শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১

হাসি দিয়ে মন জয়।


    হাসি দিয়ে মন জয়
#inspirationaltalk, #goutamaalee      

অনেক বছর আগে একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছিলাম, রাজস্থানের পটভূমিকায় তৈরি। ধনীদের ঘরে কেউ মারা গেলে মরাকান্না কাঁদতে ভাড়ায় লোক নিয়োগ হতো। ভাড়া করা মেয়েরা মৃত ব‍্যক্তির শোকে বুক চাপড়ে, চিৎকার করে কাঁদবে বলে।
          আসলে বলতে চাইছি বিপরীত কথা।আমার একদিদি কোনএক বিয়ে বাড়িতে গিয়ে বলল, এক কাজ করলে হয়- আমরা একটা কোম্পানি খুলবো যাদের কাজ হবে উৎসবে অতিথি আপ‍্যায়ন করা। প্রবেশ দ্বারে দাড়িয়ে যারা হাসিমুখে অতিথিদের আপ‍্যায়ন করবে। যেমন করে থাকে এয়ার হোস্টেসরা। আসলে সে রাতে আমাদের সাথে একটু হেসে কথা বলার মত একটা লোকও ছিল না। যদিও উৎসববাড়িতে প্রচুর লোক ছিল।সেজেগুজে পটের বাবু বিবিদের অভাব ছিল না। সবাই নিজেদের নিয়েই ব‍্যস্ত। কারো মুখে হাসি নেই, বড্ড নিরস লাগছিল আমাদের।
          আর এমন অবস্থায় যদি কোন কিশোর বা কিশোরী বা ঠাকুমা -মাসিমা একটু মিস্টি হেসে চোখের ঈশারা করে, যেন স্বর্গের হাতছানি! মূহুর্তে ভাললাগায় ভরে ওঠে উৎসববাড়ি।
          তাহলে মুখের কথা বা হাসি কি পোশাক ও অলংকারের থেকে কমদামি ? মোটেই না, অনেক অনেক বেশি দামি।

ব‍্যক্তিত্বের অন‍্যতম অলংকার হচ্ছে মুখের হাসি।

          হাসির ভাগ আছে। স্বাভাবিক হাসি আর কৃত্রিম হাসি। কৃত্রিম হাসি দিয়ে লোক ঠকানো যায়। স্বাভাবিক হাসি দিয়ে অনায়াসে মানুষের মন জয় করা যায়; যা হয় সুদূরপ্রসারী।

          একবার ছুটির দিনে দূরের এক আত্মীয় বাড়ি থেকে ট্রেনে ফিরছিলাম। ঘন্টাতিনেক ট্রেনে থাকতে হবে। খুব ভিড়। একঘন্টা পরে বসবার সীট পেলাম। প‍রের ষ্টেশনে একটা মেয়ে ভিড় ঠেলে ভিতরে এলো। রোগা, পাতলা, কালো অতি সাধারণ পোশাকের মেয়েটি। কাধে একটা ঝোলা ব‍্যাগ। দেখতে কোনমতেই তথাকথিত সুন্দর নয়। কিন্তু বোচা নাকের নীচে ঠোটে হাসি লাগানো। ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে আমার সামনে এসে দাড়ালো। মিস্টি হেসে মিহিস্বরে বলল - কাকু, এখানে দাঁড়াই ? ওর হাসিতে আশেপাশে বসা বা দাঁড়ানো সবার মুখে হাসি খেলে গেল। পাশের একজন বলল - কোথায় যাচ্ছ মা ?
উত্তর - ইউনিভার্সিটি, কোলকাতা।
তার সাথে কথা বলতে বলতে একবারও মনে হয়নি সে সুন্দর কি অসুন্দর। তার সহজ সরল আলাপচারিতায় সবাই খুশী। সহসা আমার পাশের বয়স্ক মানুষটা উঠে বলল, তুমি এখানে বসো। মেয়েটি বসলো না। তার প্রতিদিনই ভিড়ের ট্রেনে ঘন্টা দুয়েক পথ যেতে ও আসতে হয়। কিন্তু ওই পাতলা, রোগা শরীর নিয়ে ঠিকমত দাঁড়াতে পারছিলনা। অগত‍্যা আমি উঠে জোর করে ওকে বসালাম। সবে বসেছিলাম, আরো ঘন্টা দেড়েক দাড়াতে হবে। কিন্তু মেয়েটার হাসির দাম তো দিতেই হবে।

          আরেক ঘটনা। পড়া শেষ করে চাকরি পেলাম। সুন্দরবনের এক দ্বীপে পোস্টিং। একসময় ম‍্যানেজারের দায়িত্ব পেলাম। পায়া ভারি হলো। দুএকজনের পরামর্শে লোকজনের সাথে একটু ওজন রেখে কথা বলতাম। সামনের মানুষটিকে যাচাই করে মিশতাম। নিজের মধ্যে গম্ভীর মুখের একটা মানুষ তৈরী করলাম, যার অন‍্যদের থেকে দূরত্ব থাকে। একদিন গ্রামের পথে হাটছি। একটা দোকানের পাশ দিয়ে যেতে কিছু কথা ভেসে এলো -
" ম‍্যানেজারের কী নাক উঁচুরে বাবা, কারো সঙ্গে কথা বলতেই চায়না। সবসময় মুখ ভারি করে থাকে।"
          প্রশংসা না পেলেও খারাপ লাগল না। যেমন চেয়েছি তেমন হয়েছে। ঠিকই আছে।

          কিছুদিন পরে এক বন্ধুর বাড়ি বেড়াতে গিয়ে একটা বই পেলাম। লেখক ডেল কার্নেগী। বিষয় কীভাবে বন্ধু হতে হয়। বইটা পড়ার পরে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেল। আমি বদলে গেলাম।
          কর্মক্ষেত্রে ফিরে এক বিকেলে সেই চায়ের দোকানে গেলাম। বসে একটা চা দিতে বললাম। যারা ছিল তাদের কাছে হাসিমুখে জানতে চাইলাম, কেউ খাবে কিনা। অনেকটা সময় কাটালাম তাদের সঙ্গে। সহজ সরল হাসি নিয়ে কথা বললাম। নাম জানলাম। পরিবারের খবর নিলাম। তারাও আমার সাথে হাসিমুখে কথা বলল।

          আমার গাম্ভীর্য সরিয়ে হাসিমুখের জন্য কী পেলাম ? গ্রামের মানুষের ভালোবাসা। কতটা ? কয়েক বছর পর সেখান থেকে বদলি হলাম। ঘাট থেকে ভটভটিতে (মেসিনচালিত নৌকা) উঠতে হবে। প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। সেই ঝড়-জল-কাদার মধ্যে কয়েকশো মানুষ নদীর ঘাটে হাজির হল। কোথা থেকে ফুল জোগাড় করে মালা পরালো।আর কেউ কেউ হাউ-মাউ করে কাঁদলো।
          এই পড়ন্তবেলায় তাদের ভালবাসার কথা ভাবলে আমি অভিভূত হয়ে যাই।

ডেল কার্নেগীর কয়েকটি কথা নিয়ে ভাবুন :
   ১) হাসির মাধ্যমে আমরা অনেক অসম্ভবকে 
      সম্ভব করতে পারি।
   ২) সুখী হওয়ার একমাত্র পথ হলো, মনে মনে
      সুখভাব নিয়ে আসা। সত‍্যি সত্যি যদি     
      আপনার মনের ভেতর সুখ না থাকে, আচরনের মধ্যে তার প্রতিফলন ঘটতে দেবেন না।
      ৩) পৃথিবীতে প্রত‍্যেক মানুষ সুখ অনুসন্ধান করে চলেছে। সেটা লাভ করার একটি মাত্র পন্থা আছে। তা হলো , দুশ্চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা।
      ৪) হাসিমুখের মানুষ সহজেই বিশ্বজয় করতে পারে।
      ৫) চীনা প্রবাদ : যে মানুষের মুখে হাসি নেই, তার কোন দোকান খোলা উচিত নয়।
      ৬) আসলে চিন্তার মধ্যেই মানুষের আসল ব‍্যক্তিত্ব লুকিয়ে থাকে।চিন্তাকে স্বচ্ছ, সুন্দর, শোভন করতে হবে। চরিত্রের মধ্যে সারল্য আনবেন। তাহলেই দক্ষতা সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যেতে পারবেন। প্রতিটি ঐকান্তিক ইচ্ছার জন্ম হয় মানুষের কল্পনাশক্তির মধ্যে। কল্পনাশক্তিকে সুদুরপ্রসারী করতে না পারলে আমাদের চেষ্টা মাঝপথেই মুখথুবড়ে পড়বে। তখন আমারা আর সফল হতে পারবোনা।

হাসি হলো বন্ধুত্বের এক অমলিন চিহ্ন।।

   #goutamaalee, #inspirationaltalk       

1 টি মন্তব্য:

হে মহাজীবন

মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...