নাম-এ কী কাম ?
#motivationaltalk, #goutamaalee
মানুষ নিজেকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। নিজের নাম অন্যের মুখে শুনলে সবচেয়ে বেশী খুশি হয়। নিজের স্বপ্নপূরণে সেই নামের সহায়তা কেন আমরা নেবনা ?
আমি তিনজন মানুষের কথা আলোচনা করবো যাদের সাথে আজকের বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা আছে।
পশ্চিমবঙ্গে প্রথম যখন বামফ্রন্ট শাসনক্ষমতায় আসে তখন ফ্রন্টের মূখ্যব্যক্তিত্ব ছিলেন সিপিআই(এম) এর সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রমোদ দাশগুপ্ত। কথিত আছে অসাধারণ মেধার অধিকারী ছিলেন তিনি। তাঁর দলের গ্রামস্তরের সদস্যদের চিনতেন। শুধু চিনতেন না , নাম ধরে চিনতেন। নাম ধরে ডাকতেন। কর্মীদের কাছে এটা ছিল বিস্ময়কর। তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতার এটা ছিল অনন্য চাবিকাঠি।
দ্বিতীয়জন, শ্রী অজিত পাঁজা, কংগ্রেস দলের দীর্ঘদিনের নেতা। তাঁর সাংগঠনিক বিন্যাস ছিল অতুলনীয়। তাঁর এলাকার প্রতিটি ক্লাবের, প্রতিটি কর্মীর তথ্য রাখতেন । প্রত্যেকের খবর রাখতেন। তাঁর তথ্যভান্ডার এবং ব্যবহার তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল। নিজের এলাকায় অপরাজেয় ছিলেন তিনি।
তৃতীয়জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সম্পর্কে বিশেষ পড়াশোনা আমার নেই। কিন্তু আমার ছোটসময়ের দেখা একটা ছোট ঘটনা, এখন মনেহয় তাঁর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পিছনে ঐ ঘটনার যোগ আছে। আমার মেঝদা ছাত্র সংগঠন করতেন। সেটা ১৯৬২-৬৩ সালের ঘটনা। দাদার সাথে একদিন নৌকায় চেপে আমাদের গ্রামের থেকে ৪/৫ মাইল দূরের উজানী নামক গ্রামের হাটখোলায় গেলাম। আমার তখন আঁচল ধরে চলা বয়স। একটা টাবুরিয়া নৌকা (ছাউনি দেয়া ছোট নৌকা)থেকে নামলেন শেখ সাহেব। ঢোলা পাজামা পাঞ্জাবি পরা। অনেকের সাথে হাত মেলালেন, কোলাকুলি করলেন। একসময় এগিয়ে এলেন আমাদের দিকে। দাদা ও দাদার বন্ধুর নাম ধরে সম্বোধন করলেন। করমর্দন করলেন। অজপাড়াগাঁয়ে এসে কর্মীদের সাথে এইযে নাম ধরে ডাকা, আমার মনে হয় তাঁর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।
মানুষ নিজেকে বড় ভালবাসে, নিজের নামকে বড় ভালবাসে। পৃথিবীর সমস্ত মানুষ নিজের নামকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে। অপরের মুখে এই নাম উচ্চারিত হলে সবচাইতে বেশি খুশি হয়। যদি কেউ এই নামটা স্মরণে রাখে, তাহলে সেই মানুষটির উৎসাহ উদ্দীপনার সীমা থাকেনা।
একবার আমাদের কর্মচারী ইউনিয়নের সম্মেলনে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আনবার কথা ভাবলো। সেইসময় কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান কলকাতায় এসেছিলেন। তিনি তরুণ নেতা এবং মন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে দেখা করে আমন্ত্রণ জানান হলো। তিনি বললেন, পোস্টার ছাপিয়েছেন ? আমরা বললাম, আপনি রাজি হলেই ছাপাবো।
তিনি অকপটে বললেন, আগে পোস্টার ছাপিয়ে আমাকে দেখান , আমার নাম আছে কিনা সেটা দেখে সম্মেলনে যাবার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
বিষয়টি যুক্তিহীন কিন্তু মুখের উপর বলা যায়নি। কিন্তু একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল, নিজের নাম ছাপা অক্ষরে দেখার মোহ তাঁর আছে আর পাঁচজন মানুষের মত। অন্যেরা এত খোলাখুলি প্রকাশ করে না আর তিনি রাখঢাক রাখেননি।
আমরা সবাই জানি, কোন নতুন প্রকল্প শুরুর আগে শিলান্যাস হয়। আর পাথরে সবচেয়ে বড় অক্ষরে খোদাই করা থাকে যিনি সূচনা করেন তার নাম। এর অন্যতম কারণ সেই ব্যক্তিকে খুশি করা। কারণ তিনিও নিজের নাম দেখতেই বেশি ভালবাসেন।
আমাদের দেশের ধর্মস্থানগুলি সাধারণত তৈরী হয় সাধারণ মানুষের টাকায়। সেসব স্থানে গেলেই পাথরে খোদাই করা নাম দেখতে পাওয়া যায়। অক্ষরের সাইজ নানারকম। ওটা টাকার উপর নির্ভর করে।যে যত বেশি টাকা দেয় তার নাম ততবেশি উজ্জ্বল।
মানুষ তার নিজের নাম নিয়ে সত্যি সত্যি গর্ববোধ করে। সেই নাম চিরন্তন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
আর আপনি যদি কোন কাজে সফল হতে চান, আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান, এই মানবিক প্রবৃত্তির দিকগুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে। মনে রাখতে হবে, একজন খেলোয়াড় সোনার মেডেল পেতে চায় কারণ সে চায় তার নাম রেকর্ডবুকে স্বর্ণজলে লেখা থাকুক। তেমন একজন রাজনীতিক ,একজন সমাজসেবক, একজন দেশপ্রেমিক, এমনকি একজন সর্বত্যাগী সন্যাসীও চায় তার নামের প্রতি সুবিচার হোক।
Success is a journey. জীবনে সফল হতে হলে মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। একজন মানুষের কাছে তার নাম গুরুত্বপূর্ণ বলে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যথার্থ মানুষটির নাম ভুলে যাই। অতিরিক্ত ব্যস্ততার অজুহাত দেখাই। (হয়তো) নিজের অজান্তেই নিজেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। ফলে কি হয় ? বন্ধুত্ব দানা বাধতে পারেনা।
একটা গল্প বলি। তখন আমি আমার প্রতিষ্ঠানের জেলার দায়িত্বে আছি। বছর দশেক আগের এক পূরনো শাখায় গেলাম। পথে একজনের সাথে দেখা হলো। আমি তার নামধরে জিজ্ঞেস করলাম, মহাদেববাবু কেমন আছেন ? ব্যবসা কেমন চলছে ? মেয়ে কেমন আছে ?
তিনি হতচকিত হলেন একজন অচেনা বাবুর (অজ গাঁয়ের মানুষ বাবু বলতে অভ্যস্ত ) কাছে নিজের নাম, মেয়ের কথা শুনে। একটু সামলে নিয়ে বললেন, বাবু এখন ব্যাংকে থাকবেন ?
বললাম, হ্যাঁ, থাকবো।
ঘন্টা দুয়েক পরে মহাদেববাবু ব্যাংকে এলেন। গত বছর আটেক তিনি যে ঋণের একটা টাকাও জমা দেননি, কিছু টাকা জমা দিলেন। বাকিটা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন। তারপর ঝোলা থেকে কিছু পেয়ারা বের করে আমাকে দিলেন।
মহাদেববাবুর নামটা মনে।রাখার বিশেষ কারণ ছিল। তাঁর একটা ফুটফুটে মেয়ে ছিল। একদম কাবুলিওয়ালার মিনির মত।
প্রতিটি মানুষের জীবনেই এটা গুরুত্বপূর্ণ। নাম মনে রাখা। বিশেষকরে আপনি যদি জনসংযোগকারী কোন পেশায় যুক্ত থাকেন, যেমন রাজনীতি, ব্যবসা, বীমা, ব্যাংক ; আপনার জন্যে নাম মনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মহান দার্শনিক ডেল কার্নেগীর উপদেশ : নিজেকে জনপ্রিয় করতে হলে মনে রাখতে হবে, যেকোন মানুষের কাছে তার নাম হলো সবথেকে ভালোবাসার বিষয়।
#goutamaalee, #inspiration
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন