শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১

হাসি দিয়ে মন জয়।


    হাসি দিয়ে মন জয়
#inspirationaltalk, #goutamaalee      

অনেক বছর আগে একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছিলাম, রাজস্থানের পটভূমিকায় তৈরি। ধনীদের ঘরে কেউ মারা গেলে মরাকান্না কাঁদতে ভাড়ায় লোক নিয়োগ হতো। ভাড়া করা মেয়েরা মৃত ব‍্যক্তির শোকে বুক চাপড়ে, চিৎকার করে কাঁদবে বলে।
          আসলে বলতে চাইছি বিপরীত কথা।আমার একদিদি কোনএক বিয়ে বাড়িতে গিয়ে বলল, এক কাজ করলে হয়- আমরা একটা কোম্পানি খুলবো যাদের কাজ হবে উৎসবে অতিথি আপ‍্যায়ন করা। প্রবেশ দ্বারে দাড়িয়ে যারা হাসিমুখে অতিথিদের আপ‍্যায়ন করবে। যেমন করে থাকে এয়ার হোস্টেসরা। আসলে সে রাতে আমাদের সাথে একটু হেসে কথা বলার মত একটা লোকও ছিল না। যদিও উৎসববাড়িতে প্রচুর লোক ছিল।সেজেগুজে পটের বাবু বিবিদের অভাব ছিল না। সবাই নিজেদের নিয়েই ব‍্যস্ত। কারো মুখে হাসি নেই, বড্ড নিরস লাগছিল আমাদের।
          আর এমন অবস্থায় যদি কোন কিশোর বা কিশোরী বা ঠাকুমা -মাসিমা একটু মিস্টি হেসে চোখের ঈশারা করে, যেন স্বর্গের হাতছানি! মূহুর্তে ভাললাগায় ভরে ওঠে উৎসববাড়ি।
          তাহলে মুখের কথা বা হাসি কি পোশাক ও অলংকারের থেকে কমদামি ? মোটেই না, অনেক অনেক বেশি দামি।

ব‍্যক্তিত্বের অন‍্যতম অলংকার হচ্ছে মুখের হাসি।

          হাসির ভাগ আছে। স্বাভাবিক হাসি আর কৃত্রিম হাসি। কৃত্রিম হাসি দিয়ে লোক ঠকানো যায়। স্বাভাবিক হাসি দিয়ে অনায়াসে মানুষের মন জয় করা যায়; যা হয় সুদূরপ্রসারী।

          একবার ছুটির দিনে দূরের এক আত্মীয় বাড়ি থেকে ট্রেনে ফিরছিলাম। ঘন্টাতিনেক ট্রেনে থাকতে হবে। খুব ভিড়। একঘন্টা পরে বসবার সীট পেলাম। প‍রের ষ্টেশনে একটা মেয়ে ভিড় ঠেলে ভিতরে এলো। রোগা, পাতলা, কালো অতি সাধারণ পোশাকের মেয়েটি। কাধে একটা ঝোলা ব‍্যাগ। দেখতে কোনমতেই তথাকথিত সুন্দর নয়। কিন্তু বোচা নাকের নীচে ঠোটে হাসি লাগানো। ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে আমার সামনে এসে দাড়ালো। মিস্টি হেসে মিহিস্বরে বলল - কাকু, এখানে দাঁড়াই ? ওর হাসিতে আশেপাশে বসা বা দাঁড়ানো সবার মুখে হাসি খেলে গেল। পাশের একজন বলল - কোথায় যাচ্ছ মা ?
উত্তর - ইউনিভার্সিটি, কোলকাতা।
তার সাথে কথা বলতে বলতে একবারও মনে হয়নি সে সুন্দর কি অসুন্দর। তার সহজ সরল আলাপচারিতায় সবাই খুশী। সহসা আমার পাশের বয়স্ক মানুষটা উঠে বলল, তুমি এখানে বসো। মেয়েটি বসলো না। তার প্রতিদিনই ভিড়ের ট্রেনে ঘন্টা দুয়েক পথ যেতে ও আসতে হয়। কিন্তু ওই পাতলা, রোগা শরীর নিয়ে ঠিকমত দাঁড়াতে পারছিলনা। অগত‍্যা আমি উঠে জোর করে ওকে বসালাম। সবে বসেছিলাম, আরো ঘন্টা দেড়েক দাড়াতে হবে। কিন্তু মেয়েটার হাসির দাম তো দিতেই হবে।

          আরেক ঘটনা। পড়া শেষ করে চাকরি পেলাম। সুন্দরবনের এক দ্বীপে পোস্টিং। একসময় ম‍্যানেজারের দায়িত্ব পেলাম। পায়া ভারি হলো। দুএকজনের পরামর্শে লোকজনের সাথে একটু ওজন রেখে কথা বলতাম। সামনের মানুষটিকে যাচাই করে মিশতাম। নিজের মধ্যে গম্ভীর মুখের একটা মানুষ তৈরী করলাম, যার অন‍্যদের থেকে দূরত্ব থাকে। একদিন গ্রামের পথে হাটছি। একটা দোকানের পাশ দিয়ে যেতে কিছু কথা ভেসে এলো -
" ম‍্যানেজারের কী নাক উঁচুরে বাবা, কারো সঙ্গে কথা বলতেই চায়না। সবসময় মুখ ভারি করে থাকে।"
          প্রশংসা না পেলেও খারাপ লাগল না। যেমন চেয়েছি তেমন হয়েছে। ঠিকই আছে।

          কিছুদিন পরে এক বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে একটা বই পেলাম। লেখক ডেল কার্নেগী। বিষয় কীভাবে বন্ধু হতে হয়। বইটা পড়ার পরে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেল। আমি বদলে গেলাম।
          কর্মক্ষেত্রে ফিরে এক বিকেলে সেই চায়ের দোকানে গেলাম। বসে একটা চা দিতে বললাম। যারা ছিল তাদের কাছে হাসিমুখে জানতে চাইলাম, কেউ খাবে কিনা। অনেকটা সময় কাটালাম তাদের সঙ্গে। সহজ সরল হাসি নিয়ে কথা বললাম। নাম জানলাম। পরিবারের খবর নিলাম। তারাও আমার সাথে হাসিমুখে কথা বলল।

          আমার গাম্ভীর্য সরিয়ে হাসিমুখের জন্য কী পেলাম ? গ্রামের মানুষের ভালোবাসা। কতটা ? কয়েক বছর পর সেখান থেকে বদলি হলাম। ঘাট থেকে ভটভটিতে (মেসিনচালিত নৌকা) উঠতে হবে। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। সেই ঝড়-জল-কাদার মধ্যে কয়েকশো মানুষ নদীর ঘাটে হাজির হল। কোথা থেকে ফুল জোগাড় করে মালা পরালো।আর কেউ কেউ হাউ-মাউ করে কাঁদলো।
          এই পড়ন্তবেলায় তাদের ভালবাসার কথা ভাবলে আমি অভিভূত হয়ে যাই।

ডেল কার্নেগীর কয়েকটি কথা নিয়ে ভাবুন :
   ১) হাসির মাধ্যমে আমরা অনেক অসম্ভবকে 
      সম্ভব করতে পারি।
   ২) সুখী হওয়ার একমাত্র পথ হলো, মনে মনে
      সুখভাব নিয়ে আসা। সত‍্যি সত্যি যদি     
      আপনার মনের ভেতর সুখ না থাকে, আচরনের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটতে দেবেন না।
      ৩) পৃথিবীতে প্রত‍্যেক মানুষ সুখ অনুসন্ধান করে চলেছে। সেটা লাভ করার একটি মাত্র পন্থা আছে। তা হলো , দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
      ৪) হাসিমুখের মানুষ সহজেই বিশ্বজয় করতে পারে।
      ৫) চীনা প্রবাদ : যে মানুষের মুখে হাসি নেই, তার কোন দোকান খোলা উচিত নয়।
      ৬) আসলে চিন্তার মধ্যেই মানুষের আসল ব‍্যক্তিত্ব লুকিয়ে থাকে।চিন্তাকে স্বচ্ছ, সুন্দর, শোভন করতে হবে। চরিত্রের মধ্যে সারল্য আনবেন। তাহলেই দক্ষতা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যেতে পারবেন। প্রতিটি ঐকান্তিক ইচ্ছার জন্ম হয় মানুষের কল্পনাশক্তির মধ্যে। কল্পনাশক্তিকে সুদুরপ্রসারী করতে না পারলে আমাদের চেষ্টা মাঝপথেই মুখথুবড়ে পড়বে। তখন আমারা আর সফল হতে পারবোনা।

হাসি হলো বন্ধুত্বের এক অমলিন চিহ্ন।।

   #goutamaalee, #inspirationaltalk       

নাম -এ কী কাম ?

নাম-এ কী কাম ?
#motivationaltalk, #goutamaalee

মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। নিজের নাম অন‍্যের মুখে শুনলে সবচেয়ে বেশী খুশি হয়। নিজের স্বপ্নপূরণে সেই নামের সহায়তা কেন আমরা নেবনা ?
          আমি তিনজন মানুষের কথা আলোচনা করবো যাদের সাথে আজকের বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা আছে।
          পশ্চিমবঙ্গে প্রথম যখন বামফ্রন্ট শাসনক্ষমতায় আসে তখন ফ্রন্টের মূখ‍্যব‍্যক্তিত্ব ছিলেন সিপিআই(এম) এর সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রমোদ দাশগুপ্ত। কথিত আছে অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন তিনি। তাঁর দলের গ্রামস্তরের সদস্যদের চিনতেন। শুধু চিনতেন না , নাম ধরে চিনতেন। নাম ধরে ডাকতেন। কর্মীদের কাছে এটা ছিল বিস্ময়কর। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতার এটা ছিল অনন্য চাবিকাঠি।
          দ্বিতীয়জন, শ্রী অজিত পাঁজা, কংগ্রেস দলের দীর্ঘদিনের নেতা। তাঁর সাংগঠনিক বিন‍্যাস ছিল অতুলনীয়। তাঁর এলাকার প্রতিটি ক্লাবের, প্রতিটি কর্মীর তথ্য রাখতেন । প্রত‍্যেকের খবর রাখতেন। তাঁর তথ্যভান্ডার এবং ব‍্যবহার তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল। নিজের এলাকায় অপরাজেয় ছিলেন তিনি।
          তৃতীয়জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সম্পর্কে বিশেষ পড়াশোনা আমার নেই। কিন্তু আমার ছোটসময়ের দেখা একটা ছোট ঘটনা, এখন মনেহয় তাঁর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পিছনে ঐ ঘটনার যোগ আছে। আমার মেঝদা ছাত্র সংগঠন করতেন। সেটা ১৯৬২-৬৩ সালের ঘটনা। দাদার সাথে একদিন নৌকায় চেপে আমাদের গ্রামের থেকে ৪/৫ মাইল দূরের উজানী নামক গ্রামের হাটখোলায় গেলাম। আমার তখন আঁচল ধরে চলা বয়স। একটা টাবুরিয়া নৌকা (ছাউনি দেয়া ছোট নৌকা)থেকে নামলেন শেখ সাহেব। ঢোলা পাজামা পাঞ্জাবি পরা। অনেকের সাথে হাত মেলালেন, কোলাকুলি করলেন। একসময় এগিয়ে এলেন আমাদের দিকে। দাদা ও দাদার বন্ধুর নাম ধরে সম্বোধন করলেন। করমর্দন করলেন। অজপাড়াগাঁয়ে এসে কর্মীদের সাথে এইযে নাম ধরে ডাকা, আমার মনে হয় তাঁর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার অন‍্যতম কারণ।

          মানুষ নিজেকে বড় ভালবাসে, নিজের নামকে বড় ভালবাসে। পৃথিবীর সমস্ত মানুষ নিজের নামকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। অপরের মুখে এই নাম উচ্চারিত হলে সবচাইতে বেশি খুশি হয়। যদি কেউ এই নামটা স্মরণে রাখে, তাহলে সেই মানুষটির উৎসাহ উদ্দীপনার সীমা থাকেনা।
          একবার আমাদের কর্মচারী ইউনিয়নের সম্মেলনে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আনবার কথা ভাবলো। সেইসময় কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান কলকাতায় এসেছিলেন। তিনি তরুণ নেতা এবং মন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে দেখা করে আমন্ত্রণ জানান হলো। তিনি বললেন, পোস্টার ছাপিয়েছেন ? আমরা বললাম, আপনি রাজি হলেই ছাপাবো।
তিনি অকপটে বললেন, আগে পোস্টার ছাপিয়ে আমাকে দেখান , আমার নাম আছে কিনা সেটা দেখে সম্মেলনে যাবার ব‍্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
বিষয়টি যুক্তিহীন কিন্তু মুখের উপর বলা যায়নি। কিন্তু একটা ব‍্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল, নিজের নাম ছাপা অক্ষরে দেখার মোহ তাঁর আছে আর পাঁচজন মানুষের মত। অন‍্যেরা এত খোলাখুলি প্রকাশ করে না আর তিনি রাখঢাক রাখেননি।
          আমরা সবাই জানি, কোন নতুন প্রকল্প শুরুর আগে শিলান‍্যাস হয়। আর পাথরে সবচেয়ে বড় অক্ষরে খোদাই করা থাকে যিনি সূচনা করেন তার নাম। এর অন্যতম কারণ সেই ব‍্যক্তিকে খুশি করা। কারণ তিনিও নিজের নাম দেখতেই বেশি ভালবাসেন।
          আমাদের দেশের ধর্মস্থানগুলি সাধারণত তৈরী হয় সাধারণ মানুষের টাকায়। সেসব স্থানে গেলেই পাথরে খোদাই করা নাম দেখতে পাওয়া যায়। অক্ষরের সাইজ নানারকম। ওটা টাকার উপর নির্ভর করে।যে যত বেশি টাকা দেয় তার নাম ততবেশি উজ্জ্বল।
          মানুষ তার নিজের নাম নিয়ে সত্যি সত্যি গর্ববোধ করে। সেই নাম চিরন্তন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
          আর আপনি যদি কোন কাজে সফল হতে চান, আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান, এই মানবিক প্রবৃত্তির  দিকগুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে। মনে রাখতে হবে, একজন খেলোয়াড় সোনার মেডেল পেতে চায় কারণ সে চায় তার নাম রেকর্ডবুকে স্বর্ণজলে লেখা থাকুক। তেমন একজন রাজনীতিক ,একজন সমাজসেবক, একজন দেশপ্রেমিক, এমনকি একজন সর্বত‍্যাগী সন‍্যাসীও চায় তার নামের প্রতি সুবিচার হোক।
         Success is a journey. জীবনে সফল হতে হলে মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায়  রাখতে হবে। একজন মানুষের কাছে তার নাম গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যথার্থ মানুষটির নাম ভুলে যাই। অতিরিক্ত ব‍্যস্ততার অজুহাত দেখাই। (হয়তো) নিজের অজান্তেই নিজেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। ফলে কি হয় ? বন্ধুত্ব দানা বাধতে পারেনা।

