শনিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২১

কবিতা : অন্যপারে, অন্য দরজায়

কবিতা: অন্য পারে, অন্য দরজায়

আজকের কবিতা দেশভাগের নয়। তবে দেশভাগের সাথে এক ফল্গুধারা যোগ আছে। আর যন্ত্রণা আছে, একটু ভিন্নতর।

তখন আমি ভার্সিটিতে পড়ছি। প্রিয়বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া আকছার ঘটতো। আসলে ছোটবেলায় যে মাতৃত্বের অভাববোধ ছিল, তার কিছুটা যেন পুষিয়ে যেত বন্ধুদের মায়েদের আদর পেয়ে। আমার মত গেঁয়ো ছেলেকে তাঁরা ভালবাসত।

তেমনি এক বন্ধুর বাড়ি মাঝে মাঝে যেতাম।তার ছোটভাইয়ের সাথে গল্প করতাম, মাসিমার সাথে ফেলে আসা দেশের গল্প করতাম। আমাকে পেলে তিনি প্রাণখুলে দেশীয় ভাষায় কথা বলতেন। তাঁর আঞ্চলিক ভাষা আমার আঞ্চলিক ভাষা থেকে আলাদা, সব বুঝতাম না। তবে ভাবের আদান প্রদানে কোন সমস্যা ছিল না।

একসময় পড়া শেষ হল। চাকরি পেলাম, বন্ধুও পেল। সময়ের অভাব হল। তবুও যেতাম, ছমাসে নমাসে সুযোগ করে যেতাম। ছোটভাইয়ের সাথেই বেশি গল্প হতো। তার আশ্চর্য দুনিয়ায় আমি সঙ্গী ছিলাম।

তেমনি কোন একদিনে গল্পশেষে ঘরে ফেরার জন্য পা বাড়ালাম। মাসিমাকে বললাম- আসি।
মাসিমা হঠাৎ বেশ গম্ভীর গলায় বললেন
 - এসো, তবে আর এসোনা। 
          বেশ হতভম্ব হয়ে গেলাম। মাসিমার মুখের দিকে তাকালাম। মাসিমা আবার বললেন
 - তোমার বন্ধু এখন এখানে থাকেনা। তোমার এখানে আসবার আর কোন দরকার নেই।
   তিনি আর দাড়ালেন না। নিজের ঘরে চলে গেলেন।

সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। মাসিমা কেন আমায় বারন করলেন জানিনা। ভারীমনে সিড়ি ভেঙ্গে নামছিলাম। হঠাৎ কানে এল 
- দাদা আবার আসবে।
পিছন ফিরে দেখলাম, ভাই। ওকে কথা দিলাম
 - আসবো।

তারপর অনেক বছর কেটে গেছে। আমার আর ভাইয়ের কাছে যাওয়া হয়নি। একদিন বন্ধুর কাছে শুনলাম, ভাই আর এ পৃথিবীতে নেই। অকালে মারা গেছে।

মন ভারী হল। ভাইয়ের শেষ অনুরোধ কথা দিয়েও রাখতে পারিনি। মনের যন্ত্রণা প্রকাশ করতে চেষ্টা করলাম।

   সিঁড়ির কয়েকধাপ নিচে বাঁক নিলাম
   সোনা দরজায় দাঁড়িয়ে ;
   নিষ্পাপ আদুরে স্বরে বলল আবার আসবে।

   আসবো বলে নামতে থাকলাম।

   নামতে নামতে ত্রিশ বছর কেটে গেছে কবে,
   সোনা কি এখনো দাঁড়িয়ে আছে দরজায় ?
   আদুরে আবদারে ?

   আর একটু দাঁড়াও সোনা
   এবার উপরের সিড়ি ভাঙ্গার পালা
   সময় ফুরিয়ে আসছে, কথা রাখতে হবে।
   এবার আসবো, আসবো ঠিক
   এপারে নয়, অন‍্যপারে অন্য দরজায়।।

#writings, #goutamaalee, কবিতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

হে মহাজীবন

মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...