ইচ্ছাশক্তি । Willpower.
একজন মানুষের কথা বলব। অতি সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু সাধারণের মধ্যে অসাধারণ। আমারা অনেক বড় বড় জানি, যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ইত্যাদি।এইসব মানুষ কাজের নিরিখে পিরামিডের মাথায় বসে আছেন। ভিত্তি যদি শক্ত নাহয় তবে পিরামিড হয় কিকরে ? আমি সেই ভিত্তির কথা বলব।
আমি প্রমথ রঞ্জন বিশ্বাস নামক এক রূপকথার নায়কের কথা বলব। তাঁর ঠাকুর্দা টিপ দিয়ে দেনার দায়ে ভিটেছাড়া হয়েছিল। সে একশো বছরের ও আগের কথা। তাঁর বাবা তখন শিশু। ভিটেছাড়া হয়ে আশ্রয় জুটেছিল গাছতলায়। সেখান থেকে গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মানুষ থাকার জায়গা দিয়েছিল। লোকের বাড়ি পেটে ভাতে রাখালী করে শৈশব কৈশোর কেটেছে তাঁর বাবার।
#willpower #ইচ্ছাশক্তি
বড় হয়ে প্রতিজ্ঞা করেন তাঁর বাবা। "ছেলেকে লেখাপড়া শেখাবেন। তাঁর বা তাঁর বাবার মত নিরক্ষর রাখবেন না। সন্তানরা কেউ আর কখনো টিপ দেবে না।"
কিন্তু শতবর্ষ আগে সে ছিল এক অবাস্তব বিষয়। দরিদ্র এবং নিন্মবর্গীয় মানুষের কাছে লেখাপড়া ছিল অবাস্তব স্বপ্ন। তবুও সব বাধা অতিক্রম করে তিনি ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করালেন।
স্কুলে ভর্তি করালেন তাঁর বাবা। কিন্তু পড়া চালিয়ে যাওয়া বা শেষ করা বড় কঠিন। টাকার অভাবে বই কিনতে না পেরে অন্যের বই ধার করে পড়া। বাবার সাথে দিনমজুর হিসাবে কাজ - ভোরে মাঠে , দশটার সময় মাঠ থেকে সোজা স্কুল, ছুটির পর আবার জমিতে বাকি সময়টুকু কাজ করার জন্য। কেরোসিনের অভাবে রাতে পড়া হতো না। পদে পদে বাধা। বাধা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক ভাবে ছিল না, সামাজিক ভাবেও ছিল।
শত বাধা সত্বেও তিনি পড়া ছাড়লেন না। যে বাবা ছেলেকে পড়াবেনই বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আলোর নেশায় বুদ হয়ে তিনি পড়তে থাকলেন। মেধাকে কাজে লাগিয়ে অসাধ্য সাধন করতে থাকলেন। মাধ্যমিক, আই এ, বি এ ।
ফিরে এলেন নিজের স্কুলে। প্রথমে সহকারী শিক্ষক, পরে প্রধান শিক্ষক। তখন অতি দুঃসময় চলছিল স্কুলের। যথার্থ নাবিকের মত হাল ধরেছেন। সমাজে শিক্ষার প্রয়োজন জানতেন বলেই রূপকথার রাজার মত রাতে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন, ছাত্র ছাত্রীদের মা বাবাকে উৎসাহিত করতেন, যারা পড়া পারতোনা তাদের পড়া দেখাতেন।
নিজে যেমন পড়েছেন তেমনি পরবর্তী ভাইবোনদের পড়িয়েছেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। একাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠায় মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। অসংখ্য জনহিতকর কাজের অগ্রপথিক।
#অনুপ্রেরণা #inspiration
আজ তিনি বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁর অগনিত ছাত্র ছাত্রী, ভাইবোন, সমাজের মানুষের কাছে তিনি প্রণম্য। সবার কাছে তিনি বিদ্যাসাগর, বিদ্যাদান করে মহান হয়েছেন।
কী ছিল তাঁর মূলধন ? #willpower
অদম্য ইচ্ছা। আর সেই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শান্তিনিকেতনে আশ্রমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর ইচ্ছা হল এই বিদ্যালয়কে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত করবেন। রবীন্দ্রনাথের প্রবল ইচ্ছাশক্তির পরিনতি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। অপরিসীম বাধা কীভাবে অতিক্রম করেছেন তা জীবনী পড়লে অনুধাবন করতে পারি।
#inspiration
ইচ্ছা যদি প্রবল হয় তবে কোন বাধাই আটকে রাখতে পারে না। প্রমথরঞ্জন বিশ্বাস-এর মত প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।
#willpower #inspiration #ইচ্ছাশক্তি #অনুপ্রেরণা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন