Lifestyle of a refugee is always disaster. One of my hoby is writing. Sometime I write short stories and poems in Bengali. Most of the writings are reflection of refugee life. I welcome you to my writing world. Please inscribe a comment, if possible. Thank you. Writing blog, writing blog for money, writing blog on instagram, writing blog posts, writing blog site, writing blog job, blogger, blogger platform, best free blogger site, ব্লগার, বাংলা ব্লগ, গল্প, কবিতা, গল্প ও কবিতা, #goutamaalee .
বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
ধূসর ডায়েরীর পাতা। Ashy Diary Page
বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১
সমীকরণ । Equalization
শিকার । Hunting
বক-বকম -
এঁদের জীবনে শব্দটা খুব মানানসই। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স দু'জনের। সেই কবে থেকে ক্লাশ ডিঙোতে ডিঙোতে দু’জনের বক্-বকম্ শুরু হয়েছিল।সেই বক্-বকম্ আর থামেনি। চেষ্টা চলেছিল বৈকি। ছেলের বাপ তার রাজপুত্রের মত ছেলেকে থামাতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। কি যে দেখেছিল সে একটা কালো, নাদুস-নুদুস, কৌলিন্যহীন মেয়ের মধ্যে ! বাপকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘর বেঁধেছিল তারা।
ঘর বেঁধেছিল বটে তবে ঘর ভরতে পারেনি। কেন যে ঘরে কোন নতুন অতিথি এল না,— জানে না তারা। তবু বক্-বকম্ তাদের থামেনি। প্রাণের জোয়ার ছিল বড় বেশি। আর সেই জোয়ারে ভাসতে ভাসতে হঠাৎ একদিন গেঁটে বাতে বিছানায় আশ্রয় নিল গৃহিনী। আর সেই সুবাদে দু’জনেরই অফিসের হাজিরা খাতায় ছুটি শব্দটা যোগ হয়ে গেল বেশ কয়েক দিনের।
কিন্তু এভাবে তো চলতে পারে না। চলতে পারে না বলেই কাজের মেয়ের খোঁজ করতে হল। এবং খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেল—“কোন এক গাঁয়ের বধূ।
ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠল গৃহিনী। আবার হাজিরা খাতায় সই করতে লাগল। সেই সঙ্গে বাড়ির প্রাত্যহিক কাজে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেল কাজের মেয়েটা। সে হয়ে উঠল ‘অপরিহার্য। গৃহকর্তা হঠাৎ আবিষ্কার করলেন –বক বকম ছাড়াও অনেক কাজ করতে হয় গৃহিনীকে। সে কাজে সহযোগিতা করার দায় তো তারই। আর সেই জন্যেই স্থায়ী হয়ে গেল কাজের মেয়েটা।
সময় যাচ্ছিল উচ্ছ্বাসেই। বিশেষ করে বাড়ির কর্তার। কর্তার এই উচ্ছাসের রেশ ধরে হিসাব কষলেন গৃহিনী। কর্তার বক বকম যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে তার বাড়িতে হাজিরা। তার গেঁটে বাতের পর বাড়িটাকে বড় বেশি এঁটে ধরেছে কর্তা। গৃহিনীর কপালে ভাঁজ পড়ল। বিপদের আঁচ পেলেন তিনি। ঝাকুনি খেল তার মনের সিংহাসন। অস্থির হয়ে উঠলেন। একদিন বক্-বকম্ করতে করতেই পাড়লেন কথাটা। কর্তা কিন্তু অভিযোগ স্বীকার করলো না। গৃহিনীর বড় বাড়াবাড়ি। কয়েক দিনের জন্য নিস্তরঙ্গ হয়ে গেল সংসার।
কর্তা ভাবলেন কয়েকটা দিন। ফিরে দেখলেন নিজেকে। সত্যিই তো কাদা জমেছে তার মনে! ভাবলেন ধুয়ে ফেলবেন। গৃহিনীর মুখোমুখি হলেন আবার।
--বাবা বলতেন, তুমি কালো। কিন্তু আমি তোমার মধ্যে কোন কালো খুঁজে পাইনি, খুঁজে পেয়েছিলাম মনের সত্যকে। সেই সত্যকে আমি বেছে নিয়েছিলাম।
গৃহিনীর নিরস মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন। কথার যাদু জানেন কর্তা। সেই যাদুতে স্পষ্ট দলিল লিখতে সচেষ্ট হন
--কিন্তু আরো এক সত্যের মুখোমুখি আমি। এই বুড়োবয়সেও পথে-ঘাটে তোমাকে খুঁজি, তোমার দিকে লোভীর মত তাকিয়ে থাকি আমি—আমাদের সেই প্রথম জীবনের অষ্টাদশী নাদুস-নুদুস্ তোমাকে।
নীরস মুখে হাসির আভাস মেলে। কিন্তু সেই হাসি মিলিয়ে যায় কর্তার পরের কথায়,
–বাড়ির কাজের মেয়েটা আমার সেই পুরনো লোভটাকে জাগিয়ে দিয়েছে।
কর্তার মনের কাদার ছোপ লাগল গৃহিনীর। স্বস্তি পাচ্ছিলেন না তিনি। আবার থমথমে ভাব। দু’জনের মাঝে চোরকাটা জমে উঠেছে ধীরে ধীরে। বক্-বকম্ আর
জমে উঠছে না কোন মতেই। চেষ্টা করলেন গৃহিনী। সেই চেষ্টার প্রথম ধাপে কয়েক দিনের মধ্যেই কাজের মেয়েকে বিদায় দিলেন।
অভ্যস্ত জীবনটায় টান পড়ল আবার । অফিস ও রান্নাঘরের ঠুন-ঠানের সাথে মানিয়ে নিতে চাইলেন আগের মতন। দু'জনেই প্রাণ খুলে আবার আসর বসাতে লাগলেন নিজেদের মধ্যে। গোপনীয়তার কাদা উঠে গেল ধীরে ধীরে। আর সেই ধোয়া মনে পরিষ্কার হয়ে গেল কর্তার লোভের দাগটা। নিত্যদিনের আলোচনা - অফিস, বাস, ট্রাম, স্কুলের গেট—সবকিছুর মাঝখানেই একটা বিষয় ঘুরে ফিরে আসতে লাগল; নাদুস নুদুস্ – অষ্টাদশী.... । তবু এই সব প্রাথমিক আলোচনার
মাঝে অপ্রাসঙ্গিক কিছু খুঁজে পাননি গৃহিনী, কিন্তু হঠাৎই একদিন গৃহিনীর ভাবনার আকাশে মেঘ জমল। সেদিন একটু রাত করে বাড়ি এলেন কর্তা। বেশ হাসি
খুশি, টগবগে। গৃহিনী বুঝতেই পারছিলেন বক্-বকমের জোয়ার বইবে আজ।
তাড়াতাড়ি সব কাজ গুছিয়ে মুখোমুখি হলেন কর্তার।
--একটু ঘুর পথে ফিরলাম আজ । নিজেই শুরু করলেন কর্তা।
--কোথায় গিয়েছিলে?-পানে চুন লাগাতে লাগাতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন তিনি।
-- হাটে।
-- হাটে? এই শহরে হাট?