          একটা গল্প বলি। তখন আমি আমার প্রতিষ্ঠানের জেলার দায়িত্বে আছি। বছর দশেক আগের এক পূরনো শাখায় গেলাম। পথে একজনের সাথে দেখা হলো। আমি তার নামধরে জিজ্ঞেস করলাম, মহাদেববাবু কেমন আছেন ? ব‍্যবসা কেমন চলছে ? মেয়ে কেমন আছে ?
তিনি হতচকিত হলেন একজন অচেনা বাবুর (অজ গাঁয়ের মানুষ বাবু বলতে অভ‍্যস্ত ) কাছে নিজের নাম, মেয়ের কথা শুনে। একটু সামলে নিয়ে বললেন, বাবু এখন ব‍্যাংকে থাকবেন ?
বললাম, হ‍্যাঁ, থাকবো।
          ঘন্টা দুয়েক পরে মহাদেববাবু ব‍্যাংকে এলেন। গত বছর আটেক তিনি যে ঋণের একটা টাকাও জমা দেননি, কিছু টাকা জমা দিলেন। বাকিটা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। তারপর ঝোলা থেকে কিছু পেয়ারা বের করে আমাকে দিলেন।
          মহাদেববাবুর নামটা মনে।রাখার বিশেষ কারণ ছিল। তাঁর একটা ফুটফুটে মেয়ে ছিল। একদম কাবুলিওয়ালার মিনির মত।


          প্রতিটি মানুষের জীবনেই এটা গুরুত্বপূর্ণ। নাম মনে রাখা। বিশেষকরে আপনি যদি জনসংযোগকারী কোন পেশায় যুক্ত থাকেন, যেমন রাজনীতি, ব‍্যবসা, বীমা, ব‍্যাংক ; আপনার জন্যে নাম মনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
          মহান দার্শনিক ডেল কার্নেগীর উপদেশ : নিজেকে জনপ্রিয় করতে হলে মনে রাখতে হবে, যেকোন মানুষের কাছে তার নাম হলো সবথেকে ভালোবাসার বিষয়।

#goutamaalee, #inspiration

          

রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১

কবিতা : আমার স্বাধীনতা, বিপন্ন স্বাধীনতা

কবিতা: আমার স্বাধীনতা, বিপন্ন স্বাধীনতা।


বাবা বৃটিশ দম্ভের পতাকা দেখেছে
পতপত করে উড়তে,
সাতচল্লিশে দেখেছে সে পতাকার অবতরণ,
দেখেছে চাঁদ-তারা পতাকার উড্ডয়ন।

দশবছর পর পৃথিবীর জঞ্জাল হয়ে জন্ম,
চৌদ্দই আগষ্টের স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিয়েছি,
কৈশোরের চঞ্চলতায় শিরদাঁড়া সোজা করে
স‍্যালুট জানিয়েছি চাঁদ-তারা পতাকায়।

একুশের স্পর্ধা বুকে পুষে সত্তরের দামামায়
অবিচল থাকতে চেয়েছি,
আর তখনি চাঁদ-তারা পতাকার পতপত
শুনিয়েছে সাম্প্রদায়িকতার গান।
ভয় -ভয় -ভয়-
প্রাণকে সঙ্গী করে ছুটে এসেছি
সীমান্তের বেড়া টপকিয়ে
তেরঙ্গা পতাকার ছত্রছায়ায়।
সত্তরের চৌদ্দই আগষ্ট বিলীন,
স্বাধীন, সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ তেরঙ্গা পতাকা
আমার আশ্রয়,
আমার স্বাধীনতা পনেরই আগষ্ট।

নিশিডাক শুনতে পেলাম একাত্তরে,
আমার জন্মভূমি আমায় ডাকছে,
আয় খোকা আয়, মায়ের কোলে আয়
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার আঁচল পেতে বসে আছি তোর অপেক্ষায়।

বিজয়ের ঘোড়ায় চড়ে
ফিরে গেলাম মায়ের কোলে।
চৌদ্দই আগষ্ট নয়, পনেরই আগষ্ট নয় 
আমার স্বাধীনতা এবার পচিশে মার্চ,
সবুজ ধানের খেত আর লালসূর্যের নীচে
আমার পতাকার ধ্বনি সোনার বাংলা।

সময়ের সাথে সাথে আমার স্বাধীনতা
রঙ পাল্টায়; সবুজ খেত আর লালসূর্য 
ধূসর হতে থাকে ক্রমাগত,
অবিশ্রান্ত ক্ষমার তান্ডবে বিপন্ন হতে থাকে
আমার স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার শত্রুরা মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ায়
হুঙ্কার ছাড়ে - আল্লাহু আকবর,
চাঁপা স্বর ক্রমশ উচ্চকিত হতে থাকে-
মালাউন মালাউন মালাউনের বাচ্চা।

আবার ভয়, ভীরুতা আমার কন্ঠরোধ করে,
আবার সীমানা টপকাই
আবার তেরঙ্গা পতাকার নীচে দাড়াই
আবার আমার স্বাধীনতা শিরদাঁড়া সোজা করে
আবার স‍্যালুট জানায় তেরঙ্গা পতাকায়।

জীবনসায়াহ্নে এসে আমার স্বাধীনতা
অস্থির হয়ে ওঠে,
ঘরপোড়া গরুর মত সে দেখে
স্বাধীনতার শব্দ যাচ্ছে পাল্টে
জাতীয়তার ভাবনা যাচ্ছে পাল্টে
গণতন্ত্রের ভাষা যাচ্ছে পাল্টে
ধর্মনিরপেক্ষতা ছুটে যাচ্ছে মহাকালের খাদে
নিকষকাল গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসছে
স্বাধীনতার শত্রুরা,
নতুন ভাষায় শোনাচ্ছে স্বাধীনতার গান
সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে সুমধুর বাণী।

আমার স্বাধীনতা আজ হাড়িকাঠে
গুনছে বিসর্জনের বিশুদ্ধ উচ্চারণ।।


বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১

মানুষের অস্তিত্ব কতদিন ?

পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব আর কতদিন ?

আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী শাসন করছে কে ? মিথ‍্যে আর কল্পনার বেড়াজালে তৈরি তথাকথিত সৃষ্টিকর্তা । আর এই মুহূর্তে সেই সৃষ্টিকর্তাকে বুড়োআঙ্গুল দেখিয়ে পৃথিবী শাসন করছে এক অদৃশ্য ভাইরাস, করোনাভাইরাস। করোনা আবার প্রকৃতির প্রতিনিধি। তাহলে পৃথিবীর মূল শাসক প্রকৃতি আর পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান জীব মানুষ। আর সেই মানুষ তোয়াক্কা করছে না তার সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিকে।
          কিন্তু প্রকৃতি একটা কথা বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী কিছুই নয়। অর্থাৎ মানুষও নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে - মানুষ আর কতদিন এই পৃথিবীতে থাকবে ?
          এরআগে এই পৃথিবীকে দীর্ঘদিন শাসন করেছে ডাইনোসররা। তেরকোটি বছর ধরে পৃথিবীর সর্বেসর্বা হয়েও টিকে থাকতে পারেনি। প্রকৃতি টিকতে দেয়নি। আজ ডাইনোসর কেবলমাত্র ফসিল। মানুষ কি পারবে ডাইনোসরের মত তের কোটি বা তার থেকে বেশি সময় টিকে থাকতে ?

          বিজ্ঞানীরা বলছেন, তেরকোটি তো দূরঅস্ত,  তেরশো বছরও  টিকে থাকতে পারবেনা মানুষ ! বড়জোর আগামী ২০০ - ৩০০ বছর ! তারপরই মানুষ ফসিল হয়ে যাবে ।
          আপনার কি বিশ্বাস হচ্ছে ? আমি সন্দেহের দোলাচলে। উন্নতির চরম শিখরে বিরাজ করছে মানুষ। তার উপরে আছে মানুষের তৈরি মানুষের হত্তাকত্তা বিধাতা ! সৃষ্টি্কর্তা থাকতে তার সৃষ্টির লয় নিয়ে কথা বলার অধিকার কীকরে পায় বিজ্ঞানীরা ? 
          আমরা বরং দেখি কেন বিজ্ঞান বলছে মাত্র ২০০- ৩০০ বছরের কথা।

          করোনা অতিমারীর সময় একটা কথা খুব প্রচলিত। "ডবল"। আমরা ডাবল প্রমোশনের কথা জানি, ডবল মাইনের কথা জানি। এসব শুনে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। কিন্তু করোনার ডবল খুশির খবর নয়। আশংকার খরব। যদি শুনি ১০০ দিনে যা মৃত্যু হয়েছে পরবর্তী ৫০ দিনে হয়েছে তার ডবল, চিন্তা বাড়ে।সেটা যখন পরবর্তী ২০ দিনে বা ১০ দিনে ডবল হয়, মৃত্যুভয় আমাদের চেপে ধরে।
          প্রকৃতির দরবারে মানুষও আজ ডবলের খপ্পরে পড়েছে। ক্রমান্বয়ে সে "ডবল" করেই চলেছে। 
          প্রথমেই বলি, মানুষ পৃথিবীতে বড় একা। মানুষ মানে হোমো সেপিয়েন্স ( homo= Genus sapience =species) মানব গোষ্ঠীর একমাত্র জীবিত প্রজাতি। একসময় পৃথিবীতে ১৫/১৬ রকম মানুষের প্রজাতি  ছিল। যেমন Homo erectus, Homo antecessor, Homo ergaster, Homo floresiensis, Homo naledi, Homo neanderthalensis ইত‍্যাদি। সেইসব প্রজাতি এই পৃথিবীতে টিকতে না পেরে ফসিল হয়ে গেছে। আজকের সময়ে হাতি বা গন্ডারের মত মানুষ প্রজাতিও ধংসের খাদের কিনারে দাড়িয়ে আছে।

          বিজ্ঞানীরা কেন বলছেন মানুষ এক বিপন্ন প্রাণী ? মানুষ আজ বিলুপ্তির পথে ?

কারণ-১ : 
মানুষের মাথার আয়তন বৃদ্ধি :

          ৩কোটি বছর আগে মানুষের মাথার আয়তন ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ কিউবিক সেন্টিমিটার। যা বর্তমানের সদ‍্যজাত ও বানরের সমান।

২ কোটি ৯০ লক্ষ বছর পর মানুষের মাথার আয়তন দাড়াল ৬০০ থেকে ৮০০ কিউবিক সেন্টিমিটার। প্রথম ' ডবল ', সময় লাগল ২ কোটি ৯০ লক্ষ বছর। মাথার সাথে শরীরের আয়তনও ডবল হল। এ ডবল স্বাভাবিক।

৫ লক্ষ বছর পর মানুষের মাথার আয়তন হল ১৪০০ থেকে ১৭০০ কিউবিক সেন্টিমিটার। এ বৃদ্ধি ডবলেরও বেশি। আগের ২ কোটি ৯০ লক্ষ বছরের জায়গায় মাত্র ৫ লক্ষ বছর ! এ ডবল অস্বাভাবিক।

বিস্ময়কর বিষয় হল, শরীরের আর কোন অংশের কোন বৃদ্ধি ঘটলো না। আর এই বিস্ময়কর পরিবর্তন আর কোন প্রাণীর মাথার ক্ষেত্রে ঘটলো না, কেবলমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটলো। এই ঘটনা অস্বাভাবিক।

কারণ- ২
স্বতন্ত্র জীবনধারা।

পৃথিবীর প্রতিটা প্রাণীর নিজস্ব জীবনধারা আছে, যা সেই প্রাণীগোষ্ঠীর সবার জন্যই একরকম।কুকুর, বিড়াল, বানর, হাতি, ঘোড়া - যেকোন প্রাণী একটা নির্দিষ্ট কমন স্বত্বা নিয়ে চলে। কিন্তু মানুষের জীবনধারা আলাদা। প্রতিটি মানুষ প্রতিটি মানুষ থেকে স্বতন্ত্র।
          মানুষের মাথার যে বৃদ্ধি ঘটেছে তা কিন্তু মাথা তথা ব্রেনের সব অংশে ঘটেনি। ভাবনা-চিন্তা ও কথা বলার যে অংশ ( ফ্রন্টাল ও টেম্পোরাল লোব )।কেবলমাত্র সেই অংশেই ঘটেছে। তাই মানুষ অন‍্য জন্তুদের থেকে স্বতন্ত্র। বিষয়টি প্রাণী-প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ।

কারণ-৩
মস্তিষ্কের ক্ষমতার বৈষম্য।

আমরা সাধারণ ভাবে দেখি, মানুষের স্মৃতিশক্তি এক নয়, আলাদা আলাদা। আবার তাদের চিন্তাধারাও আলাদা আলাদা। বিভিন্ন মানুষের চিন্তাভাবনা বিভিন্ন রকমের। পাশাপাশি থাকলেও কেউ কারো চিন্তার হদিস পায়না। আর ভিন্ন চিন্তাধারা সাম‍্য প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় অন্তরায়।
          অথচ অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এই বৈষম্য নেই।

