বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১

Time Management

সময়ের ব‍্যবহার। Time Management.
(ছোটদের জন্য বড়দের কথা)।
#timemanagement

আজ আমার ছুটির দিন। ভুল বললাম। আমার এখন প্রতিদিনই ছুটির দিন। সকালে ঠান্ডা কফি খেয়ে নিলাম আয়েশ করে। তখনই অন্দরবানী অন্তরে ঘা দিল। ও পাড়ার খাটাল থেকে গোবরসার আনতে হবে। ছাদের বাগানের জন্য। ৪০ডিগ্রি তাপমাত্রা, বেলা বাড়লে আরও তাপমাত্রা বাড়বে। বাড়বে অন্দরমহলের তাপমাত্রাও। মোটেই ইচ্ছা করছে না। কিন্তু আজ হোক, কাল হোক আনতেই হবে। কাজ ফেলে রাখলে গরম বাড়তে থাকবে, অতএব গেলাম আর নিয়ে এলাম। এখন সব ঠাণ্ডা।

কোন কাজ ফেলে রাখা যাবে না। বা বলা যায়, সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে।কাউকে যদি লক্ষ্যে পৌছাতে হয় তবে জীবনটাকে একটা নিয়মে বাধতে হবে।

তখন আমার নবম শ্রেণী। আমার সমপাঠী নীহার। শ্রেণীর সেরা ছাত্র। আমরা অজগ্রামে থাকি। নীহার বিকালে আমাদের বাড়ি এলো। ঘর থেকে মুড়ি দিলাম খেতে। খেতে খেতে ঘড়ি দেখে বলল, " আমার হাতে তিন মিনিট সময়।ছয়টা বাজলেই আমি চলে যাব। রুটিন অনুসারে অংক করতে হবে।" 
মুড়ি চিবোতে চিবোতে, কথা বলতে বলতে হঠাৎ কথা থামিয়ে দিল। উঠে দাঁড়াল। মুড়ির পাত্রটা দাওয়ায় রেখে বলল, "চললাম।"
আমি বললাম, আরে খাওয়া শেষ করো, একটুতো সময় লাগবে।
নীহার বলল, তিন মিনিট শেষ।
আর কথা না বলে হন হন করে চলে গেল।
নীহার কর্মজীবনে তার জায়গায় একজন সেরা ব‍্যক্তিত্ব।

সময় কারো জন্য দাঁড়ায় না।কেউ যদি ঠিক সময়ে সময়কে না ধরে, সে চলে যাবে। ক্ষতি তার, সময়ের নয়।

একবার দিল্লী থেকে ফিরছি। একা। এলাহাবাদ ষ্টেশনে ট্রেন দাড়ালে বইয়ের ষ্টলে গেলাম। বই দেখা আমার প্রিয় বিষয়। নানা ধরণের বইয়ের সম্ভার । একমনে দেখছিলাম। হঠাৎ মনে হল প্লাটফর্ম ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তাকিয়ে দেখি আমার ট্রেন আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছে! তখন কলেজ বয়স। দৌড় শুরু করলাম। প্লাটফর্মের শেষ প্রান্তে এসে শেষ কামরার দরজার কাছে এলাম। একটা শক্ত হাত আমাকে ধরে তুলে নিল। একদম সিনেমার মত তবে সিনেমার কারসাজি এখানে ছিল না। সেটা ছিল মিলিটারি কামরা। একজন দেশসেবক আমায় রক্ষা করলেন। না হলে কিযে হতো কল্পনা করতেও শিউরে উঠি ! টাকা পয়সা টিকিট সবইতো ট্রেনে ছিল। আবার হিন্দি ভাষা একদম বলতে পারি না। যদি মিলিটারি থাবা আমাকে না তুলতো ?

সময়কে উপেক্ষা করলে এমন কিছুই ঘটে।

আরেকটা গল্প বলি।
আমাদের এক আত্মীয়ার কথা। মেয়েটি খুব সুন্দর দেখতে। খুব ভাল ছাত্রী। বাবা পঞ্চায়েত প্রশাসনের প্রভাবশালী মানুষ। দাদা উকিল। মেয়েটি শান্ত, সহজ সরল মনের মানুষ।  কিন্তু সেই সরল মনে আঁচড় কেটে দিল এক ছেলে।
মেয়েটি কলেজে পড়ে। নিজের গ্রাম থেকে কলেজ কয়েক মাইল দূরে। হেটেই যেতে আসতে হয়। ছেলেটি মাধ্যমিক দেয়নি। ছোটখাট, কালো এবং অত‍্যন্ত গরীব। কোথা দিয়ে কি হয়ে গেল, দুইজনে পালিয়ে চলে এলো ভারত। বিয়ে করলো। ব‍্যস্ , সময়ের গড়মিল হয়ে গেল। স্বনির্ভর উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ ছেড়ে এক চালচুলোহীন জীবন !
মেয়েটির এখন পড়ন্ত বয়স। লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। তার দাদারা তার মত কাজের মেয়েকে যখন তখন ছাটাই করে।

মেয়েটার সময়ের দাবী ছিল- পড়াশোনা করা, নিজের পায়ে দাড়ানোর উপযোগী করে তোলা। বেঠিক সিদ্ধান্ত তাকে ছিটকে দিল।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও ঘুরে দাড়ানো যায়। এবার তেমনি একটি গল্প বলব। আরেক মেয়ের গল্প।

এই বাংলায় তখন মস্তানরাজ চলছে। কার্টুন ছাপা হচ্ছে- ' পাড়ার মেয়ের অন্য পাড়ায় বিয়ে করা চলবে না। ' কলকাতা শহরতলীর এক ওয়াগন ব্রেকার অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তুলে নিল। ঘটনার সাথে মেয়ের ইচ্ছে জড়িয়ে ছিল। বছরের ব‍্যবধানে এক সন্তানের মা হল সে মেয়ে। তারপর সে ছেলেও একদিন নিরূদ্দেশ হয়ে গেল। মেয়ে সন্তানের হাত ধরে ফিরে এল মায়ের বাড়ি।

#struggle

এবার শুরু হল লড়াই। বাপের বাড়ির অন‍্যদের অনাদরে সে দমল না। লড়াই চলল নিজের সাথে। হারিয়ে যাওয়া সময় সে ফিরে পাবে না। কিন্তু প্রাপ্ত সময়কে কাজে লাগিয়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হলো। ছেলেকে পড়াতে পড়াতে কলেজের চৌকাঠ পেরোলো সে মেয়ে। তারপর একটা ভাল চাকরি পেল। নিজের পায়ের মাটি শক্ত করে আবার ঘর বাধলো।

সময়ের অপব‍্যবহারে জীবনে ভুল হয়। আবার সেই ভুল শোধরাতে সময়কেই আকঁড়ে ধরতে হয়।
সব ফসল সব সময় হয়না। ফসল বোনার নির্দিষ্ট সময় থাকে। যারা চাষ করেন তারা জানেন কখন কোন ফসলের চাষ হবে। অসময়ে চাষ করলে সে ফসল ঘরে উঠবে না।

এবার নিজের গল্প বলি। #goutamaalee
কৈশোরবেলায় দেবতাভিরু ছিলাম। প্রায় না পড়ে পরের  ক্লাশে উঠতাম। মনের আনন্দে ড‍্যাং ড‍্যাং করে সময় কাটাতাম। ভাবতাম আমার তো বিদ‍্যাদেবী আছে, ঠিক পাশ করিয়ে দেবে।
          যখন মাধ‍্যমিক পরীক্ষা এলো, মনে মনে ঘাবড়ে গেলাম। যদিও তখন মতিগতি কিছুটা ফিরেছে। সময় ধরে পড়ছি, না বুঝেও পড়ছি। পাশ করার ব‍্যাপারে আস্থা আছে। কিন্তু ভয়ও আছে অংক আর ইংরেজী নিয়ে। দুটোতেই গোড়ায় গলদ। 
          আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে এক নতুন ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছে। তিনি নাকি একেবারে ধনন্তরী। দলে দলে গ্রামের মানুষ সেখানে যায়। একদিন বাড়ির কাউকে না বলে দুই বন্ধু মিলে চললাম সেই ঠাকুরের বাড়ি। একদম ছোকড়া ঠাকুর। আমাদের বয়সী। গোফ ওঠেনি তখনও।
          বয়স যা-ই হোক, ঠাকুর মানে ভগবানের কাছাকাছি। তাকে প্রণাম করে আমাদের আসবার কারণ বললাম। দাবী করলাম, এবার ভাল ভাবে পাশ করিয়ে দাও বাবা।
তিনি বললেন, 'লোকে আমার কাছে রোগ-ভোগের জন্যে আসে। তোমরা এলে পাশ করানোর জন্য। কিন্তু তোমাদের পাশ করানোর ক্ষমতা আমার নেই। তোমরা বরং বাড়ি যাও, আর কোন ঠাকুরের কাছে যেওনা। এইভাবে সময় নষ্ট না করে পড়াশোনা করো। নিজেরা না পড়লে কোন ঠাকুর তোমাদের পাশ করাবে না। সময়কে কাজে লাগাও।
          আমি এখন ঈশ্বর বিশ্বাস করিনা। কিন্তু সেই কমবয়সী ঠাকুরের কথা মেনে চলতে চেষ্টা করি। সময়ের কাজ সময়ে করতে সচেষ্ট হই। তার কাছে আমি ঋণী।

          রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা ভাবো। লোকে বলে যে, তিনি এতো লিখেছেন, কেউ যদি সারাজীবন ধরে পড়ে তবুও ত়াঁর সব লেখা শেষ করতে পারবে না। কথার মধ্যে অতিশোয়ক্তি আছে। কিন্তু সত্য এই, তিনি সময়ের সদ্ব্যবহার করেছেন। শত কাজের মধ্যে, স্বদেশ বিদেশ ভ্রমণের মধ্যে, বিশ্বভারতীর অভাব অনটনের মধ্যেও তিনি কলম থামাননি।

অনুপ্রেরণা অন্তরের অনুভূতি। অন্তরের অনুভূতি যখন প্রবল হয় তখন সব বাধা সরে যেতে থাকে। ভিতরের চাপ সাফল‍্যের পথ দেখায়। সাফল্য পেতে হলে  সময়ের সঠিক ব‍্যবহার অত্যন্ত জরুরী। 

#motivation, #inspiration, #timemanagement.





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

হে মহাজীবন

মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...