--শুনেছি অনেক দিন—এই শহরেই হাট বসে। বেশ জমজমাট হাট। প্রতিদিন। প্রতিক্ষণ। তবে বিক্রি হয় মাত্র একটাই জিনিস। পুতুল। বিবরণ কেন্দ্রীভূত হয়।
--পুতুল? সে কি গো——কোথায় সেটা, কেমন পুতুল?—উৎসুক প্রশ্ন করে এক নাগাড়ে।
--হ্যা পুতুল। তবে মাটির নয়, প্লাস্টিকেরও নয়। রক্ত-মাংসের।
গৃহিনীর ইন্দ্রিয় সজাগ হয়। বাক্যহারা হয়ে যান তিনি। বলতে থাকেন কর্তা,
--মেলার পুতুল তো দেখেছ-- ছোট, বড়, নানা আকারের। এ মেলায়ও ছেট, বড় নানা আকারের রক্ত মাংসের পুতুল পয়সায় মেলে। তবে বাড়ি আনা যায় না।। যতক্ষণ পয়সার রেশ থাকে ততক্ষণ তোমার। অনর্গল কথা বলে যায় কর্তা।
কিন্তু গৃহিনীর কানে পৌঁছায় না সে সব । শব্দের কোলাহলে নিজের মধ্যে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় গৃহিনী। কোথায় গিয়েছিলেন, কেন গিয়েছিলেন-- সে প্রশ্ন আর করতে হয় না। বুঝতে পারে অতীতের সেই লোভী মানুষটা আবার জেগে উঠছে। শিকার খুঁজছে সে, নাদুস-নুদুস– অষ্টাদশী।
কিন্তু কি করবে গৃহিনী? কি সে করতে পারে? তার ভালবাসার এই লোভী মানুষটাকে সে কি ছেড়ে দেবে শিকারের দিকে? এই লোেভ মিটাবার সামর্থ্য তো তার নেই। তবে সে কি জোর করে বশীভূত করে রাখবে? সে কি এই স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনায় জল ঢেলে দেবে? কর্তাকে বাধ্য করবে এই সব অলোচনার প্রসঙ্গ না তুলতে? কিন্তু কি লাভ হবে তাতে? সেকি পারবে তার কর্তার মনের মাঝে বাসা বাঁধা লোভী সত্তাটাকে উপড়ে ফেলতে?
ভাবনায় রাতের ঘুম চলে যায় গৃহিনীর। যে রাজপুত্রকে সে খাঁচায় বন্দী করেছিল—সে তো খাঁচায় আছে এখনো। দরজা খোলা পেয়েও পালায়নি। হয়তো সেও ভালবেসে ফেলেছে এই খাঁচাকে খোলা দরজায় না পালিয়ে বরং সে উঁকি-ঝুঁকি মারতে ভালবাসে। খাঁচায় থেকেই সে অষ্টাদশীর ছোঁয়া পেতে চায়। কি করবে গৃহিনী! সে খাঁচার দরজা শক্ত করে আটকে দেবে? কিন্তু পুরুষের তৈরি খাঁচায় সে কি পুরুষকে আটকে রাখতে পারবে? তাদের যে হাজার দরজা খোলা। ভাবতে থাকে গৃহিনী। ঝিঁ ঝিঁ পোকারা মাথার মধ্যে ডাকতে থাকে একটানা। যতই সে বন্দী করুক -এ আকাশ পুরুষের, একা পুরুষের। তবু তার ইচ্ছা করে এ পাখি তার একার থাক। সে তার বক্-বকম্ হারাতে চায় না। তার রাজপুত্র তারই, একান্তভাবেই তার।
অফিসে গিয়ে উলের কাঁটা নাড়তে নাড়তে পাশের টেবিলের সহকর্মীকে গিট-বাতের কথা বলে। ঘর মোছার কষ্ট, কাপড় কাচার কষ্ট, সিঁড়ি ভাঙার কষ্ট। আর বলে একটা মেয়ের কথা। কাজের মেয়ে। একজন অষ্টাদশী চাই তার। নাদুস-নুদুস হলেই ভাল। তার সুন্দর ঘরে, সারা জীবনের সাজানো ঘরের মানান সই একজন মানুষ চাই। পয়সার কথা ভাবে না সে। সে ভাবে ঘরের মানুষের কথা।
যরের মানুষের ঘরে ফেরার কথা।
সহকর্মীর আকুতিতে সাড়া দেয় সহকর্মী। দুর গ্রাম থেকে নিয়ে আসে একজনকে।
বাপ মরা মেয়ে। মায়ের বুক ছিঁড়ে চলে আসে দুটো ভাতের আশায়, ভাল থাকার আশায়। বুড়ো-বুড়ির সংসার । সাজানো সংসার । ভাবনার কিছু না পেয়ে নিশ্চিন্তে সহকর্মীর হাতে তুলে দেয় সহকর্মী।
লাজুক মেয়ের জটা চুলে হাত বোলায় গৃহিনী। গভীর মমতায়। ভালবাসতে চায়। সুগন্ধী সাবান আর শ্যাম্পুতে স্নান করায় তাকে। নতুন জামা পরায়। সুন্দর ঘরের উপযোগী করে সাজায়।
অফিস আবার আগের মত তাড়াতাড়ি ছুটি হতে থাকে। এই শহরের হাটে একজন হাটুরে কমে যায়। বক্-বকম্ বাড়ে। রান্না ঘরে আনা-গোনা বাড়ে। ঝি ঝিঁ পোকার ডাক আর একঘেয়ে থাকে না, চুড়ির শব্দ যোগ হয় তাতে। বক-বকমের মাত্রা বাড়ে, রাত বাড়ে। এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে গৃহিনী। বাতের ব্যথায় জেগে ওঠে আবার। অভ্যস্ত হাতটা শূন্য লাগে। হাতড়ায় , চোখ মেলে অন্ধকারে তন্ন তন্ন করে খোঁজে । পায় না কিছু। শুধু একটা আওয়াজ ভেসে আসে পাশের ঘর থেকে—খট্ খট্। গৃহিনী বুকের মধ্যের গৃহটাকে আঁকড়ে ধরতে চায়। বুকটা কেমন ফাঁকা হতে থাকে। প্রাণপণে বালিশ চাপে বুকে। বালিশে, বিছানায় গন্ধ খোঁজে, সুগন্ধী সাবানের , শ্যাম্পুর; তার নিজের তেরি গন্ধে সতেজ হতে চায়। সুগন্ধ খুঁজে পায় না। চারিদিক থেকে কেবল খট্ খট্ আওয়াজে কেঁপে ওঠে, ইটগুলো খসে পড়তে চায়। দু'কানে আঙ্গুল চেপে শব্দটা আটকাতে চায়; আর জোর করে সে অষ্টাদশী হতে চায়, নাদুস-নুদুস অষ্টাদশী।
ভোর হয়। পাখির পালকের মত বাজারের থলি হাতে বেরিয়ে যান কর্তা।
কাজের মেয়েটি গাঁয়ের মেয়ে হয়ে দাঁড়ায় গৃহিনীর সামনে। পরনে পুরনো জামা, খালি পা, এলো চুল। সরাসরি তাকায় গৃহিনীর চোখের দিকে। গৃহিনী কিছু বলার আগেই হাত বাড়ায় মেয়েটি। ভাঙা চুড়িগুলি গৃহিনীকে ফেরৎ দেয়। ছোট্ট পুঁটলী হাতে লোহার গেট পেরিয়ে জংলা গাঁয়ের দিকে হেঁটে চলে মেয়েটি।
আবার একদিন কোলের উপর শরৎচন্দ্র পড়তে পড়তে সহকর্মীকে বাতের কষ্টের কথা বলে গৃহিনী। আর বলে বক-বকমের কথা। বক্-বকম করার জন্য একটা মেয়ে চাই তার। কাজের মেয়ে। নাদুস-নুদুস। অষ্টাদশী হলেই ভাল হয়।
চতুর্থ দুনিয়া, '৯৬
2021-9-21 14:13
জীবন যুদ্ধ । The Battle of Life
মঙ্গলবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১
ধা ধিন ধিন ধা (Short Story)
সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
অনুপ্রেরণা : রবীন্দ্রনাথ
দেখতে দেখতে ষাট বছর পেরিয়ে গেলো।পয়ত্রিশ বছরের অবিরাম যাওয়া আসা একদিন বন্ধ হয়ে গেল। এক সন্ধ্যায় এক তোড়া ফুল হাতে দিয়ে অফিসের বন্ধুরা বলল- বুড়ো হয়ে গেছ, এবার বিদায় হও।
পরের দিন থেকে আর অফিসে গেলাম না। পরের মাসে কোন মাইনে পেলাম না। বিরাট ধাক্কা। মানসিক ধাক্কা। আয় নেই। পেনশন নেই। একরাশ অনিশ্চয়তা আছে।
কিছু একটা করা দরকার। সময় কাটানোর জন্য। আয় করার জন্য। কিন্তু কি করবো ? ষাট বছরে কিছু শুরু করা দুষ্কর। চিন্তা বাড়ছে। ভাল ঘুমাতে পারছিনা। জীবনের তাল কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
টিভিতে একটা অনুষ্ঠান দেখলাম। চিনের সফল ব্যবসায়ী মা(Maa) জীবন নিয়ে আলোচনা করছেন। জীবনকে কয়েকটি ভাগ করেছেন। সর্বশেষ ধাপ ষাট বছর থেকে। বললেন, বয়স যখন ষাট , এবার বিশ্রাম নিন। মনকে, শরীরকে বিশ্রাম দিন। অনেক করেছেন, এবার জীবনকে উপভোগ করুন। হতাশা বাড়ল। তিনিও বললেন, ষাট মানেই বুড়ো !
কয়েকজন বন্ধু বিজনেস ম্যাগনেট মা-এর মত বললেন- অনেক করেছি, এবার বিশ্রাম নিতে হবে। কয়েকজন বন্ধু কাশী-বৃন্দাবন-মক্কায় গেল। পরকালের ভাবনায় জীবন কাটাতে লাগলো।
বাকি কিছু বন্ধু ভাবতে লাগলো নতুন কিছু করা যায় কিনা। ভাবতে ভাবতে একটা বছর কেটে গেল।
হঠাৎ মনে পড়ল রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের কথা। তিনি বলেছিলেন, " রবীন্দ্রনাথ আমাদের সুখে আছেন, দুখে আছেন, কোলাহলে আছেন, নির্জনতায় আছেন। " ভাবলাম, তবে কি তিনি আমার নিস্তেজ জীবনেও আছেন ?
আমি রবীন্দ্র জীবনীতে ডুব দিলাম। কয়েকদিন সময় লাগলো পড়তে। পড়া শেষে এক অন্য অনুভূতি জন্ম নিল মনের মধ্যে। বিশ্বাস করুন, আমার সেই নিস্তেজ ভাবটা কেটে গেল।
যে বয়সে আমি এবং আমরা নিস্তেজ হয়ে পড়ছি, দিশাহীন হয়ে পড়ছি- সেই বয়সে রবীন্দ্রনাথ কী করতেন ? এক উজ্জিবক রবীন্দ্রনাথ- তাঁর সৃজনশীলতা , উদ্যম, কঠোর পরিশ্রম, তাঁর একাগ্রতা আমাদের মুগ্ধ করে এবং সতেজ করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পারেন কিন্তু আমরা পারিনা। কেন পারিনা ? একটা তথ্য মনে রাখা দরকার। সেই সময় অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়ে ভারতীয় মানুষের গড় বয়স ছিল ত্রিশ বছর। আর আজ মানুষের গড় বয়স আটষট্টি বছর। অর্থাৎ সময়ের তুলনায় আমরাতো তরুণ !
চলুন, আমাদের প্রাণের আরাম , মনের শান্তি রবীন্দ্রনাথের কাছে ফিরে যাই।
চল্লিশ বছর বয়সে মাত্র পাঁচ জন ছাত্র নিয়ে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ প্রতিষ্ঠা করলেন ব্রম্মচর্য বিদ্যালয়। সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে একটি স্বপ্নও প্রতিষ্ঠা করলেন। এই ছোট্ট বিদ্যালয় একদিন বিশ্ববিদ্যালয় হবে, বিশ্বজ্ঞানের আকর হবে। সারা পৃথিবীর মানুষ আসবে জ্ঞানের পিপাসা মেটাতে।
রবীন্দ্রনাথের মনে জোর ছিল, বৈদিক যুগে যদি ' তপোবন ' হতে পারে, বৌদ্ধ যুগে যদি 'নালন্দা ' হতে পারে তবে শান্তিনিকেতনে বিশ্ববিদ্যালয় হবে না কেন ?
সতের বছর পর , রবীন্দ্রনাথ-এর বয়স যখন সাতান্ন বছর, তিনি ভিত গড়লেন তাঁর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের।
ইতিমধ্যে আঘাতে আঘাতে দীর্ণ হয়েছেন তিনি। বাবার মৃত্যু হয়েছে, স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে, দুই কন্যার মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ছোট ছেলের। কয়েক বছরের মধ্যে নিঃস্ব হয়েছেন তিনি। কিন্তু মৃত্যুর মধ্যেও রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটেনি।
নিজের মনের শক্তি নিজেই সঞ্চয় করেছেন, তারুণ্যের কাছে হাত পেতেছেন---
ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা
ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ
আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হলো। কিন্তু তারপর ?