কারণ- ৪
সুদীর্ঘ শৈশবকাল।

মানুষের সাবালক হতে সময় লাগে ১৪/১৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে অনেক প্রাণী জীবনচক্র শেষ করে ফেলে। পৃথিবীর আর কোন প্রাণীর এত দীর্ঘ শৈশবকাল নেই। এটা এক চুড়ান্ত প্রকৃতি বিরুদ্ধ ব‍্যতিক্রমী ঘটনা। আর এই সুদীর্ঘ সময়ে ভিন্ন পরিবেশে , ভিন্ন শিক্ষায় মানুষ আরও বেশি বৈষম্যময় বা আলাদা হয়ে ওঠে।

কারণ-৫
জনসংখ্যার বৃদ্ধি।

১০ লক্ষ বছর আগে মানুষের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার । ২০২০ সালে সে সংখ্যা ৭শো কোটি ৮০ লক্ষ। হিসাব পরিস্কার হচ্ছে না তো ? একেবারে লিখিত তথ্যে আসি।

১৮৩০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি। আর এটা হতে সময় লেগেছে ২০লক্ষ বছর।
১৯৩০ সালে সে সংখ্যা পৌঁছায় ২০০ কোটিতে। সময় লেগেছে মাত্র ১০০ বছর।
১৯৬০ সালে জনসংখ্যা ৩০০ কোটি, সময় ৩০ বছর।
১৯৭৫ সালে জনসংখ্যা ৪০০ কোটি, সময় ১৫ বছর।
১৯৯০ সালে জনসংখ্যা ৫৩০ কোটি, সময় ১৫ বছর।
          অর্থাৎ ১৫ বছরে বৃদ্ধি ১৩০ কোটি আগে যা ছিল ১০০ কোটি। আর ২০২০ সালে সে সংখ্যা ৭শো ৮০ কোটি।

এই ডবল ডবল মানুষের দরকার ডবল ডবল বাসস্থান, ডবল ডবল খাদ‍্য। সেইজন্যে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ডবল ডবল অরণ্য আর প্রাণীকুল। বন জঙ্গল - জীববৈচিত্র্য না থাকলে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাবে, তাপমাত্রা বাড়বে, করোনার মত অসংখ্য ভাইরাস প্রতিশোধ নিতে হাজির হবে। তারফলে ডাইনোসরদের মত তেরকোটি সময় ছোট হতে হতে ৩০০ বছরে দাড়াবে।

 বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন আরো ভয়ের কথা। বলেছেন, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে যদি।মানুষকে সংরক্ষণ করা না যায় তবে আর সময় পাওয়া যাবে না। 

সম্প্রতি NASAর বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মাত্র ৮০ বছর পর পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না, ৪০০ বছর পর পৃথিবীতে কোন প্রাণ থাকবে না , মহাশশ্মানে পরিনত হবে।

          তবে কী হবে ? মানুষ তথা পৃথিবীকে রক্ষা করার আর কি কোন উপায় নেই ? আছে বৈকি । যদি বিজ্ঞানর যথাযথ প্রয়োগ হয়, পৃথিবীর মানুষ যদি একজোট হয়ে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলে, হয়তো ২/৩ শতাব্দীর সময়কে পিছিয়ে দেয়া যাবে। অথবা প্রকৃতি যদি নিজেই নির্বাচন করে, করোনার মত কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পৃথিবীর ৯০/৯৫% শতাংশ মানুষ যদি মরে যায়, যারা থাকবে তারা যদি বিজ্ঞানকে, প্রকৃতিকে সঙ্গী করে চলে, হয়তো আরো সময় পাবে মানুষ পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য।

কিন্তু সেটা কতদিন ?

মানুষ এক সৃষ্টিছাড়া জীব, পৃথিবীর কারো সাথেই তার মিল নেই।

মানুষের বুদ্ধি, প্রকৃতির এক অপসৃষ্টি। প্রকৃতির এই ত্রুটির জন‍্যে মানুষ নামক বিপন্ন প্রাণীকে অতিদ্রুত নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে এই পৃথিবী থেকে। মানুষের বুদ্ধিপ্রসূত কোন ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান তথা সৃষ্টিকর্তা মানুষের ফসিল হয়ে যাওয়া রোধ করতে পারবেনা।

সুতরাং মিথ্যে ধর্ম নিয়ে, অর্থনৈতিক দম্ভ নিয়ে, সাদা-কালো রং নিয়ে হানাহানি, ভেদাভেদ না করে সবাই মিলে এই সুন্দর পৃথিবীর যত্ন নিতে হবে। প্রকৃতির সৃষ্টি গাছপালা, জীবজন্তুকে ভালবাসতে হবে। যতদিন বাঁচা যায় সুন্দর ভাবে বাঁচতে সচেষ্ট হতে হবে।
###

সাম্প্রতিক খবর : Anandabazar Patrika : 30/09/2021 --" Earth will be alien Earth in 400 years."
Report : " United Nations Assessment of Nationally determined contribution."
Magazine : Global change Biology.
          সব দেশ যদি গ্রীনহাউস কমানোর প্রতিশ্রুতি পালন করেও, আগামী ৭৯ (ঊনআশি) বৎসরে ২.৭ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়বে। ফলে দাবানল, ঝড়, খরা, বন‍্যা, তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ হবে। ২১০০ সালে আর পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে না। বাস্তুতন্ত্রের আমূল পরিবর্তন হবে। সভ‍্যতার শেষদিন ঘনিয়ে আসবে। কৃষিজমি অফসলি হবে‌। জলস্তর বাড়বে। আবার নদীর অববাহিকা শুকিয়ে যাবে। তাপপ্রবাহের তীব্রতার জন্য ট্রপিক্যাল রিজিয়ন অবাসযোগ‍্য হবে।

মানুষের তৈরি ইতিহাস দেখার মানুষ থাকবে না।





          

শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১

মন্বন্তর, মহামারী এবং বাংলা।

মন্বন্তর, মহামারী এবং বাংলা।

          "ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়"। করোনাভাইরাসের বিশ্বব‍্যাপী তান্ডবের মাঝে আপনি কি সিঁদুরে মেঘ দেখতে পাচ্ছেন ? আমি ভাবছি আর শিউরে উঠছি।

          বাংলার মানুষ, বৃহত্তর বাংলার মানুষ, ঘর পোড়া গরুর মত দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর দেখেছে অনেকবার। শাসকদের অবিবেচনায়, উপেক্ষায় না খেয়ে শুকিয়ে শুকিয়ে মরেছে, পথেঘাটে জ‍্যান্ত লাশ হয়ে পড়ে থেকেছে দিনের পর দিন। অবশেষে সত‍্যিকারের লাশ হয়েছে। অন্তত দুইবার আক্ষরিক অর্থেই শ্মশান হয়েছে বঙ্গভূমি। আর সেই মৃত্যুমিছিলের ছবি আঁকা হয়েছে বাংলার শিল্প সাহিত্যে। #মন্বন্তর
          বাংলায় অন্তত দুইবার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়েছে যা বাংলাকে মহাশ্মশানে পরিনত করেছে। একটা হয়েছে ইংরেজদের ভারত শাসনের শুরুতে আরেকটি হয়েছে ভারত শাসনের শেষদিকে।

          বাংলা ১১৭৬ সন।ইংরেজ শাসনের শুরুর দিক। সেই সময়ের মন্বন্তরকে ছেয়াত্তরের মন্বন্তর বলা হয়। ঐতিহাসিক, গবেষকরা বলেন, এক কোটির উপর মানুষ মরেছে তখন যা জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশ। না, শাসক ইংরেজ কোন দায়িত্ব পালন করেনি। বরং ইচ্ছাকৃতভাবে এই গণহত্যার সহায়ক হয়েছে।
          তার আগে কি দুর্ভিক্ষ দেখা যায়নি ? হ‍্যাঁ হয়েছে। তবে দেশীয় রাজন‍্যবর্গ কমবেশি প্রজাদের পাশে থেকেছে। কিন্তু সাগরপারের বেনিয়া শাসক ছেয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় কেবল চোখ বন্ধ করেই কাটিয়েছে। বাংলা মহাশ্মশানে পরিনত হয়েছে।

          সর্বশেষ মন্বন্তর হয় ১৩৫০ সনে। ইতিমধ্যে বড় আকারের দুর্ভিক্ষ হয়েছে ১২বার, আকাল হয়েছে অন্তত ২০বার। প্রতিবারই পরিনতি মানুষের দলবেঁধে নাখেয়ে শুকিয়ে মরা।
          মন্বন্তর বা আকাল বা দুর্ভিক্ষের জন্য প্রতিবারই কিছু কারণ থাকে। বন‍্যা, ভূমিকম্প, ঘুর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, পঙ্গপালের ফসল নষ্ট, মহামারী, আর্থিক মন্দা, ইত্যাদি কোন না কোন কারণ বিদ‍্যমান।
#epidemic
          ১৩৫০-এর মন্বন্তরকে পঞ্চাশের মন্বন্তর বলা হয়। পঞ্চাশের মন্বন্তরে অনাবৃষ্টি ও কয়েকবছরের ফসলের কম উৎপাদন ছিল। কিন্তু সেসব মূল কারণ ছিল না। গবেষণায় যে সত‍্য প্রকাশ পেয়েছে, - বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ছিলেন মূল ভিলেন। আর ছিল এদেশের মধ‍্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের অমানবিক স্বার্থপরতা। সরকার দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছে, অবর্ণনীয় অত‍্যাচারে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছে, বিশ্বযুদ্ধের সেনাদের নাম করে প্রয়োজনের অনেক বেশি খাদ্য মজুদ করেছে। সেই সঙ্গে দেশীয় জমিদাররা অত‍্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় করেছে, মজুত করেছে আর দেদার ফূর্তি করেছে।
          ইংরেজ সরকার পরিবহন ব‍্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল করেছে যাতে খাদ‍্যশস‍্য সরবরাহ করা না যায়। তখন নৌকা আর গরুর গাড়ি ছিল মূল পরিবহন ব‍্যবস্থা। ইংরেজ সরকার নৌকা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং ভেঙ্গে ডুবিয়ে দিয়েছে, জ্বালিয়ে দিয়েছে গরুর গাড়ি। জাপানিদের বার্মা দখলের ফলে সেদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এদেশ থেকে বারবার আবেদন যাওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একটুও সাহায্য করেনি এদেশের ভূখা মানুষদের জন্য। উপরন্তু অষ্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা যখন নিজেদের জাহাজে করে খাদ্য দিতে চেয়েছে, চার্চিল অনুমতি দেয়নি।
          কত মানুষ মারা গেছে পঞ্চাশের মন্বন্তরে ? গবেষকরা বলছেন, ৩০ লক্ষের অধিক মানুষ শুধু না খেয়ে মারা গেছেন। গ্রামের মানুষ ছুটেছেন শহরের দিকে। ছুটতে ছুটতে চলা থেমে গেছে পথিমধ্যে অসংখ্য মানুষের। কেউ ভাত চায়নি, শুধু একটু ফ‍্যান চেয়েছেন। ফ‍্যান দাও, ফ‍্যান দাও করে এক অতিবিকৃত স্বরে ফ‍্যাস্ ফ‍্যাস্ করেছেন। না পেয়ে আস্তাকুঁড়ে খাবার খুজেঁছেন। মানুষ মানুষের মাংস খেয়েছে, বাঁচবার জন্যে মরা মানুষের মাংস খেয়েছেন।
          আর সভ‍্যতার নিকৃষ্টতম প্রাণী হিসাবে মধ‍্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত মানুষেরা দরজায় খিল দিয়ে , কখনোবা মরা মানুষের দেহের উপর দিয়ে ফিটনগাড়ি চড়ে সম্ভোগে মেতেছে।
          আজ, একবিংশ শতাব্দীতে আমরা ইথিওপিয়া, সোমালিয়ার দুর্ভিক্ষের ছবি দেখে আহা-উহু করি কিন্তু এই বাংলার ইতিহাস ঘাটতে ভয় পাই। কিন্তু সেই ইতিহাস আজ সজীব হয়ে আমাদের সামনে দাড়াতে চাইছে।তবে তা শুধু এই বাংলায় নয়, সারা পৃথিবী জুড়ে। আর এর পিছনের কারণও সেই উৎপাদনের অপ্রতুলতা, মহামারী।
          আমার জন্ম পঞ্চাশের মন্বন্তরের তের/চৌদ্দ বছর পরে। তাই সেই মন্বন্তর দেখিনি।কিন্তু আমার বাবা প্রায়ই চোখের জলে গল্প বলতেন। তবে তা পঞ্চাশের অনেক আগের। যে মন্বন্তর আমার আলোচনায় নেই। বাবা পাতের ভাত নষ্ট, সে একটা হলেও, সহ‍্য করতে পারতেন না। রেগে যেতেন আর নিজের বহুকথিত গল্পটা বলতেন।
          কোন এক দুর্ভিক্ষের সময় পরিবারে খাবার জুটতোনা। কচু ঘেচু খেয়েই থাকতে হতো। যদিওবা কখনো ভাত জুটতো সেটা পরিবারের একমাত্র পুত্রসন্তান ই পেত। বাবা বেঁচে গেছেন কিন্তু তাঁর এক দিদি বাঁচেননি। তাঁর দিদি একটু ভাতের জন্যে সবসময় কান্না করত। ভাত ভাত করতে করতেই ১৫/২০ দিনের পর সেই দিদি মারা যায়।

          আমি দেখেছি চুয়াত্তরের মন্বন্তর। এটা ঘটে ইংরেজী১৯৭৪ সালে সদ‍্য স্বাধীন বাংলাদেশে। নিন্দুকেরা বলে , এটা সদ‍্য তৈরি একটা দেশকে ভাতে মারার ব‍্যবস্থা, মানুষের তৈরি। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। বিশেষ করে চাল ও নুনের। প্রকৃতির রোষে মাঠঘাট ফেটে চৌচির। গরু ছাগল হাড়জিরজিরে। প্রথমে কচু, শাকপাতা খেয়ে জীবন ধারন। পরে সেসবও অমিল হয়ে যায়। রাতের অন্ধকারে মানুষেরা , বিশেষ করে মেয়েরা বউয়েরা চলে যেত কয়েক মাইল দূরের চান্দার বিলে। ঘেচু, শালুক কুড়িয়ে আনত। ফিরে আসত দিনের আলো ফুটবার আগেই। কারণটা মর্মে মর্মে অনুভব করেছি শরৎ সাহিত্যে। দিনের আলোয় বেরোবার যথেষ্ট পোশাক ছিল না মেয়েদের। গোদের উপর বিষফোঁড়া, দেখা দিল কলেরা। একজন একজন করে প্রিয়জন মরে যেতে লাগল। মুসলিমরা কবর দেয় ধর্মীয় নিয়মে। কিন্তু হিন্দুরাও কবর দিতে শুরু করল  গণহারে। কারণ জ্বালানির অভাব।
          আমার বয়স তখন১৪/১৫ বছর। স্কুলের লাইব্রেরী থেকে বই এনে প্রিয় সাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের বই গোগ্রাসে গিলছি। আর সেই দুর্ভিক্ষে শরৎ সাহিত্য প্রত‍্যক্ষ করেছি নিজের জীবনে। গোয়ালের গরুকে খাবার দেবার মত কিছু নেই, আমি নিজেই তখন গফুর হয়ে গেছি। খেলার সাথী মেয়েরা একসঙ্গে স্নান করতে নদীতে যায় না। ডাকতে গেলে বেড়ার আড়াল থেকে কথা বলে, সামনে আসে না। পরে বুঝেছি, শরীর ঢাকবার মত গামছা বা জামা তাদের ছিল না। দিনের শেষে একটু আটার জাউ (আটা গোলা গরম জল) জুটতো কি জুটতো না। কলেরা ছড়ানোর বিভৎসতা দেখে মনে হত শরৎচন্দ্র বর্ণিত প্লেগ। তরতাজা মানুষ কেমন বমি করতে করতে, হাগতে হাগতে মরে যেতে লাগল।
          তবে পঞ্চাশের মন্বন্তরের মত নাখেয়ে শুকিয়ে মরতে দেখিনি। যেটুকু দেখেছি, সে বিভিশিখা মনের মধ্যে দাগকেটে বসে আছে।
          পঞ্চাশের মন্বন্তরে সজাগ ছিলেন বাংলার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরা। কবিতা লিখেছেন, গল্প লিখেছেন, উপন‍্যাস লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন - আর তাঁদের জন্যেই পরবর্তী প্রজন্মের মানুষেরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে সেই ভয়াবহতা।
          ১৩৫০ সনের গল্প নিয়ে একটা সংকলন সম্পাদন করেছেন বেলাল চৌধুরী (প্রকাশক :পুনশ্চ)। ভূমিকায় লিখেছেন -
     " দুর্ভিক্ষের পঞ্চাশ বছর পর আমার দুর্ভিক্ষের গল্প কেন, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে চোখের সামনে আবার সেই কঙ্কালের মিছিল ফিরিয়ে আনা, শবে শবে আকীর্ণ রাজপথের দৃশ‍্যাবলী তুলে ধরা, আবার সেই 'ফ‍্যান দাও ' আর্তনাদে আকাশ ভরিয়ে তোলা, এ কি দুঃখবিলাস নয় ?"
          আবার লিখেছেন, -
          " তেরোশ পঞ্চাশ বাঙালি নামক জাতির আত্মকথারই একটি অবিস্মরণীয় অধ‍্যায়। দুঃখের, অপমানের, লজ্জার। সেই বিষাদ সিন্ধুর কথা ভুলে গেলে ক্ষুধা এবং মহামারীতে মৃত ত্রিশ লক্ষ নারী পুরুষ শিশুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়।" 

          তসলিমা নাসরিন সম্পাদনা করেছেন " ফ‍্যান দাও", সেই সময়ের কবিদের কবিতা নিয়ে সংকলন। তিনি ভূমিকায় উদৃত করেছেন শ্রীপন্থের লেখা - 
     " স্বদেশের মানুষ ভিক্ষাপাত্র হাতে কঙ্কাল হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায় / চাল নয়, ভাত নয়, তারা শুধু ফ‍্যান চায়।"
          লিখেছেন - "....ঘূর্ণিঝড়, বন‍্যা এবং ধানের মড়কের ফলে অনেক ভূমিহীন শ্রমিক বেকার। দুর্ভিক্ষে না খেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রাণ দিয়েছিল এই ভূমিহীন শ্রমিক, মাঝিমাল্লা, জেলেরা এবং যাঁরা ধান ভেঙে পেট চালাতেন, তাঁরা। কলকাতার পথে প্রধানত তাঁরাই কঙ্কালে কঙ্কালে লিখে রেখে গিয়েছিলেন সেদিন মানুষের উদাসীনতা আর হৃদয়হীনতার এক কলঙ্ক কাহিনী।... সব যানবাহন তখন যুদ্ধ কবলিত। জাপানিরা পূর্ববঙ্গে হামলা দিচ্ছে শোনামাত্র সেখানকার চারটি জেলা থেকে ধান চাল সরিয়ে নেয়া হয়। নৌকা দখল করা হয়। কয়েক হাজার নৌকো ভেঙ্গে ফেলা হয়।সৈন্যদের জন্যে কিছু রেখে ডুবিয়ে দেয়া হয় বেশকিছু। একদিকে এসব বিভ্রাট, অন‍্যদিকে মজুত উদ্ধার এবং খাদ‍্য সরবরাহ নিয়ে প্রহসন। কলকাতায় মৃত্যু মিছিল। ... গ্রাম থেকে শহরে শুরু হয়েছিল ছায়া-মানুষের মিছিল। মহানগরী কলকাতায় ফুটপাতে তাঁদের কঙ্কালেই রচিত হচ্ছিল সেই ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পর আরেক মন্বন্তরের হৃদয়বিদারক বিষাদ সিন্ধু।"

         " অমর্ত্য সেন হিসেব করে দেখিয়েছেন, গোটা দুর্ভিক্ষে মানুষ মরেছে প্রায় ত্রিশ লক্ষ। তখন খবরের কাগজে বেরত, বাবা তার মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছে বারো আনা কী একটাকায়, স্বামী তার স্ত্রী, কন‍্যাকে ৫/১০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।পেটে ভাত নেই, তার উপর জাপানি বোমা, বনে আগুন লাগলে বুনো জন্তু যেমন পালায়, ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা পালায়, তেমন করে মানুষ পালিয়েছে একবার গ্রাম থেকে শহরে, আরেকবার শহর থেকে গ্রামে।"

         সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন, -
       " তেরশো পঞ্চাশ কেবল ইতিহাসের একটা সাল নয়, নিজেই একটা স্বতন্ত্র ইতিহাস। সে ইতিহাস একটা দেশ শ্মশান হয়ে যাওয়ার ইতিহাস, ঘর ভাঙা গ্রাম ছাড়ার ইতিহাস, দোরে দোরে কান্না আর পথে পথে মৃত্যুর ইতিহাস, আমাদের অক্ষমতার ইতিহাস।"

          কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন -
    "তে্রোশো পঞ্চাশ সালে কার্তিকের ভোর,
     সূর্যালোকিত সব স্থান
     যদিও লঙ্গরখানা
     যদিও শ্মশান..."

