বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২১

ধৈর্য । Patience

সবুরে মেওয়া ফলে: ধৈর্য
#ধৈর্য #Patience

ছবিগুলো দেখছি। গ্রামের ছবি। একটা সেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠান। মুন্ডাপাড়ায় স্বাস্থ্য শিবির। শহর থেকে নানা ধরনের লোক এসেছে। আমি ছবি তুলছি। হাস-মুরগির-মানুষের, প্রকৃতির। একটা বাচ্চা ছেলে খালিগায়ে হাফপ্যান্ট পরে স্কুলের দেয়ালে ঠেস্ দিয়ে দাঁড়িয়ে। একটা ভাল ছবি হতে পারে। তুললাম। তারপর ছবির খোঁজে এদিক ওদিক।

অতিথি অভ‍্যাগতদের আসা যাওয়ার ছবি তুলেছি। অনেক ছবিতে দেখা যাচ্ছে ছেলেটিকে।  কারণ ওর দাড়ানোর জায়গা হলে /স্কুলে ঢোকার কাছেই। ছেলেটার সমবয়সীরা হৈ হৈ করে ছোটাছুটি করছে। সে ব‍্যতিক্রম। ভাবলেশহীন দাড়িয়ে আছে।

ঘন্টা দেড়েক পর টিফিন এলো। ছেলেটা তখনও দাঁড়িয়ে। টিফিন খেতে গিয়ে দুইজন অতিথির নজরে এলো বাচ্চা ছেলেটা। দুইজন দুটো কলা দিল তাকে। এবার তার মধ্যে চাঞ্চল্য এলো। প্রথমে কলার খোসা ছাড়িয়ে এক কামড় খেল। তারপর সেখান থেকে ছুটে গেল তা বন্ধুদের ভিড়ে। #patience

এবার আরো কয়েকটি ছবি , আরেকটু গল্প।
          একটা বকের ছবি। একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে মনে হবে ঘুমাচ্ছে। আমি যদি ওর ঘুম ভাঙ্গা পর্যন্ত অপেক্ষা করি, একসময় বিরক্ত হয়ে যাবো বা চোখে ঘুম এসে যাবে। ধৈর্যের পরীক্ষা। এক বা দুঘন্টা কেটে যাবে। যখন রণে ভঙ্গ দিতে চাইবো, হয়তো সেই সময় দেখবো যে বকের ঠোটে একটা মাছ। অবাক হয়ে ভাববো, কখন মাছটা ধরলো !
          একটা ব‍্যাপার নিশ্চিত যে বকটা ঘুমাচ্ছিল না। আমি অস্থির হলেও সে ছিল স্থির। বকের লক্ষ্য ছিল মাছ ধরা। লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত বক স্থির, একাগ্র। #firmness

আমরা মাকড়সার জাল দেখেছি। জাল তৈরি করে মাকড়সা থাকে জালের কেন্দ্রে। জালের যে কোন অংশে কিছু একটা পড়লেই সে টের পায় আর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে চলে যায়। অতি তৎপরতার সাথে তার শিকারকে নিজের জাল দিয়ে মুড়ে দেয়। কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও মাকড়সা সদা সতর্ক থাকে। একাগ্র থাকে জালের কোথাও কিছু পড়লো কিনা সেটা বুঝতে। #calmness

বিড়াল। আমরা সবাই চিনি। দুধভাত, মাছ, মাছের কাঁটা তার অতিপ্রিয়। ইঁদুরকে শায়েস্তা করতে গ্রামে বিড়াল পোষা হয়। বিড়াল রাতে যেমন ইঁদুর ধরে তেমনি দিনের বেলা চড়ুই পাখিও ধরে। কিন্তু যদি বিড়ালের ইঁদুর ধরা বা চড়ুই ধরা দেখি, বুঝতে পারবো কী ধৈর্য, একাগ্রতা নিয়ে সে তার খাদ্য ধরে।
          আমার বাড়ির পিছনের দিকে একটু ফাকা পোড়ো জায়গা আছে। ময়লা ফেলে কেউ কেউ। সেখানে ইঁদুরের গর্ত আছে। একবার দেখলাম, একটা সাদা বিড়াল গর্তের মুখে ওৎ পেতে আছে। ক‍্যামেরাটা নিয়ে জানালার ধারে বসলাম। একসময় ধৈর্যের অবসান হলো। উঠে গেলাম। বাজার থেকে এসে দেখি বিড়াল বসেই আছে। দুপুরে স্নান সেরে সেখানে গেলাম। বিড়াল গা এলিয়ে শুয়ে আছে। ভাবলাম সে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর পরক্ষণেই ঘটল সেই বহুপ্রতিক্ষিত ঘটনা। বিড়ালটা যেন ঘুমন্ত অবস্থাতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল গর্তের মুখে। একটা ধেড়ে ইঁদুরের মাথার নিচে কামড়ে ধরেছে।
          প্রশ্ন হচ্ছে, বিড়ালটা কি সত্যি ঘুমাচ্ছিল ? নাকি সমস্ত ইন্দ্রিয় গর্তের দিকে সজাগ রেখে  ভান করে পড়েছিল?  এখানেও বিড়াল একাগ্রতা, ধৈর্য দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাল।
#endurance

আরেকটি গল্প বলি।
          আমাদের গ্রামের ভরতদা দাবা খেলতেন গ্রামের প্রভাবশালী ডাক্তারবাবু তথা নাট‍্যশিল্পী বিমলবাবুর সাথে। অনেক সময় বেলা ফুরালেও তাঁদের খেলা ফুরাতো না। ভরতদা মাঝে মাঝে মাছ ধরার কোচ নিয়ে বিলের দিকে যেতেন। বিকালে তিন চারটে শোলমাছ দড়িতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরতেন। গ্রামের মানুষ তাঁকে ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুর পাড়ে বসে থাকতে দেখতে অভ‍্যস্ত।
          সেই সময় বিলে সারাবছর জল থাকতো। চাষীরা নীচু জমিতে পুকুর কাটতো। বিলের জল কমতে থাকলে মাছ পুকুরে জড়ো হতো। পুকুর সাধারণত কচুরিপানায় ভর্তি থাকতো। ভরতদা পুকুরের মাঝের দিকে কিছু পানা তুলে পরিষ্কার করে নিতো। সেখানে মাছ নিশ্বাস নিতে বা ছাড়তে এলেই ভরতদার তাক করা কোচ পড়তো মাছের উপর। যতক্ষণ মাছ ধরতে পারছেন, কোচ তাক করে দাবাখেলার মত ধ‍্যানমগ্ন হয়ে পুকুরপাড়ে বসে থাকতেন। #inspiration

সব কয়টা গল্পই একাগ্রতার গল্প, ধৈর্যের গল্প, বুদ্ধি সচল রাখার গল্প। এবার একটা বিপরীত গল্প বলি, পানকৌড়ির গল্প। 
          পানকৌড়ি জলে ডুবে ডুবে মাছ ধরে। সে সদাচঞ্চল । বারবার ডুব দেয়। সব সময় মাছকে তাড়া করে। মাছেরা পালাতে থাকে। যে পালাতে পারে না তাকে ধরে। পুকুরপাড়ে বসে এমন মাছধরা অনেকবার দেখেছি। মাছ ধরতে দেখেছি আবার অনেকরার ডুব দিয়েও মাছধরতে না পেরে চলে যেতে দেখেছি। #tolarance
          আমরা ছাত্রজীবনে বা কর্মজীবনে বেশিরভাগই এই পানকৌড়ির দলে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। এলোপাতাড়ি কাজ করি। কখনো সফল হই কখনো ব‍্যর্থ হই। ভাগ‍্যকে দোষারোপ করি।

এবার এগল্পের নায়কের কাছে আসি। অন্য বাচ্চারা যখন হৈ হুল্লোর করে বেড়াচ্ছে, তখন ছেলেটি স্থির। তার তৃতীয় সত্বা তাকে বলে দিয়েছে - অতিথিদের জন্য খাবার আসবে। হয়তো পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। তার বয়সী সহজাত ছেলেমী সে আটকে রেখেছে। এটা ঐ বয়সে ব‍্যতিক্রমী প্রয়াস। অপেক্ষা নাকরে দূরে থাকতে পারতো। খাবারের সময় সামনে এসে দাঁড়াতে পারতো। দেড়ঘন্টা সময় সে যে হাভাতের মত ফ‍্যাল ফ‍্যাল করে তাকিয়ে ছিল- তাও নয়। সে লক্ষ্য হারাতে চায়নি আবার নজরে থাকতে চেয়েছে। অবশেষে লক্ষ্যপূরণ। তারপরেই সে ছুটে গেছে খেলার সাথীদের কাছে।

এই ছেলে মনে করিয়ে দিল সেই প্রবাদ --
          সবুরে মেওয়া ফলে।

এর থেকে শিখতে হয় কিছু পেতে হলে কিছু ছাড়তে হয়। আর সজাগ রাখতে হয় নিজেকে, কী ঘটতে পারে বা কী করলে কী হতে পারে। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে ধীর স্থির হয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়, আর গন্তব্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত ক্ষান্ত দিতে হয়না। ধৈর্য ও বুদ্ধি- দুটোর প্রয়োগ করতে পারলে সাফল্য আসবেই।।
#lifestyle, #motivation, #inspiration

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

হে মহাজীবন

মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...