'তীরন্দাজ'হবেন ?
কর্মক্ষেত্রে সফলতা : শংকরের পরামর্শ
কয়েক দশক ধরে কলকাতার বইবাজারে 'বেস্ট সেলার' তালিকায় একজন লেখকের নাম জ্বলজ্বল করেছে। তিনি শংকর, পুরো নাম মণিশংকর মুখোপাধ্যায়। কী এমন ছিল তাঁর লেখায় ? কেন পাঠকেরা দশকের পর দশক তাঁর বই কিনে চলেছেন ?
আমি ভাল পাঠক নই, তবুও শংকরের কয়েকটি বই কিনলাম। সাহিত্যের মূল্য কোথায়, কেন, কতটা তা আমি জানিনা। কিন্তু দেখলাম প্রচুর মণি-মানিক্য ছড়িয়ে আছে গল্প উপন্যাস জুড়ে। একটা ছোট নোটবুকে লিখলাম, যা আমার কাধের ব্যাগে স্থায়ী আসন নিয়েছিল। সময় পেলে, মন খারাপ হলে, সমস্যায় পড়লে নোটবই দেখতাম। আমায় সাহস যোগাত, উৎসাহ পেতাম।
আমি কেউকেটার ধারে কাছের কেউ নই। আমার ছোটজীবনের ছোট কথাই বলছি।হঠাৎ একটা নোটবই পেলাম হাতের কাছে। দেখা যাক কী আছে নোটবইয়ে।
লক্ষ্যে পৌঁছাতে , বিশেষকরে ব্যবসায়িক লক্ষ্যে পৌঁছাতে শংকর-এর উক্তিগুলি সঞ্জীবনী সুধার ন্যায় উজ্জিবক।
আজকের লেখাগুলি শংকরের 'তীরন্দাজ' উপন্যাস থেকে নেয়া। সপ্তচত্বারিংশ সংস্করণ, বৈশাখ-১৪০০ ।
### পাতা- ৯
"প্রত্যেক মানুষের বুকের মধ্যে একজন তীরন্দাজ আছে - যে তাকে সুযোগ সুবিধে দেবে সে এগিয়ে যাবে, যে দেবেনা সে তার ফল ভোগ করবে।"-- জোনাথন হার্ভার্ড।
### পাতা-১৫
অগোছালো মানুষের পক্ষে মানসিক পরিচ্ছন্ন হওয়া সম্ভব নয়। যতই প্রশ্রয় দেয়া যায় ততই এই অগোছালো স্বভাব পাঁকের মত মানুষের ডুবে যাবার পথ সুগম করে দেয়।
### পাতা-১৫
কোথাও কখনো জড়িয়ে পড়বে না।অফিসে যে যত জড়িয়ে পড়ে সে তত বেশি কষ্ট পায়।
### পাতা-১৬
পিছনে যত আঠা কম থাকবে এক সিট থেকে উঠে আরেক সিটে সরতে তত কম কষ্ট হবে।
### পাতা- ১৬
কার্ড ইনডেক্স মেমোরি ডেভেলপ করতে হবে, যাতে যে মুহূর্তে যা প্রয়োজন তা স্মরণ করতে পারেন। কেউ যেন সাময়িক বিস্মৃতির সুযোগ নিতে না পারে।
### পাতা-১৬
নির্দেশ দিলে অমান্য করে না কিন্তু নির্দেশ না পেলেও কিছু করেনা -- হাওয়া বুঝে ব্যবস্থা নেবার দূরদৃষ্টি নেই।
### পাতা- ১৯
চিঠির উত্তর দিতে যে ম্যানেজার যত দেরী করে তার অবনতি তত আসন্ন।
### পাতা- ১৯
অন্যলোক যখন ষোল আনা করবে তখন আঠারো করতে হবে আমাদের ; প্রতিযোগিতার বাজারে বেঁচে থাকার এইটাই সহজ উপায়।
### পাতা- ২০
..........পার্সোনাল ফাইল দেখতে হবেই।
### পাতা -২০
অফিসের স্বার্থেই.....। শারীরিক ফিটনেস ছাড়া এখানে লড়াইয়ে টিকবো কী করে ?
### পাতা- ২৩
কর্মক্ষেত্রকে আনন্দের ক্ষেত্র করে রাখা প্রয়োজন।
### পাতা- ২৬
অনেকক্ষন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে থাকলে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কিছুক্ষণ চোখ বুজে নিজের চেয়ারে বসে থাকো। কল্পনা করো, সীমাহীন অন্ধকারের মধ্যে তুমি ডুবে রয়েছো, কেউ তোমাকে দেখতে পারছে না এবং নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি তুমি সুনীল জলস্রোতে ভাসিয়ে দিচ্ছো, তোমার ওজন ক্রমশ কমে যাচ্ছে। ৫/৭ মিনিটে ম্যাজিকের মত ফল দেবে, তোমার ধৈর্য ফিরে পাবে।
### পাতা- ২৬
"লড়াই ইজ লড়াই।"
### পাতা - ৪৬
প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে মাথা ঠান্ডা রাখা ...... ইন্টারনাল ফিলজফি।
### পাতা ৪৭
মুখে কিছু না বললেও অভিজ্ঞ ম্যানেজাররা যা গোপনে শিক্ষা করে থাকেন তার নাম - বডি ল্যাংগুয়েজ।
### পাতা - ৫৭
ভয় পেলেও প্রকাশ করবে না। দেহের ল্যাংগুয়েজকে আয়ত্তে রাখতে হবে যাতে কোথাও ভয়ের প্রকাশ না থাকে।
### পাতা ৪৮
যারা প্রতি পদে পদে নির্দেশ প্রত্যাশা করে, ..... আধুনিক ইন্ডিয়ান বিজনেসের জগৎ তাদের জন্য নয়।
### পাতা - ৫০
প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে পরীক্ষা চলছে, ...সামনের পরীক্ষায় কি প্রশ্ন আসছে তা আগাম না জানলে বিজনেস চালানো যায় না -- ভদ্রভাষায় এর নাম 'ফোরকস্টিং'।
### পাতা ৫০
বিনয়াবনত মানসিকতার কোন মূল্য নেই এখানে।
### পাতা ৫১
বিজনেসের এই দুনিয়ায়, না চাইলে কেউ তোমাকে কিছু দেবে না।
### পাতা ৫৫
....অফিসে দীর্ঘদিন ধরে ভুল ধারণা রয়েছে, সময় অঢেল; কিন্তু... প্রতিটি কর্মীর সময় অনেক টাকায় কিনতে হয়।
### পাতা ৫৬
যে কোনো সমস্যা উঠলেই তা উপরের কর্তার কাছে ঠেলে দিয়ে পরমানন্দে হাত গুটিয়ে বসে থাকবার নাম ম্যানেজমেন্ট নয়।
### পাতা -৫৭
আমরা কেউ অপ্রিয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চাই না।
### পাতা ৫৭
অকারণে শত সহস্র নোট... কাগজ বাচাঁন, উৎপাদন বাড়ান।
### পাতা ৫৭
যাদের আত্মসম্মান জ্ঞান প্রখর কর্মক্ষেত্রে তাদের জন্যে দুঃখ তোলা থাকে।
### পাতা ৫৮
তর্কে হার ভাল, মামলায় জিত ভাল।
### পাতা ৬৫
গ্রাম্য মেয়েদের যেমন পতিনিন্দে তোমাদের তেমনি অফিস নিন্দে--যতই ভাল হোক কর্মচারীদের মুখ কিছুতেই বন্ধ হবে না।
### পাতা-৬৬
মাইনে যাইহোক, কাজের যে দায়িত্ব যে নিয়েছে তাকে তা পালন করতেই হবে।
### পাতা-৬৭
খরিদ্দারই রাজা - কাস্টমার ইজ দি কিং।
### পাতা-৬৮
অফিস বা কারখানাটা মানুষকে ভালবাসার জায়গা নয়। মানুষকে কাজে লাগিয়ে তোমার লক্ষ্যস্থলে পৌঁছনোই কাজ - কর্মকুরুক্ষেত্রে মানুষ সম্বন্ধে সত্যিকারের ভালবাসা থাকলে নিজেরও বিপদ, প্রতিষ্ঠানেরও বিপদ।
### পাতা- ৬৮
এখন মানুষকে বিচার করা হয় তার পরিশ্রম কতখানি ফল দিলো তা মেপে দেখে।
### পাতা- ৭১
বারেবারে পরিস্থিতি বদলায় এবং বারেবারে অগ্নিপরীক্ষা দেবার জন্য পদস্থ কর্মীদের সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।
### পাতা- ৭১
প্রত্যেক অফিসারই টোয়েন্টিফোর আওয়ার সারভেন্ট।
### পাতা-৭২
মানুষ এখন বর্তমানকে নিয়েই ব্যস্ত। নগদ সুবিধে দিতে না পারলে কেউ তোমাকে পয়সা দেবেনা।
### পাতা-৭৫
অফিসে কারও সঙ্গে কাজ ছাড়া অন্য কোন বন্ধনে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়।
### পাতা-৮৩
ঝুঁকি না নিলে মানুষ কখনো এগিয়ে যায় না।
### পাতা-৯৩
বিজনেস মানে সময় থাকতে অবস্থা বুঝে নেয়া। বিজনেস মানে বুদ্ধি খাটিয়ে প্রতিকুল অবস্থাকেও নিজের সুবিধেয় লাগানো। বিজনেস মানে এমন দামে জিনিস কেনা এবং এমন দামে বেচা যাতে লাভের মাত্রা স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে থাকে। বিজনেস মানে .... কাজ হাসিল করা।
### পাতা- ৯৭
পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে হবে। ম্যানেজমেন্ট অফ চেঞ্জ - পরিবর্তনকে ম্যানেজ না করলে আমাদের পতন অনিবার্য।
### পাতা-১১৫
প্লানিং এবং স্ট্রাটেজি ছাড়া দূর্গম লক্ষ্যস্থানে আদৌ পৌঁছনোর সম্ভাবনা নেই।
### পাতা- ১১৫
প্লানিং - কোথায় যেতে চাও। লক্ষ্য।
স্ট্রাটেজি - কিভাবে পৌঁছাবে। রণকৌশল।
### পাতা - ১১৫
SOWT :
S. -. স্ট্রেংথ। কোন শক্তি কতটুকু আছে তার হিসেবনিকেশ।
O. -. অপরচুনিটি। কোথায় কি সম্ভাবনার সুযোগ
রয়েছে তা খোঁজ করা।
W - উইকনেস। প্রতিষ্ঠানের দূর্বলতাগুলো খুঁজে
চিহ্নিত করে রাখতে হবে। যাতে তার
সংশোধন করা যায়।
T - থ্রেট। কোথায় কি ভয়ের সম্ভাবনা দেখা
দিচ্ছে তা তালিকাবদ্ধ করা।
### পাতা- ১১৫
যারা বিজনেস চালায় তাদের নির্ভিক হতে হয় সৈন্যদের মত।
### পাতা- ১১৫
লক্ষ্যস্থানে নিরাপদে পৌছাতে হলে আমাদের জানতে হবে- আমাদের শক্তি কোথায়, দূর্বলতা কি, সামনে কি সুযোগ এবং বিপদও কি আসতে পারে।
### পাতা- ১২২
অফিসে মানুষের চিন্তাধারায় গোলমাল রয়েছে। লক্ষ্য সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা নেই বলেই তারা বারবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে।
### পাতা- ১২৩
তাড়াতাড়ি কাজ করতে শেখো।
### পাতা- ১২৩
শক্তির অপর নাম একাগ্রতা।
### পাতা - ১২৩
সুকৌশলীরা সময় বুঝে নিজের দূর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করেন।
### পাতা- ১২৪
প্রতিটি বিপদের মধ্যে কিছু সুযোগ এবং প্রতিটি সুযোগের মধ্যে কিছু বিপদের সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে।-চীনা প্রবাদ।
### পাতা- ১২৪
পৃথিবীর সমস্ত মহাপুরুষেরা পাবলিক রিলেশনে খুব শক্তিমান।
###পাতা -১২৭
কর্মক্ষেত্রে কিছু মানুষকে হিড়হিড় করে টানতে হয়,আর কিছু মানুষ নিজস্ব শক্তিতেই চলমান, ইংরেজরা যাকে বলে সেল্ফ মোটিভেটেড।ইস্কুল ছাত্রের মানসিকতা নিয়ে যারা কর্মক্ষেত্রে আসে তারা সব সময় কড়া হেডমাস্টারকে সম্মান করে। পরীক্ষা, তিরস্কার, পুরষ্কার ছাড়া এরা মোটেই চলমান নয়।
### পাতা- ১২৯
সময় আমাদের দিকে নয়, আমরা ধার করা সময় নিয়ে.... চালাচ্ছি।
### পাতা- ১২৯
প্রতিষ্ঠানে কতদামে আমরা 'শান্তি' এবং 'অকর্মন্যতা' কিনবো তা আর আমাদের উপর নির্ভর করছে না। আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সব রকম সিদ্ধান্ত যার মর্জির উপর নির্ভর করছে তাঁর নাম - মি: কাস্টমার।
### পাতা- ১৩১
জনমানবশুন্য হলেই ম্যানেজারদের একাগ্রতা বাড়ে, তীরন্দাজের সফল হবার সম্ভাবনা ছেড়ে যায়।
### পাতা- ১৩১
যা ভাবা যায় তা কর্মে পরিণত হওয়ার আগে প্রকাশ করলে অকর্মন্যতা বেড়ে যায়।
### পাতা- ১৩২
কোন চিন্তাই শেষ পর্যন্ত থাকে না।
### পাতা- ১৩৫
নো নিউজ ইজ গুড নিউজ।
### পাতা- ১৩৭
পৃথিবী পাল্টায়না, মানুষই পাল্টে যায়, আর পৃথিবীকে দোষ দেয়।
###পাতা- ১৩৮
ত্যাগ আর ভোগ, গ্রহণ ও বর্জন, বন্ধন ও মুক্তি - একসঙ্গে এই পৃথিবীতে হয়না। -- গৌতম বুদ্ধ।
### পাতা - ১৪৬
সবচেয়ে ভালটা আশা করবে আর সবচেয়ে খারাপের জন্য তৈরি থাকবে।
### পাতা - ১৪৭
পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ অথচ সবচেয়ে সফল এবং সম্মানিত কোম্পানি শ্লোগান - "থিংক"। চিন্তা করুন। ভালমন্দ সবরকম চিন্তা করুন।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন