ইতিহাস হবে নাজির চিন্তার বাহক।

আজকের ভারত জানান দিচ্ছে-
   "এখন গনতন্ত্র একটা দলের জন‍্যে,
   এখন স্বর হবে একজনের, এক ধারনার"
   হুবহু হুঙ্কার এক, এক রক্ত-চারা !

এ স্পর্ধিত স্বর আমার গনতন্ত্র নয়;
হে মানুষ, তুমি গনতন্ত্রের সশস্ত্র প্রহরী,
তোমার আঙ্গিনায় রোপন করলাম
আমার স্বর, বিরুদ্ধ উচ্চারণ
বেঁচে থেকে হোক মহীরুহ
মানুষের জন্য।।

লেখার পরে পড়লাম। একি হলো ! কী বলতে চাইলাম আর কী লেখা হলো ! কোথায় দেশভাগের সে জ্বালা, যন্ত্রণা ? 
আবার কলম ধরলাম।

     আসলে এটা উৎসব।

     সেই কবে রবীন্দ্র-রানী প্রজাদের বাড়ি ঘর
     পুড়িয়ে উৎসবে মেতেছিল
     সেই ধারা চলছে, অহরহ।

     রাজারা সাতভাই।
     ক্ষমতার পিঠে ভাগ করতে গিয়ে
     পাঞ্জাব ও বাংলাকে ভাগ করল।
     প্রজা   সেতো পরজীবী,
     কিবা যায়-আসে মহারাজাদের ?
     জন্মস্থান, ভাষাস্থান, ধর্মস্থান
     আবেগের শিকড়ে কুঠার হানলো তারা।
     অথচ এখনো, শতবর্ষের পথে এগিয়ে চলা
     স্বাধীনতাকে শুনতে হয় দীর্ঘশ্বাস, 
     মিলখা সিং ঋত্বিক ঘটকের হা-হুতাশ !

     আবার উৎসব। আবার মহোৎসব।
     আবির মিষ্টি বাজি
     নাচ গান আলোর রেশনাই ।
     পাঞ্জাব বাংলা্য পর এবার কাশ্মীর,
     ভেঙ্গে দাড়া এবং শির
     খন্ড খন্ড করে একটা জাতিসত্বা ; বিলীন !

     আসলে এটা উৎসব,
     এক দেশ, এক ভাষা, এক জাতি গড়ার
     অনন্য প্রয়াস।

     কবে আর হাড় থেকে জন্ম নেবে
     তোমার আমার মুক্ত পাহাড় ?

কাশ্মীর আছে ধর্ম থাকবে না ? স্বাধীনতার পর থেকে ধর্মই তো শাসকদলের বর্ম। নির্বাচন এলেই এ বর্ম আটোসাটো হয়ে ওঠে, অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে যায় দুটো নাম- পাকিস্তান আর কাশ্মীর। দেশাত্মবোধের অনুপ্রেরণায় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় লিপ্ত হই। নিজের অন্তরে বিদ্বেষের বিষ লালন করি। সে বিষে অন‍্যের ধর্ম, অন‍্যের দেশ বিদ্বেষের লক্ষ্য হয়ে যায়।
          সন্ত্রাসীদের অনেক ক্ষেত্রেই শাসক তৈরি করে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। প্রতিবেশী রাষ্ট্রও তাই করছে। কিন্তু তাদের থেকে রক্ষা করার দায় সরকারের। তার জন্য সমগ্র রাজ‍্যবাসী সন্ত্রাসবাদী হতে পারে না। নাগরিক যদি গনতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়ে তার জন্য সন্ত্রাসী তকমা পেতে পারে না। 
           কাশ্মীর ভাগ মেনে নিতে পারেনি কাশ্মীরের আমজনতা। তাইতো খবরে ছাপা হয় কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত পন্ডিতদের আন্দোলনের কথা। সেই পরিক্রমায় যদি সন্ত্রাসবাদীদের দেখি তবে ভগৎ সিং, সুভাষচন্দ্র, মাও সে তুং, চে, মেন্ডেলা... সবাই সন্ত্রাসী, যাঁরা পরবর্তীতে দেশপ্রেমিক যোদ্ধা।
          
ধান ভানতে শিবের গীত ?  আবার কলম ধরি।

   পরাধীন ভারতে একদল মানুষ
   মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য লড়ছিল,
   মানুষ মারছিল, নিজেরা মরছিল।
   ইংরেজ শাসক বলল, ওরা সন্ত্রাসবাদী।
   ওদের ধরলো, মারলো।
   সন্ত্রাসবাদী দুই প্রদেশ ভাগ করে দিল,
   তৃপ্তির ঢেকুর উঠল মুখে।

স্বাধীনদেশে সন্ত্রাসবাদের তকমা গেল পাল্টে,
তাঁরা হলেন দেশপ্রেমিক, স্বাধীনতা সংগ্রামী,
অগ্রপথিক, প্রণম‍্য।

   ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হল,
   পরাধীন হল কাশ্মীর।
   প্রবল প্রতাপ মুঘল বা বানিয়া ইংরেজ শাসনে
   যাঁরা ছিল উচ্চশির, তাঁরা খন্ডিত হল
   তিনটি প্রতিবেশী দেশ তাঁদের খাবলে খেল,
   পরাধীন হল কাশ্মীর।

   পরাধীন কাশ্মীরের একদল মানুষ
   মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য লড়লো
   মানুষ মারলো, নিজেরা মরলো ।
   শাসক বলল, ওরা সন্ত্রাসবাদী।
   ওদের ধরলো, ওদের মারলো।
   সন্ত্রাসবাদী কাশ্মীরকে আবার ভাগ করে দিল,
   তৃপ্তির ঢেকুর উঠল মুখে।

   স্বর্গ যদি কখনো স্বাধীনতা পায়
   ওঁরা কি তখনো দেশপ্রেমিক হবে ?
   ওঁরা কি হবে স্বাধীনতা সংগ্রামী ?
   অগ্রপথিক এবং প্রণম‍্য ?