          কবি অমিয় চক্রবর্তী লিখেছেন -
               "ঝিম ঝিম ধরে     শিরায় মৃত্যু
     শরীর শুকোয়, কন্ঠ শুকোয় : অন্ন নাই।
                ভাঙ্গা ভান্ডারে মাটি নিরন্ন।
       .....................................................
                 অন্ন দাও -
                  প্রাণের ক্ষুধার একটু অন্ন দাও।"

          কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র -
     " নগরের পথে পথে দেখেছ অদ্ভূত এক জীব
      ঠিক মানুষের মতো
      কিংবা ঠিক নয়,
      যেন তার ব‍্যঙ্গ-চিত্র বিদ্রুপ - বিকৃত।
      তবু তারা নড়েচড়ে, কথা বলে, আর
      জঞ্জালের মত জমে রাস্তায় রাস্তায়,
      উচ্ছিষ্টের আস্তাকুঁড়ে বসে বসে ধোঁকে,
      -আর ফ‍্যান চায়।"

তিনি বর্ণনা করেছেন -
          "ঘরপোড়া গরু তাই ভয় হচ্ছে। লকডাউনের আগে যে চাল কিনেছি৫০টাকা আজ তা ৮০টাকা। যে আলু কিনেছি ১২টাকায় ইতিমধ্যে তা ২৬টাকা। কিন্তু এখনো যোগান আছে, যদি যোগান বন্ধ হয়ে যায় ? তাই ভাবতে হবে , কী করণীয় । বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ‍্যবিত্ত মানুষদের। দুর্ভিক্ষের মৃত্যু বিত্তবানদের ভালবাসে না, সর্বহারাদের সব চাইতে বেশি ভালবাসে।


          খবর বলছে, বিশ্বজুড়ে মন্দা আসছে। উড়োজাহাজ উড়ছে না। জলে ভাসছে না জাহাজ। কলকারখানা চলছে না। মানুষের কাজ থাকবে না। সাধারণ মানুষের কাছে টাকা থাকবে না। মানুষের কেনার সামর্থ্ থাকবে না। প্রকৃতির রোষে এক অনুবীক্ষনিক অনুকোষ , ভাইরাস, মহাবিশ্বে পাড়ি দেয়া সভ‍্যতার শিখরে ওঠা আত্মম্ভরী মানুষকে ঠুটো জগন্নাথ করে দিয়েছে। মানুষ এবং মানুষের তৈরি ঈশ্বর আজ দিশেহারা। সভ‍্যতার সংকটকাল।
          মহামারীর পর মহামন্বন্তর। অতীতের মত এবারেও কী মরবে লক্ষ, কোটি মানুষ , সাধারণ মানুষ ! ধনীরা সর্বদা ছাড় পায়, এবারও পাবে। 
          সিঁদুরে মেঘ জমছে। মন্বন্তরের সিঁদুরে মেঘ। করোনাভাইরাস আর লকডাউন এই দুই শব্দের কী অসীম শক্তি , বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছে ! একজন আক্রমনাত্মক আরেকজন রক্ষানাত্মক।
          আমরা ধর্মঘটে অভ‍্যস্ত কিন্তু লকডাউনে নই। অথচ দুইয়ের মধ্যে কত মিল। দোকানপাট বন্ধ, গাড়িঘোড়া বন্ধ, স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত সব বন্ধ। কিন্তু  ধর্মঘটে একদিন রাজ‍্য বা রাষ্ট্র বন্ধ থাকলে পরের দিন কাগজগুলিতে দেশের অর্থনীতির  সর্বনাশা ক্ষতির চিত্র তুলে ধরা হয়, হায় হায় রব ওঠে। অথচ করোনাকালে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস বিশ্বজুড়ে লকডাউন হয়েই চলেছে, সেই ক্ষতির চিত্র কেউ তুলে ধরছেনা। আমার মনে হয়, অন্ধকারের ব‍্যপ্তি যেমন হিসাবে আনা যায় না তেমনি লকডাউনে ক্ষতির ব‍্যপ্তিও সাধারণের বোধগম্য হিসাবে আনতে পারছে না। কল্পনাও যেন খেই হারিয়ে ফেলছে।
          পৃথিবী যদি পৌঁছে যায় একশো বছর আগের মন্দায়, এক অন্তহীন অন্ধকার সময়ে, যেখানে অর্থনীতি দিশেহারা। কী হতে পারে মন্দায় ? উৎপাদনহীনতা, চাকরি হীনতা, খাদ‍্যের অভাব। যোগানের অভাব। যার অন্য নাম দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর।
          আর দুর্ভিক্ষের নাম শুনলেই বাঙ্গালীর ঘর পোড়া গরুর মত অবস্থা। কারণ বাংলা দেখেছে ১১৭৬-এর দুর্ভিক্ষ, যেখানে বৃহত্তর বাংলার তিনভাগের একভাগ মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। বাংলা বৃটিশদের শাসনে দুর্ভিক্ষ দেখেছে  কমপক্ষে ১২বার, আকাল দেখেছে অন্তত ২০বার। আর প্রতিবারই লক্ষ লক্ষ প্রান হারিয়েছে। শেষ মহাদুর্ভিক্ষ হয়েছে ১৩৫০ সনে। যখন মানুষ, লক্ষ লক্ষ মানুষ, একটু ফ‍্যানের জন্যে হাহাকার করেছে; মধ‍্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও সরকার দরজার খিল খোলেনি সে আর্তস্বরে। আস্তাকুঁড়ে খাবার খুজেঁছে, কিছু না পেয়ে মানুষে মরামানুষের মাংস খেয়েছে। আর মরেছে। সেই দুর্ভিক্ষে ৩০লক্ষ বাঙ্গালী না খেয়ে মারা গেছে।

          কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র বলেছেন, "দুর্ভিক্ষের মৃত্যু বিত্তবানদের ভালবাসে না, সর্বহারাদের সবচাইতে বেশি ভালবাসে।" অতীতের বাংলায় বিত্তবান মানেই উচ্চবর্ণের মানুষ আর সর্বহারা মানেই মূলনিবাসী তথা দলিত শ্রেণীর মানুষ। মৃত্যু তাদের বড়বেশি ভালবাসে।

          সরকার আছে। সরকার তখনও ছিল। কিন্তু গরীব মানুষের নিয়তি সিঁদুরে মেঘের সাথে একসূত্রে বাঁধা।
###
#goutamaalee
    

হে মহাজীবন

মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...