হাতি পোষা ও তার যত্ন-আত্তি এবং খাবার জোগানোর দায় তো মালিকের। মালিক রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দান করেছেন, বইয়ের স্বত্ব, নোবেল পুরস্কারের সুদের টাকা, সবই দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। তারপর ভিক্ষার ঝুলি কাধে তুলে নিলেন। ষাট থেকে পচাত্তর বছর বয়স পর্যন্ত অক্লান্ত ভাবে ঘুরেছেন দেশের এবং পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। গান গেয়ে, নাটক করে, বক্তৃতা দিয়ে টাকা সংগ্রহ করেছেন, বই সংগ্রহ করেছেন, ছাত্রদল নিয়ে ঘুরেছেন।
আমি যদি রবীন্দ্রনাথের ষাট থেকে পচাত্তর অর্থাৎ এই পনের বছরের টাকা সংগ্রহের জন্য ভ্রমণের কথা বলতে থাকি, বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে যাব, আপনারা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি রবীন্দ্রনাথ, তিনি ক্লান্ত হননি। এত পরিশ্রম তাঁর শরীর নিতে চায়নি, তবুও জোর করে বেরিয়েছেন। অসুস্থ হয়েছেন, সুস্থ হয়ে আবার পথে নেমেছেন।
চলুন, একটু সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেখি :
১৯২০ :
আমেদাবাদ, বোম্বাই, বরোদা, সুরাট, বোম্বাই, কলকাতা।
ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, প্যারিস, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, প্যারিস। আমেরিকা-১৫ দিন নানা শহরে। তারপর ইংল্যান্ড, প্যারিস, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চেকোভ্লাকিয়া, কলকাতা।
১৯২২ :
বোম্বাই, পুনা, মহিশুর, বাঙ্গালোর, মাদ্রাজ, সিংহল।
১৯২৩ :
লক্ষ্মৌ, বোম্বাই, আমেদাবাদ, করাচি, পোরবন্দর, কলকাতা। আবার পোরবন্দর।
১৯২৪ :
চিন যাত্রা। সাংহাই, নানকিং, পেকিং, জাপান।
দক্ষিণ আমেরিকা, অসুস্থতার কারণে পেরু যাওয়া হয়নি। আর্জেন্টিনা, ইতালি, ভেনিস, কলকাতা।
১৯২৫ :
ইতালি। রোম, ফ্লোরেন্স, ট্যুরিন, সুইডেন, জুরিখ, ভিয়েনা, হাঙ্গেরি ।
জীবনীকার লিখেছেন, ' ভিয়েনা হয়ে কবি যখন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পৌঁছালেন তখন কবির শরীর সহ্যশক্তির শেষ সীমানায়। এই বয়সে এতো ঘোরাঘুরি সহ্য হবে কেন । তবু বক্তৃতা দিলেন। '
কয়েকদিন বিশ্রাম নিয়ে আবার চললেন --
যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, ইস্তাম্বুল, গ্রিস, মিশর, সুয়েজ হয়ে দেশে।
১৯২৬ :
লক্ষ্মৌ।
ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, আগরতলা, কলকাতা।
১৯২৭ :
ভরতপুর, জয়পুর, আমেদাবাদ, আগ্রা, শান্তিনিকেতন, ।
সিঙ্গাপুর, মালয়দ্বীপ, বালিদ্বীপ, জাকার্তা, ব্যাংকক, দেশ।
১৯২৮ :
মাদ্রাজ, কলম্ব, ব্যাঙ্গালোর, শান্তিনিকেতন।
১৯২৯ :
জাপান, কানাডা, জাপান, ইন্দোচীন।
১৯৩০ :
আমেদাবাদ, বরোদা, শান্তিনিকেতন।
১৯৩১ :
ভুপাল।
১৯৩২ :
পারস্য (এলাহাবাদ- যোধপুর- করাচি- বুশায়ার- তেহরান হয়ে ) ইরাক, বাগদাদ, কলকাতা।
১৯৩৩ :
শান্তিনিকেতনের ছাত্রদল নিয়ে কলকাতা, বোম্বাই, দক্ষিণ ভারত।
১৯৩৪ :
দল নিয়ে সিংহল।
দল নিয়ে মাদ্রাজ, ওয়াটারলু।
দল নিয়ে কাশি, এলাহাবাদ, লাহোর, লক্ষ্মৌ ।
১৯৩৬ :
নৃত্যনাট্য নিয়ে উত্তর ভারত। পাটনা, এলাহাবাদ, লাহোর, দিল্লী।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য টাকা সংগ্রহের এই পথ পরিক্রমা থামে তাঁর পচাত্তর বছর বয়সে। মহাত্মা গান্ধী অসুস্থ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংবাদ পেয়ে বিচলিত হন। তিনি রবীন্দ্রনাথকে অনুরোধ করেন এত পরিশ্রম না করতে। এইসময় শিল্পপতি বিড়লা বিশ্বভারতীর উন্নয়নের জন্য ষাট হাজার টাকা অনুদান দেন।
এতো কিছুর পরেও রবীন্দ্রনাথ লেখা থামাননি। বরং আরও বেশি সৃষ্টিশীল ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ-এর লেখাকে যদি তিন ভাগে ভাগ করে দেখা হয়, অপরিনত, পরিনত ও শেষ বয়সের লেখা, তবে সব চাইতে বেশি সৃজনশীল ছিলেন শেষ বয়সে।
আমরা ষাট বছর বয়স হতেই বুড়ো হয়ে যাই, যখন ভারতীয় গড় আয়ু ৬৮ বছর। অথচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় ভারতীয়দের গড় আয়ু ছিল ৩০ বছর। তিনি গড় আয়ুকে পিছনে ফেলে নিত্য নতুন উদ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন। লক্ষ্যে পৌঁছনোর তাগিদে শারীরিক অক্ষমতাকে পাত্তা না দিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরেছেন। আর ঝর্নাধারার মত সৃষ্টি করে চলেছেন।
কী শিখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ আমাদের ?
১) বয়স কোন বাধা নয়।
মূল বিষয় "লক্ষ্য স্থির করা।" রবীন্দ্রনাথ পাখির চোখে দেখেছিলেন বিশ্বভারতী। আমাদেরও তেমনি লক্ষ্য স্থির করতে হবে।
২) লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
বাধা আসবেই। বাসনা যদি তীব্র হয়, সমাধানের রাস্তা মিলবেই।
৩) ধৈর্য বা সহনশীলতা।
সফল না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্যশীল হতে হবে।
শেষ কথা।
বয়স হয়েছে ? তাতে কী ? আসুন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিই। তাঁর উদ্দিপনা, উদ্যম, কঠোর অনুশীলন, সহনশীলতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি। যতক্ষণ না সফল হই রবীন্দ্রনাথকে নিজের মধ্যে ধারণ করি। ষাট পেরিয়ে তিনি যদি নবীনতায় সজীব হতে পারেন আমরা কেন পারবোনা ?
Thikana
হে মহাজীবন
মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...
-
রোদ যখন উগ্র হয় মাটি ফাটে পুকুর শুকায়, গাছেরা দুর্বল হতে থাকে তবুও শিকড় খোঁজে অতল গভীরতা এই সত্য কোন সীমানা মানে না। প্রতিটি দেশে সংখ্য...
-
তোমার সামনে দাঁড়ালাম তুমি কি শিহরিত হলে আচম্বিতে! প্রতিক্ষার দীর্ঘদিন দীর্ঘশ্বাস অবসান হলো! সেই কবে কবে যেন অসংখ্য পায়ের ভিড়ে সংখ্যা...
-
( In Bengali and English) রাজুদা, কথা রাখলেন না কেন ? গৌতম আলী আচ্ছা রাজুদা, এটা কি আপনি ঠিক করলেন ? কথা দিয়ে কথা রাখলেন না ? এটা তো আপ...