কথিত আছে আদি কবি বাল্মীকির যাত্রাপথে এক ব‍্যাধ একটি পুরুষ পাখি তীর দিয়ে মারে। স্ত্রী পাখির করুন কান্নায় বাল্মীকি বিচলিত হন। ব‍্যাধের উপরে রেগে যান এবং অভিশাপ দেন --

   মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ।
   যৎ ক্রৌঞ্চমিথুনাদেকমভধীঃ কামমোহিতম্ ।

সংস্কৃত ভাষায় এটাকেই প্রথম কবিতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। যেকথা বলার, এক্ষেত্রে বাল্মীকি নিজের মুখের ভাষায় নিজেই অবাক হয়ে যান, তাঁর মুখ দিয়ে অন্তর থেকে যে ভাষা বেরিয়ে এলো- তা স্বতস্ফূর্ত, আরোপিত নয়। আমি বাঙালি হয়ে কাশ্মীরিদের অন্তরের কথা লিখতে চাইছি যা আরোপিত। তাই সে যন্ত্রণা আমার নেই যা তাঁদের আছে। কাশ্মীরের মানুষের যন্ত্রণা বোঝার অন্তর্স্থিত ক্ষমতা আমার নেই।আমি যতবার লিখতে চেষ্টা করছি, সেটা আমার ব‍্যথা, আমার রাগ বা আবেগ প্রকাশ পাচ্ছে। সংস্কৃতির নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে অন‍্যের ভাষা-সংস্কৃতি-দেশ হারানোর যন্ত্রণায় মরচে ধরেছে।।


     


শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১

হোন্নাইয়া কেম্পা ও বোবাদিদি।

হোন্নাইয়া কেম্পা ও বোবাদিদি।

কাগজে একটা খবর পড়লাম। কর্নাটকের একজন অন্ধমানুষ ভারতের সর্বোচ্চ পরীক্ষা, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করেছে। তাঁর নাম কেম্পা হোন্নাইয়া। তাঁর প্রথম কর্মস্থল পশ্চিমবঙ্গ। তিনি এই রাজ‍্যে প্রথম অন্ধ আই এ এস।
          অন্ধমানুষের কথায় হেলেন কেলারের কথাই মনে আসে। শুধু অন্ধ নন, তিনি কথা বলতে পারতেন না, কানেও শুনতে পারতেন না। তা সত্ত্বেও অসাধ‍্য সাধন করেছেন তিনি। অন্ধজনে আলো দান করেছেন। 
          একজন হেলেন বা কেম্পা এমনি এমনি হয়না। চারাগাছ যত্ন চায়। উপযুক্ত যত্ন পেলে সে মহীরুহ হবার সুযোগ পায়। হেলেন যেমন পেয়েছিলেন মা-বাবার কাছে তেমনি কেম্পা পেয়েছেন তাঁর জীবন সঙ্গীনির কাছ থেকে। কিন্তু এই উপযুক্ত যত্ন নেয়া যে কত কঠিন, ধৈর্যের চুড়ান্ত পরীক্ষা, তা একমাত্র যাঁদের ঘরে এমন মানুষ আছে তাঁরা জানেন। কেম্পা হোন্নাইয়া যথাযথ বলেছেন তাঁর সম্বর্ধনায়, " এ সম্বর্ধনা, পুরষ্কার আমার প্রাপ্য নয়, আমার স্ত্রীর প্রাপ‍্য।" তাঁর স্ত্রীর নাম অচিন্তা। দুই সন্তানের মা।

আমার শৈশব ও কৈশোর জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে এমনি একজন মানুষ। আমার বড়দি, যাঁকে সবাই 'বোবা' নামে ডাকতো। যদিও সে ডাক সে শুনতে পেত না। তাঁর একটা নাম ছিল, যে নামটা সে লিখতে শিখেছিল দাদা বা ভাইদের অনুকরণ করে। সে নামে কেউ তাঁকে ডাকতো না। ডাকলেও কানে শুনতে পেত না।

আমরা সাতভাই, দুই বোন। দিদি তৃতীয়। পরিবারে প্রথম অক্ষর জ্ঞান বড়দার। একে একে সবাই কলেজের গন্ডি পেরিয়েছে। শুধু বড়দি বা বোবাদি বাদে। অজপাড়াগাঁয়ে নিরক্ষর প্রধান গ্রামবাসীদের মধ্যে আমাদের পরিবার বিরলতম। যথার্থই গোবরে পদ্মফুল।
        বোবাদি বড় হয়েছে অনাদর ও উপেক্ষায়।চৌদ্দ পনের বছর বয়সে এক বৃদ্ধের সাথে বিয়ে হয়। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দিদিকে ঘরে নিলেন। আমাদের দয়া করলেন। কিন্তু দিদি স্বামীর ঘর করতে চাইলনা, স্বামীর ঘরে থাকলোনা। সুযোগ পেয়ে পালিয়ে এলো বাড়িতে। বারবার জোর করে নিয়ে যেত, আর দিদি চলে আসতো। ছোটবেলায় অসহায় ভাবে দেখতাম দিদিকে টেনেহিঁচড়ে লাঠিপেটা করে নৌকায় তুলতে। বছর খানেকের মধ্যেই দিদির বর ক্লান্ত হয়ে গেল। হাল ছেড়ে দিল। তার কয়েক বছরের মধ্যে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। মরার খবর পেয়ে দিদি প্রথমবার স্বইচ্ছায় শশুরবাড়ি গেল।শ্রদ্ধাদি করে ফিরে এলো বাপের ঘরে। অবহেলা, অত‍্যাচার তাঁর চিরসাথী হয়ে গেল।

আমরা, ভাইয়েরা, এক এক করে পূর্ববঙ্গের থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে লাগলাম। দিদি প্রমাদগুনতে থাকলো। সর্বশেষ এলাম আমি। ভিটে আঁকড়ে রইলো বাবা, জেঠিমা, দিদি। এবার বাবা ও জেঠিমাকে আসতে হবে। অবহেলার মর্ম বুঝেই দিদি আর আমাদের গলগ্রহ হতে চাইলনা। আগে কয়েকবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছে, সফল হয়নি। এবার সফল হলো। খাঁচা ছেড়ে পালালো, আমাদের মুক্তি দিয়ে গেল।
          আমার দিদি হেলেন বা কেম্পার দলের মানুষ ছিল।তাঁরা যে যত্ন পেয়েছে, তার এক কণাও দিদি পায়নি। অধিকাংশ এমন মানুষেরা সে যত্ন পায়না। যদি পেতো তবে সেই সব মানুষদের জীবনও প্রাণবন্ত হতে পারতো, সফলতা পেতে পারতো।
          শারীরিক অক্ষম মানুষদের উত্তরণের কত কাহিনী আমরা জানি। আমার দিদির জীবন, অসফল জীবন। এমন অসফল জীবনের ছড়াছড়ি আছে। কিন্তু কেম্পা হোন্নাইয়ার মত সফল জীবনও আছে। যেমন কৃত্রিম পা নিয়ে সুধাচন্দ্রন বিখ্যাত ডান্সার, ইংলিশ চ‍্যানেল বিজয়ী মাসুদুর রহমান বৈদ‍্য। এরা প্রত‍্যেকে অসাধ‍্য সাধন করেছেন কঠোর পরিশ্রম আর অদম্য মনের জোরে। এদের জীবনসংগ্রাম থেকে আমরা কি কিছু শিখতে পারি ?
          কোন বাধাই বাধা নয়। লড়াই করলে ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়। মনে রাখতে হবে -
          যে পারে তাকেই লোকে মনে রাখে।

#motivation, #inspiration, #lifestyle

একাকিত্ব। Loneliness.

একাকিত্ব । Loneliness
  
আমার একাকিত্ব।

জোয়ার ভাটার জীবন। বিজ্ঞজনেরা তাই বলেন। শুধু সুখ বা দুঃখ দিয়ে জীবন তৈরি হয় না। কিন্তু জীবনে যখন অবিরাম ভাটা চলতে থাকে, একটার পর একটা বিপদ আসে, মানুষ দিশাহীন হয়ে যায়। সেই অবস্থাকে বলে দুঃসময়। মা মাসিরা বলে- শণির দশা।
#goutamaalee
          শণিরদশা তো ঢাকঢোল পিটিয়ে আসে না। সে অতি নগন‍্যের হাত ধরেই আসতে পারে।
          বেশ সময় কাটছিল। খাচ্ছিদাচ্ছি, বাজার করছি, ছবি তুলছি, পড়ছি, লিখছি। এর মধ্যেই অতি সামান্য বিষয় নিয়ে হেসে হেসে খটাখটি। কথার পিঠে কথা। জল একটু অন‍্যদিকে গড়াল। দুচার কথার পর যার যার মুখে কুলুপ। এটা আমাদের অনেক দিনের স্বভাব। আটদশ দিন নিন্মচাপ থাকবে। তারপর ধীরে ধীরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাব।
          কিন্তু এবার অন্য রকম হলো। যেটুকু কাজ ছিল সারাদিনে তারা ছুটি নিতে থাকলো। আর আমি ক্রমান্বয়ে একা হতে থাকলাম।
     এক - সারাদিন বকবক করি, পরিবারের           সদস্যদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা-ঝগড়া করি। সেটা বন্ধ হলো।
     দুই- মাঝে মাঝে হেড়েগলায় কবিতা বলি, গান করি। সেটা বন্ধ হলো।
     তিন - বাজারে যেতে হবে কিনা বুঝতে না পেরে বাজার যাওয়া বন্ধ হলো।
     চার - বই পড়তাম, সেটা বন্ধ হলো।
     পাঁচ - সবার সাথে টিভি দেখতাম, সেটা বন্ধ হলো।
     ছয় - সকালে দুইজন হাটতাম, সেটা বন্ধ হলো।
     সাত - শরীরচর্চা করতাম, বন্ধ হলো।
     আট - ছবি তুলতাম, এডিট করতাম, বন্ধ হলো।
     নয় - ফোনে বন্ধুদের খোঁজ নিতাম, বন্ধ হলো।
     দশ - খাই খাই কমে গেল।
          জীবনটা অচল হয় গেল। মন ভারি, সারাদিন এঘর ওঘর করছি। মনের মধ্যে শুধু আজেবাজে চিন্তা। নিজের উপর বিরক্তি তৈরি হলো। আরো বেশি আবেগময় হতে থাকলাম। নিজের দোষ খুজতে লাগলাম। তুল‍্যমূল‍্য বিচার করতে লাগলাম।
          রাতে ঘুম হলনা। প্রায় সারারাত জেগে কাটালাম। মনের অস্থিরতা বাড়ল।

মনের সাথে শরীরও অচল হতে থাকল।হাটাচলা ছন্দহীন। কেমন বোঝা মনে হল নিজেকেই। অবসাদ মনকে দ্রুত টানতে থাকে। সে যেন অন্ধকারের দূত। রাতের দিকে মনে হল, কী লাভ এ জীবন বয়ে বেড়ানোর ! মনের উপর এতটাই চেপে বসলো যে ভয় পেয়ে গেলাম। মৃত্যু ভয় । যদি হৃৎপিণ্ড বিকল হয়ে যায় ! যদি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় ! দুশ্চিন্তা থেকে এই দুটো রোগই বেশি হয়। অনেকগুলো বন্ধু ইতিমধ্যেই হঠাৎ করে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। আমার বড়দা এইভাবে মারা গেছেন। পাশের বাড়ির দাদা চলৎশক্তিহীন হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। আমার যদি তেমন হয়? আমি তো বোঝা হয়ে যাবো পরিবারের ! সেতো এক অনাদরের জীবন !
          ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।ঘুমাতে গেলেই ভাবনাগুলো মাথার মধ্যে কিলবিল করে। না ঘুমাতে পেরে টিভির সামনে বসেছি। রাত দুইটা, তিনটা, চারটা.. ঘুমাতে পারছি না। ঘুম আসছে না।
          এক দুঃসহ সময় আমাকে গ্রাস করেছে। প্রাণবন্ত, হ‍্যা প্রাণবন্তই তো ছিলাম।। সেই আমি কেমন নিস্তেজ হয়ে গেছি। একা হয়ে গেছি। নিজে কারো সাথে কথা বলিনা, আমার সাথে কেউ কথা বলে না।
          এই একাকিত্ব, নিদ্রাহীনতা আমাকে। আরো অস্থির করে তোলে। আশাহীন করে তোলে। ইতিমধ্যে আরেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাতের থেকে হঠাৎই বাহাতের পেশীতে তীব্র ব‍্যথা। যন্ত্রণায় বা হাত তুলতে পারিনা। পঙ্গুত্ব পেয়ে বসলো। পোষাক পরতে পারিনা। এক হাতে সব সামলাতে হয়। ওরা কি বুঝতে পারেনা ? ওরা বুঝবে কী করে , আমি তো কিছুই বলিনা। নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর দিই।
          হতাশা বাড়ে। অবসাদ আরো গ্রাস করে। মনে হয়, আমি তো বোঝা হয়ে গেলাম। কাদের জন্য বাঁচবো ? কী লাভ বেঁচে থেকে ? মা- বাবার ছবির সামনে যাই। বড়দার ছবির সামনে দাঁড়াই। ওঁরা কি আমাকে ডাকছে ? আমি কি ওঁদের কাছে চলে যাব ?
          কিন্তু এদের ফেলে কোথায় যাব ? মেয়েটা এখন পড়ছে। আমি চলে গেলে ওর পড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে ? সংসার কি অচল হয়ে যাবে ? ওদের বিপদের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যাব ? সে তো এক পরাজয়, হেরে যাওয়া ! মা-বাবা-দাদার ছবির সামনে থেকে সরে আসি। মনে মনে বলি -না, আমি তোমাদের কাছে যাবনা। আমি পালাবোনা।ওদের জন‍্যই আমায় বেঁচে থাকতে হবে।
          কিন্তু রাতে ঘুমাবো কি করে ? আজও যদি ঘুম না আসে ? চেনা ওষুধের দোকানে গেলাম। দুটো বড়ি দিল। শোয়ার আগে একটা খেতে হবে।
          রাতে শোয়ার আগে ওষুধ খেতে গিয়ে অন্য ভাবনা এলো। যদি ঘুমের মধ্যে এ্যটাক হয় ? ওষুধের প্রভাবে ওদের ডাকতে পারবো না। তাই ওষুধ খেলাম না। দরজা বন্ধ করলাম না। আমার তীব্র বাঁচতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ভয়ও ক‍রছে। এতো দুশ্চিন্তা যদি শরীর নিতে না পারে ?
          ঘরের আলো নিভিয়ে অভ‍্যস্ত বজ্রাসনে বসলাম। বুদ্ধের ধ‍্যানমগ্ন ছবি মনের মধ্যে এনে মনে মনে বলতে থাকলাম - আমাকে বাঁচতে হবে। পরিবারের জন্য। মেয়ের পড়ার জন্য। আমাকে সুস্থ থাকতেই হবে। মেয়ের বিএসসি, এমএসসি, পিএইচডি, চাকরি, স্বদেশ, বিদেশ ভ্রমণ.... কল্পনায় ভাসতে লাগলাম। অন্য ভাবনাকে দূরে সরাতে লাগলাম।
একসময় ঘুম এলো।

#lonelines, #writings, #goutamaalee

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১

বৃষ্টির জল হবো : কবিতার কথা।

বৃষ্টির জল হবো :কবিতার কথা।
আমাদের এই গ্রহ, পৃথিবী, প্রকৃতির সৃষ্টি। সেই পৃথিবীর সৃষ্টি প্রাণ। প্রাণের এক পরিণতি মানুষ। মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে পরিক্রমা করেছে পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে সেপ্রান্তে, যা পরিযায়ী পাখিরা এখনো করে। এ পৃথিবী সবার, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার সবার।

কিন্তু মানুষ নামক প্রাণীর হাত ধরে এলো সভ‍্যতা। মানুষ তার পরিযায়ী অবস্থান ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করলো। থিতু হতে থাকল তারা। গন্ডিবদ্ধ হতে থাকলো। সীমানা তৈরি করলো। প্রকৃতিজাত সন্তানেরা স্বাধীনতা হারাতে থাকলো দেশ নামক খোয়াড়ের কাছে। একদা পৃথিবীটাই একটা দেশ ছিল সবার জন্যে। সেই দেশটি আর থাকলনা, দৃশ্য অদৃশ্য প্রাচীর উঠতে লাগলো। বিভেদের প্রাচীর, কাঁটাতারের বেড়া।

সেই ক্ষমতালোভীদের হাত ধরে একদিন ভাগ হয়ে গেল আমার বাংলা। এক অদৃশ্য প্রাচীর গড়ে উঠল বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে। যা ওলটপালট করে দিল অসংখ্য জীবন। মানুষের চিরন্তন হাহাকার ভাসতে লাগল আকাশে বাতাসে। অথচ সব সীমানা উপেক্ষা করে একসাথে থাকার কি তীব্র বাসনা !

 একবার ,আন্দামানে একজন বয়স্ক মানুষের সাথে কথা বলছিলাম। বয়স আশি পেরিয়ে গেছে। বললেন, -" ষাট বছর পর লাঠিতে ভর দিয়ে গেলাম দেশে। আমার গ্রামে, আমার বাপ ঠাকুর্দার বসতবাড়ি। অনেক পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু আমাদের তৈরি ঘর এখনো আছে। সে ঘরে এখন অন‍্যেরা থাকে, সেঘরে ঢোকার অধিকার আমার নেই ! উঠানে সাষ্টাঙ্গে প্রনাম করলাম। ধূলো নিলাম মাথায়। এ ধূলো আমার জন্মস্থানের ধূলো। এ ধূলোর স্বাদ আর কোনদিন আমি পাবোনা......।"

আরেকবার , গেলাম  দন্ডকারণ‍্য। এক বৃদ্ধা দৃষ্টিশক্তি কমে আসা চোখে, টিনের ঘরের ফুটোদিয়ে আসা আলোর রেখার দিকে তাকিয়ে তাঁর ছেড়ে আসা জীবনের কথা বলছিল। কথা বলতে বলতে জল পড়ছিল দুচোখ থেকে। তাঁর একটা কথা, " ঐ যে আকাশ ওর অন‍্যপারে আমার দেশ। জীবনে আর কোন দিন সেদেশ আমি দেখতে পাবোনা।"
          হাহাকার, দেশ ছাড়ার, জন্মভূমি ছাড়ার। সারা পৃথিবী জুড়ে এমন হাহাকার ভেসে চলেছে।

আকাশে যখন মেঘ ভেসে যায়, মনে হয়, ঐ মেঘ-ভেলায় যদি আমি চড়তে পারতাম, সীমানা ডিঙিয়ে ঝরে পড়তাম জন্মভূমি মায়ের কোলে.....!

তেমনি কোন একদিনে যন্ত্রণায় কলম ঝরে উঠে এলো কথা....

সমুদ্র দূর্গম জানি
কাঁটাতারের বেড়া কি দূর্গম তারও চেয়ে,
তবে কেন কাঁটাতার ডিঙাতে পারিনা ?

তুই তো ওখানে আছিস্
গল্প করিস্ সাত সমুদ্র তের নদীর, 
তবু কাঁটাতারের সীমানা কেন শেষ হয়না ?
তুইতো ওখানে আছিস্
গোলাপের গন্ধ দুহাতে মাখিস্, 
সে গন্ধ আমি কেন ছুঁতে পারিনা ?
তুইতো ওখানে আছিস্
ফরাক্কার শুকনো জলে ভেজা কান্নায়
আল্লার দরবারে নালিশ,
কলমের কালি কেন জন্ম দেয় কাঁটাতারের ?

চৈত্রের শুষ্কতায় ফোটা ফোটা জল
সমুদ্র তো অনেক বড়, নোনাজল
এ বৃষ্টি সমুদ্রের ? মিঠে মিঠে
কাঁটাতারের বাধা কোথায় ?
আমি বৃষ্টির জল হব
মিশে যাব তোর ছায়ায়।

কলমের কালি জন্ম দেয় কাঁটাতারের
আমি বৃষ্টির জল হব
মিশে যাব তোমার মায়ায়।।
#writings, #goutamaalee, #lifestyleblog

Time Management

সময়ের ব‍্যবহার। Time Management.
(ছোটদের জন্য বড়দের কথা)।
#timemanagement

আজ আমার ছুটির দিন। ভুল বললাম। আমার এখন প্রতিদিনই ছুটির দিন। সকালে ঠান্ডা কফি খেয়ে নিলাম আয়েশ করে। তখনই অন্দরবানী অন্তরে ঘা দিল। ও পাড়ার খাটাল থেকে গোবরসার আনতে হবে। ছাদের বাগানের জন্য। ৪০ডিগ্রি তাপমাত্রা, বেলা বাড়লে আরও তাপমাত্রা বাড়বে। বাড়বে অন্দরমহলের তাপমাত্রাও। মোটেই ইচ্ছা করছে না। কিন্তু আজ হোক, কাল হোক আনতেই হবে। কাজ ফেলে রাখলে গরম বাড়তে থাকবে, অতএব গেলাম আর নিয়ে এলাম। এখন সব ঠাণ্ডা।

কোন কাজ ফেলে রাখা যাবে না। বা বলা যায়, সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।কাউকে যদি লক্ষ্যে পৌছাতে হয় তবে জীবনটাকে একটা নিয়মে বাধতে হবে।

তখন আমার নবম শ্রেণী। আমার সমপাঠী নীহার। শ্রেণীর সেরা ছাত্র। আমরা অজগ্রামে থাকি। নীহার বিকালে আমাদের বাড়ি এলো। ঘর থেকে মুড়ি দিলাম খেতে। খেতে খেতে ঘড়ি দেখে বলল, " আমার হাতে তিন মিনিট সময়।ছয়টা বাজলেই আমি চলে যাব। রুটিন অনুসারে অংক করতে হবে।" 
মুড়ি চিবোতে চিবোতে, কথা বলতে বলতে হঠাৎ কথা থামিয়ে দিল। উঠে দাঁড়াল। মুড়ির পাত্রটা দাওয়ায় রেখে বলল, "চললাম।"
আমি বললাম, আরে খাওয়া শেষ করো, একটুতো সময় লাগবে।
নীহার বলল, তিন মিনিট শেষ।
আর কথা না বলে হন হন করে চলে গেল।
নীহার কর্মজীবনে তার জায়গায় একজন সেরা ব‍্যক্তিত্ব।

সময় কারো জন্য দাঁড়ায় না।কেউ যদি ঠিক সময়ে সময়কে না ধরে, সে চলে যাবে। ক্ষতি তার, সময়ের নয়।

একবার দিল্লী থেকে ফিরছি। একা। এলাহাবাদ ষ্টেশনে ট্রেন দাড়ালে বইয়ের ষ্টলে গেলাম। বই দেখা আমার প্রিয় বিষয়। নানা ধরণের বইয়ের সম্ভার । একমনে দেখছিলাম। হঠাৎ মনে হল প্লাটফর্ম ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে দেখি আমার ট্রেন আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছে! তখন কলেজ বয়স। দৌড় শুরু করলাম। প্লাটফর্মের শেষ প্রান্তে এসে শেষ কামরার দরজার কাছে এলাম। একটা শক্ত হাত আমাকে ধরে তুলে নিল। একদম সিনেমার মত তবে সিনেমার কারসাজি এখানে ছিল না। সেটা ছিল মিলিটারি কামরা। একজন দেশসেবক আমায় রক্ষা করলেন। না হলে কিযে হতো কল্পনা করতেও শিউরে উঠি ! টাকা পয়সা টিকিট সবইতো ট্রেনে ছিল। আবার হিন্দি ভাষা একদম বলতে পারি না। যদি মিলিটারি থাবা আমাকে না তুলতো ?

সময়কে উপেক্ষা করলে এমন কিছুই ঘটে।

আরেকটা গল্প বলি।
আমাদের এক আত্মীয়ার কথা। মেয়েটি খুব সুন্দর দেখতে। খুব ভাল ছাত্রী। বাবা পঞ্চায়েত প্রশাসনের প্রভাবশালী মানুষ। দাদা উকিল। মেয়েটি শান্ত, সহজ সরল মনের মানুষ।  কিন্তু সেই সরল মনে আঁচড় কেটে দিল এক ছেলে।
মেয়েটি কলেজে পড়ে। নিজের গ্রাম থেকে কলেজ কয়েক মাইল দূরে। হেটেই যেতে আসতে হয়। ছেলেটি মাধ্যমিক দেয়নি। ছোটখাট, কালো এবং অত‍্যন্ত গরীব। কোথা দিয়ে কি হয়ে গেল, দুইজনে পালিয়ে চলে এলো ভারত। বিয়ে করলো। ব‍্যস্ , সময়ের গড়মিল হয়ে গেল। স্বনির্ভর উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ ছেড়ে এক চালচুলোহীন জীবন !
মেয়েটির এখন পড়ন্ত বয়স। লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। তার দাদারা তার মত কাজের মেয়েকে যখন তখন ছাটাই করে।

মেয়েটার সময়ের দাবী ছিল- পড়াশোনা করা, নিজের পায়ে দাড়ানোর উপযোগী করে তোলা। বেঠিক সিদ্ধান্ত তাকে ছিটকে দিল।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও ঘুরে দাড়ানো যায়। এবার তেমনি একটি গল্প বলব। আরেক মেয়ের গল্প।

এই বাংলায় তখন মস্তানরাজ চলছে। কার্টুন ছাপা হচ্ছে- ' পাড়ার মেয়ের অন্য পাড়ায় বিয়ে করা চলবে না। ' কলকাতা শহরতলীর এক ওয়াগন ব্রেকার অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তুলে নিল। ঘটনার সাথে মেয়ের ইচ্ছে জড়িয়ে ছিল। বছরের ব‍্যবধানে এক সন্তানের মা হল সে মেয়ে। তারপর সে ছেলেও একদিন নিরূদ্দেশ হয়ে গেল। মেয়ে সন্তানের হাত ধরে ফিরে এল মায়ের বাড়ি।

#struggle

এবার শুরু হল লড়াই। বাপের বাড়ির অন‍্যদের অনাদরে সে দমল না। লড়াই চলল নিজের সাথে। হারিয়ে যাওয়া সময় সে ফিরে পাবে না। কিন্তু প্রাপ্ত সময়কে কাজে লাগিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলো। ছেলেকে পড়াতে পড়াতে কলেজের চৌকাঠ পেরোলো সে মেয়ে। তারপর একটা ভাল চাকরি পেল। নিজের পায়ের মাটি শক্ত করে আবার ঘর বাধলো।

সময়ের অপব‍্যবহারে জীবনে ভুল হয়। আবার সেই ভুল শোধরাতে সময়কেই আকঁড়ে ধরতে হয়।
সব ফসল সব সময় হয়না। ফসল বোনার নির্দিষ্ট সময় থাকে। যারা চাষ করেন তারা জানেন কখন কোন ফসলের চাষ হবে। অসময়ে চাষ করলে সে ফসল ঘরে উঠবে না।

এবার নিজের গল্প বলি। #goutamaalee
কৈশোরবেলায় দেবতাভিরু ছিলাম। প্রায় না পড়ে পরের  ক্লাশে উঠতাম। মনের আনন্দে ড‍্যাং ড‍্যাং করে সময় কাটাতাম। ভাবতাম আমার তো বিদ‍্যাদেবী আছে, ঠিক পাশ করিয়ে দেবে।
          যখন মাধ‍্যমিক পরীক্ষা এলো, মনে মনে ঘাবড়ে গেলাম। যদিও তখন মতিগতি কিছুটা ফিরেছে। সময় ধরে পড়ছি, না বুঝেও পড়ছি। পাশ করার ব‍্যাপারে আস্থা আছে। কিন্তু ভয়ও আছে অংক আর ইংরেজী নিয়ে। দুটোতেই গোড়ায় গলদ। 
          আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে এক নতুন ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছে। তিনি নাকি একেবারে ধনন্তরী। দলে দলে গ্রামের মানুষ সেখানে যায়। একদিন বাড়ির কাউকে না বলে দুই বন্ধু মিলে চললাম সেই ঠাকুরের বাড়ি। একদম ছোকড়া ঠাকুর। আমাদের বয়সী। গোফ ওঠেনি তখনও।
          বয়স যা-ই হোক, ঠাকুর মানে ভগবানের কাছাকাছি। তাকে প্রণাম করে আমাদের আসবার কারণ বললাম। দাবী করলাম, এবার ভাল ভাবে পাশ করিয়ে দাও বাবা।
তিনি বললেন, 'লোকে আমার কাছে রোগ-ভোগের জন্যে আসে। তোমরা এলে পাশ করানোর জন্য। কিন্তু তোমাদের পাশ করানোর ক্ষমতা আমার নেই। তোমরা বরং বাড়ি যাও, আর কোন ঠাকুরের কাছে যেওনা। এইভাবে সময় নষ্ট না করে পড়াশোনা করো। নিজেরা না পড়লে কোন ঠাকুর তোমাদের পাশ করাবে না। সময়কে কাজে লাগাও।
          আমি এখন ঈশ্বর বিশ্বাস করিনা। কিন্তু সেই কমবয়সী ঠাকুরের কথা মেনে চলতে চেষ্টা করি। সময়ের কাজ সময়ে করতে সচেষ্ট হই। তার কাছে আমি ঋণী।

          রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা ভাবো। লোকে বলে যে, তিনি এতো লিখেছেন, কেউ যদি সারাজীবন ধরে পড়ে তবুও ত়াঁর সব লেখা শেষ করতে পারবে না। কথার মধ্যে অতিশোয়ক্তি আছে। কিন্তু সত্য এই, তিনি সময়ের সদ্ব্যবহার করেছেন। শত কাজের মধ্যে, স্বদেশ বিদেশ ভ্রমণের মধ্যে, বিশ্বভারতীর অভাব অনটনের মধ্যেও তিনি কলম থামাননি।

অনুপ্রেরণা অন্তরের অনুভূতি। অন্তরের অনুভূতি যখন প্রবল হয় তখন সব বাধা সরে যেতে থাকে। ভিতরের চাপ সাফল‍্যের পথ দেখায়। সাফল্য পেতে হলে  সময়ের সঠিক ব‍্যবহার অত্যন্ত জরুরী। 

#motivation, #inspiration, #timemanagement.





সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

ইচ্ছাশক্তি । Will power

ইচ্ছাশক্তি । Willpower.
একজন মানুষের কথা বলব। অতি সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু সাধারণের মধ্যে অসাধারণ। আমারা অনেক বড় বড় জানি, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর, ইত‍্যাদি।এইসব মানুষ কাজের নিরিখে পিরামিডের মাথায় বসে আছেন। ভিত্তি যদি শক্ত নাহয় তবে পিরামিড হয় কিকরে ? আমি সেই ভিত্তির কথা বলব।

আমি প্রমথ রঞ্জন বিশ্বাস নামক এক রূপকথার নায়কের কথা বলব। তাঁর ঠাকুর্দা টিপ দিয়ে দেনার দায়ে ভিটেছাড়া হয়েছিল। সে একশো বছরের ও আগের কথা। তাঁর বাবা তখন শিশু। ভিটেছাড়া হয়ে আশ্রয় জুটেছিল গাছতলায়। সেখান থেকে গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মানুষ থাকার জায়গা দিয়েছিল। লোকের বাড়ি পেটে ভাতে রাখালী করে শৈশব কৈশোর কেটেছে তাঁর বাবার।
#willpower #ইচ্ছাশক্তি

বড় হয়ে প্রতিজ্ঞা করেন তাঁর বাবা। "ছেলেকে লেখাপড়া শেখাবেন। তাঁর বা তাঁর বাবার মত নিরক্ষর রাখবেন না। সন্তানরা কেউ আর কখনো টিপ দেবে না।"
কিন্তু শতবর্ষ আগে সে ছিল এক অবাস্তব বিষয়। দরিদ্র এবং নিন্মবর্গীয় মানুষের কাছে লেখাপড়া ছিল অবাস্তব স্বপ্ন। তবুও সব বাধা অতিক্রম করে তিনি ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করালেন।

স্কুলে ভর্তি করালেন তাঁর বাবা। কিন্তু পড়া চালিয়ে যাওয়া বা শেষ করা বড় কঠিন। টাকার অভাবে বই কিনতে না পেরে অন‍্যের বই ধার করে পড়া। বাবার সাথে দিনমজুর হিসাবে কাজ - ভোরে মাঠে , দশটার সময় মাঠ থেকে সোজা স্কুল, ছুটির পর আবার জমিতে বাকি সময়টুকু কাজ করার জন্য। কেরোসিনের অভাবে রাতে পড়া হতো না। পদে পদে বাধা। বাধা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ভাবে ছিল না, সামাজিক ভাবেও ছিল।

শত বাধা সত্বেও তিনি পড়া ছাড়লেন না। যে বাবা  ছেলেকে পড়াবেনই বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আলোর নেশায় বুদ হয়ে তিনি পড়তে থাকলেন। মেধাকে কাজে লাগিয়ে অসাধ‍্য সাধন করতে থাকলেন। মাধ্যমিক, আই এ, বি এ ।

ফিরে এলেন নিজের স্কুলে। প্রথমে সহকারী শিক্ষক, পরে প্রধান শিক্ষক। তখন অতি দুঃসময় চলছিল স্কুলের। যথার্থ নাবিকের মত হাল  ধরেছেন। সমাজে শিক্ষার প্রয়োজন জানতেন বলেই রূপকথার রাজার মত রাতে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন, ছাত্র ছাত্রীদের মা বাবাকে উৎসাহিত করতেন, যারা পড়া পারতোনা তাদের পড়া দেখাতেন।

নিজে যেমন পড়েছেন তেমনি পরবর্তী ভাইবোনদের পড়িয়েছেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। একাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। অসংখ্য জনহিতকর কাজের অগ্রপথিক।
#অনুপ্রেরণা #inspiration

আজ তিনি বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর অগনিত ছাত্র ছাত্রী, ভাইবোন, সমাজের মানুষের কাছে তিনি প্রণম‍্য। সবার কাছে তিনি বিদ‍্যাসাগর, বিদ‍্যাদান করে মহান হয়েছেন।

কী ছিল তাঁর মূলধন ? #willpower
অদম‍্য ইচ্ছা। আর সেই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতনে আশ্রমিক বিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর ইচ্ছা হল এই বিদ‍্যালয়কে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করবেন। রবীন্দ্রনাথের প্রবল ইচ্ছাশক্তির পরিনতি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। অপরিসীম বাধা কীভাবে অতিক্রম করেছেন তা জীবনী পড়লে অনুধাবন করতে পারি।
#inspiration

ইচ্ছা যদি প্রবল হয় তবে কোন বাধাই আটকে রাখতে পারে না। প্রমথরঞ্জন বিশ্বাস-এর মত প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।

#willpower #inspiration #ইচ্ছাশক্তি #অনুপ্রেরণা ।

শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১

জেদ Insistence

জেদ
জেদ কি ভাল ?
সব ছোটদেরই শুনতে হয়, অত জেদ ভাল নয়। একবার রাত তিনটের সময় আমার ভাইঝি হঠাৎ ঘুম ভেঙে দাবী করল তাকে চকলেট দিতে হবে। ঐরাতে চকলেট কোথায় পাবে। কিন্তু তার অবিরাম চিৎকার এবং কান্না, তার চকলেট চাই -ই চাই। #insistence

ইতিহাসের হিটলার জেদ ধরল- ইহুদী শুন‍্য জার্মানি চাই। সেই সঙ্গে পৃথিবীর অধীশ্বর হওয়ার জেদও প্রবল হল। মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ‍্যায়। শেষ পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধ। আর জেদের সমাপ্তি তার মৃত্যুতে।

তবে জেদের কি ভাল দিক নেই ? ভারতীয় পূরানে জেদের ছড়াছড়ি। রামায়নের শম্ভুক শিক্ষার জন্য জেদ ধরেছিল, মহাভারতের একলব‍্য অস্ত্রবিদ‍্যা শেখার জন্য জেদ ধরেছিল। দুনিয়া কাঁপানো দশদিনের মহানায়ক মাও সে তুঙের জেদ ছিল চিনের মুক্তির জন্য, সুভাষচন্দ্র বসুর জেদ ছিল ভারতের স্বাধীনতার জন্য।

জেদ না থাকলে ভাল কিছু, নতুন কিছু হয়না। জেদ ছিল বলেই বিধবা বিবাহ আইন সম্ভব করতে পেরেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর, রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা রদ করতে পেরেছিলেন। জেদের জন‍্যেই আমরা রানী রাসমণিকে পেয়েছি।

জেদের সুফল যেমন আছে, কুফলও আছে। দেশভাগ- সেওতো কিছু মানুষের জেদের ফসল, যা এখনো অশ্রু ঝরায়, রক্ত ঝরায়।

আমার জীবন যতই ক্ষুদ্র হোক, জেদের একটা ভূমিকা আছে। জীবনের নানা স্তরে জেদ উত্তরণ ঘটিয়েছে।
স্কুলে ভাল ছাত্র হিসাবে পরিচিত ছিলাম না।ক্লাশে কম-বেশি পঞ্চাশ জনের মত ছাত্র-ছাত্রী থাকত। আমার ক্রমিক নম্বর ছিল পঞ্চাশের কাছাকাছি। ক্লাশ সিক্স পর্যন্ত দুটো বিষয়ে আমি কখনোই পাশ করতে পারতাম না। অংক আর ইংরেজী। 
স্বাধীনতা দিবসে (দিন নয় দিবস হিসাবে চর্চিত ) স্কুলে দিনভর অনুষ্ঠান হত। নানা প্রতিযোগিতা হত।আবৃত্তি, গান, বক্তৃতা, খেলা ইত্যাদি। তেমনি একদিন। বক্তৃতার বিষয় আগে থেকে ঠিক ছিল।বিষয় - স্বাধীনতা। গ্রামের এক দাদা একটা পাঁচ মিনিটের ভাষন লিখে দিলেন। কয়েকদিন ধরে ঠোঠস্থ করলাম আর নির্দিষ্ট দিনে ঝেড়ে দিলাম।হলঘর হাততালীতে ভরে গেল। বেশ গর্ব হল , আমিও পারি !
কিন্তু আরও অবাক হলাম ফলাফল দেখে । আমি প্রথম ! ফার্স্ট প্রাইজ আমার ! সবচেয়ে বড়কথা - কাদের হারালাম ? দুটো ক্লাশের দুইজন ফার্স্টবয়কে। আমাদের ক্লাশের আর নিচের ক্লাশের দুইজন সবচেয়ে ভাল ছাত্রকে, যারা কখনো দ্বিতীয় হয়না। তাদের হারিয়ে প্রথম ! #persistence

নিজের মধ্যে এক আত্মবিশ্বাস জন্ম নিল, আমিও পারি। হ‍্যা আমি, ফেল করে যে প্রতিবছর ক্লাশে ওঠে, সেই আমিই কখনো কখনো অন‍্যদের ছাপিয়ে যেতে পারি !

এর কিছু পরের ঘটনা। আমাদের স্কুলের পাশে একটা বিল, সারা বছর জল থাকে। সেই বিলে স্নান করতে কয়েকজন বন্ধু গেলাম। আমাদের ফার্স্ট বয় ( মনিলাল বিশ্বাস, সম্প্রতি করোনা তাকে গ্রাস করেছে। কৃতজ্ঞচিত্তে তাকে স্মরণ করি।) একটা প্রতিযোগিতার কথা বলল। কে বেশিক্ষণ জলে ডুবে থাকতে পারে। পুরষ্কার নেই, কিন্তু মর্যাদা আছে। আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, আজও ওকে আমি হারাবোই। যদিও জানতাম ওকে হারানো খুব কঠিন। চৌকশ ছেলে। খেলা, পড়া, বদমাহিশী - সবকিছুতে ও সেরা, যাকে বলে অলরাউন্ডার। #insistence

বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। একজন বাদে সবাই ডুব দিলাম। মাটি আকড়ে পড়ে রইলাম। কান সজাগ, কয়জন জলের উপর ওঠে সেই শব্দ শোনার জন্য। অনেকক্ষন নীরব। তারপর এক এক করে জল ভাঙ্গার শব্দ। এক... দুই... তিন...
ফুসফুসের অক্সিজেন কমে আসছে, আর টিকে থাকা যাচ্ছে না জলের তলায়। শরীর বিদ্রোহ করছে। কিন্তু একটা শব্দ এখনো বাকি। প্রতিটি মুহূর্ত বেশ লম্বা মনে হচ্ছে।... অবশেষে শেষ শব্দটি পেলাম। আরো একটু সময় দাঁত কামড়ে থেকে আস্তে আস্তে জলের উপর ভেসে উঠলাম। ভাবখানা এমন, এসব আমার কাছে জলভাত !

সেদিন আমাকে বিজয়ী মনে হয়েছিল। ক্লাশের এক নম্বর আর পঞ্চাশ নম্বরের ফারাক মুছে গিয়েছিল। আবার মনে হল, আমিও পারি, অসম্ভবকে সম্ভব করতে আমিও পারি।

আরেকটি ঘটনা। আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
অষ্টম শ্রেণী। তখন অংকের রক্তচক্ষুর ভয় আর পাইনা। বীজগণিত আর জ‍্যামিতিকে কব্জা করে ফেলেছি। কিন্তু ইংরেজী মাষ্টারমশাইয়ের রক্তচক্ষু আর জোড়াবেত এড়াতে পারছি না। তেমনি এক ইংরেজী ক্লাশে শিক্ষকমশায় (শ্রদ্ধেয় রামকৃষ্ণ কর্মকার ) জিজ্ঞেস করলেন, পারলাম না। একপা বাড়িয়েই ছিলাম, বাকি পা তুলে হাইবেন্চের উপর দাড়ালাম। আরো কয়েকজন দাড়ালো। প্রতিক্ষা করছি জোড়াবেতের মারের জন্য।

কিন্তু প্রত‍্যাশিত ঘটনা সেদিন ঘটলো না। স‍্যর মাঝপথে আমাকে বসিয়ে দিলেন। অন‍্যরা দাড়িয়ে রইল। আমি অবাক হলাম।

স‍্যর হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন। কিছু সময় চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলেন। তারপর ধরা গলায় বললেন,  "আমার লজ্জা করে তোকে পড়া না পারার জন‍্যে বেঞ্চের উপর দাঁড় করাতে। আমার লজ্জা করে এটা ভাবতে যে তুই আমার স‍্যরের ভাই।"
তারপর স‍্যর ক্লাশ ছেড়ে চলে গেলেন।

হঠাৎ আমি একটা ধাক্কা খেলাম। যে ধাক্কা হাই বেঞ্চ বা ডবল বেতের মার দিতে পারেনি। সেই ধাক্কা পেলাম আমার দাদার ছাত্রের অভিমান থেকে। আমি কি তবে  দাদার কুলাঙ্গার ভাই ! কিছুই পারিনা ! আমার বড়দা এই স্কুল থেকে বৃত্তি পেয়ে পড়েছেন । এই স্কুলের মেধাবী, সৎ ছাত্র একদা এই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক ছিলেন ! আমার জন‍্যে সেই দাদার ছাত্র, আমার শিক্ষক মহাশয়, লজ্জা পান ?

আমার জীবনের সেই এক বাঁক। একটা পরিবর্তন এলো নিজের মধ্যে। একটা জেদ চাপল নিজের মধ্যে। আমার জন্যে আমার দাদাকে, স‍্যরকে আর লজ্জা পেতে দেবনা। যদিও গোড়ায় গলদ, তবুও চেষ্টা করতে লাগলাম। অষ্টম শ্রেণীতে আমার ক্রমিক নম্বর ছিল বিয়াল্লিশ, নবম শ্রেণীতে হল সতের। মাধ্যমিক যখন পাশ করলাম, নম্বরের ভিত্তিতে আমার ক্রমিক নম্বর তিন। জেদকে চাগিয়ে দেবার জন্য আমি শিক্ষক মহাশয় এবং দাদার কাছে আমরন ঋণী।

জীবন যুদ্ধে নানা কারণে হতাশা আসে। হতাশায় ভেঙে না পড়ে পথ খুঁজতে হয়, হতাশা কাটিয়ে উঠতে হয়। আমার মত ফেল করা ছাত্র যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারে আপনি কেন পারবেন না ? পারবেন। বিকল্প পথ খুঁজুন। হতাশাকে জেদে পরিনত করুন। সাফল্য আসবেই। নিজের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে - আমি পারবো, পারবোই।

মনে রাখতে হবে : জীবনটা এক যুদ্ধক্ষেত্র, সে যুদ্ধে লড়তেই হবে।
#goutamaalee, #motivation, উৎসাহ, #insistence

বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১

একটি কবিতার জন্ম।

একটি কবিতার জন্ম। #poem
আজ একটা কবিতা লিখবো। মানে কবিতার মতো কিছু। বৈশাখ মাস। বাংলা বছরের প্রথম মাস। কথায় আছে- সকাল দেখলে দিনের আভাস পাওয়া যায়। তাই সকালের হাতে খড়ি সেরে ফেলবো আজ। তাতে সারাবছর যদি লিখতে পারি।

কিন্ত কি লিখি, কিছুই বুঝতে পারছি না। সেই ছোট্টবেলার মত। অভ্যাস নেই অনেকদিন। আবার বানিয়ে মানে কল্পনা করেও লিখতে পারিনা। একটা চিত্রভাস দরকার। #writings

ঐতো দূরে কোকিল ডাকছে।.....তাহলে কোকিলই হোক কবিতার বিষয়।
          "কোকিল ডাকে কুহু... কুহু..."
নাহ্...হবেনা।

কী গরম রে বাবা ! চেয়ার টেবিল সব যেন আগুন হয়ে আছে ! তাহলে....
          " বাইরে গরম , কাকেরা খুঁজছে আরাম
            গাছের পাতায়
             আমি জ্বলন্ত উনুনে বসে আছি..."

আর এগোতে পারছি না। এখন গরম। বরং উল্টো দিকে চলে যাই। 
শীতের সকাল। একদিন ভোরের ট্রেনে গ্রামের দিকে যাচ্ছিলাম। যাত্রী কম। প্রায় সবাই বসে। দু চার জন দরজার কাছে। একটা বড় ঝুড়িতে একটা লোক ও এক মহিলা কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। এরা রাতজাগা মানুষ। কোন গ্রাম থেকে সবজি নিয়ে শহরে বেচে হয়তো ফিরছে।

চাদরে মুড়ে এক ভবঘুরে পা তুলে সীটের উপর বসে। জানালার কাছে দুটো বাচ্চাসহ দুই ভদ্রজন। হয়তো প্রবাস থেকে বাড়ি ফিরছে। আরেক জানালায় একটা মেয়ে বা বউ, হাতে ছোট্ট মানিব্যাগ, আধঘুমে।পাশে আরেকজন, বারবার মেয়ে বা বউটার গায়ে ঢুলে পড়ছে। অন্য সীটে দুটো লোক পাশাপাশি, চোখ বোজা।

এমনি খন্ডচিত্র।

এবার আমি এদের মধ্যে ডুব দেবো, দেখি কিছু খুঁজে পাই কিনা। কয়েকটা মিনিট সময় দেবেন ?
------------------------------- 
একটা কিছু খাড়া করেছি। একটু পড়ি....

ট্রেনে যাচ্ছি।
দুইজন মানুষ পাশাপাশি বসে,
দুইজনের বাদর টুপি,
দুইজনের গলায় মাফলার।

এটা শীতকাল।

দুইজনের গায়ে সোয়েটার,
দুইজনের মুখে দাড়ি, কাচা পাকা
ব‍্যতিক্রম দাড়ির গঠন।
দাড়ি বলে দেয় ওদের ধর্ম আলাদা।

দুইজনের ভাবলেশহীন মুখ, নিষ্পাপ
পাশাপাশি বসে আছে।

আজ ওরা পাশাপাশি বসে আছে
কোন কোন গতকাল ওরা এমন ছিলনা
কোন কোন আগামীকাল ওরা এমন থাকবেনা
দুইজনের মাঝে কাটাতার দেবার জন‍্যে 
কিছু মানুষ আছে,
ধর্মান্ধ মানুষ।
তারা শান দেয় বিভেদের ছুরিতে
শান দেয় অতলান্ত সময়,
সুযোগ খোঁজে অহরহ।

দুইজন মানুষ নিরীহ এখন, পাশাপাশি।।

** এটাকে কি কবিতা বলা যায় ? আপনার কী মনেহয় ? কী নাম দেয়া যায় ? মন্তব্য করলে ভাল লাগবে। #goutamaalee











হে মহাজীবন

মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...