পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব আর কতদিন ?
আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী শাসন করছে কে ? মিথ্যে আর কল্পনার বেড়াজালে তৈরি তথাকথিত সৃষ্টিকর্তা । আর এই মুহূর্তে সেই সৃষ্টিকর্তাকে বুড়োআঙ্গুল দেখিয়ে পৃথিবী শাসন করছে এক অদৃশ্য ভাইরাস, করোনাভাইরাস। করোনা আবার প্রকৃতির প্রতিনিধি। তাহলে পৃথিবীর মূল শাসক প্রকৃতি আর পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমান জীব মানুষ। আর সেই মানুষ তোয়াক্কা করছে না তার সৃষ্টিকর্তা প্রকৃতিকে।
কিন্তু প্রকৃতি একটা কথা বুঝিয়ে দিচ্ছে, এই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী কিছুই নয়। অর্থাৎ মানুষও নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে - মানুষ আর কতদিন এই পৃথিবীতে থাকবে ?
এরআগে এই পৃথিবীকে দীর্ঘদিন শাসন করেছে ডাইনোসররা। তেরকোটি বছর ধরে পৃথিবীর সর্বেসর্বা হয়েও টিকে থাকতে পারেনি। প্রকৃতি টিকতে দেয়নি। আজ ডাইনোসর কেবলমাত্র ফসিল। মানুষ কি পারবে ডাইনোসরের মত তের কোটি বা তার থেকে বেশি সময় টিকে থাকতে ?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তেরকোটি তো দূরঅস্ত, তেরশো বছরও টিকে থাকতে পারবেনা মানুষ ! বড়জোর আগামী ২০০ - ৩০০ বছর ! তারপরই মানুষ ফসিল হয়ে যাবে ।
আপনার কি বিশ্বাস হচ্ছে ? আমি সন্দেহের দোলাচলে। উন্নতির চরম শিখরে বিরাজ করছে মানুষ। তার উপরে আছে মানুষের তৈরি মানুষের হত্তাকত্তা বিধাতা ! সৃষ্টি্কর্তা থাকতে তার সৃষ্টির লয় নিয়ে কথা বলার অধিকার কীকরে পায় বিজ্ঞানীরা ?
আমরা বরং দেখি কেন বিজ্ঞান বলছে মাত্র ২০০- ৩০০ বছরের কথা।
করোনা অতিমারীর সময় একটা কথা খুব প্রচলিত। "ডবল"। আমরা ডাবল প্রমোশনের কথা জানি, ডবল মাইনের কথা জানি। এসব শুনে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। কিন্তু করোনার ডবল খুশির খবর নয়। আশংকার খরব। যদি শুনি ১০০ দিনে যা মৃত্যু হয়েছে পরবর্তী ৫০ দিনে হয়েছে তার ডবল, চিন্তা বাড়ে।সেটা যখন পরবর্তী ২০ দিনে বা ১০ দিনে ডবল হয়, মৃত্যুভয় আমাদের চেপে ধরে।
প্রকৃতির দরবারে মানুষও আজ ডবলের খপ্পরে পড়েছে। ক্রমান্বয়ে সে "ডবল" করেই চলেছে।
প্রথমেই বলি, মানুষ পৃথিবীতে বড় একা। মানুষ মানে হোমো সেপিয়েন্স ( homo= Genus sapience =species) মানব গোষ্ঠীর একমাত্র জীবিত প্রজাতি। একসময় পৃথিবীতে ১৫/১৬ রকম মানুষের প্রজাতি ছিল। যেমন Homo erectus, Homo antecessor, Homo ergaster, Homo floresiensis, Homo naledi, Homo neanderthalensis ইত্যাদি। সেইসব প্রজাতি এই পৃথিবীতে টিকতে না পেরে ফসিল হয়ে গেছে। আজকের সময়ে হাতি বা গন্ডারের মত মানুষ প্রজাতিও ধংসের খাদের কিনারে দাড়িয়ে আছে।
বিজ্ঞানীরা কেন বলছেন মানুষ এক বিপন্ন প্রাণী ? মানুষ আজ বিলুপ্তির পথে ?
কারণ-১ :
মানুষের মাথার আয়তন বৃদ্ধি :
৩কোটি বছর আগে মানুষের মাথার আয়তন ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ কিউবিক সেন্টিমিটার। যা বর্তমানের সদ্যজাত ও বানরের সমান।
২ কোটি ৯০ লক্ষ বছর পর মানুষের মাথার আয়তন দাড়াল ৬০০ থেকে ৮০০ কিউবিক সেন্টিমিটার। প্রথম ' ডবল ', সময় লাগল ২ কোটি ৯০ লক্ষ বছর। মাথার সাথে শরীরের আয়তনও ডবল হল। এ ডবল স্বাভাবিক।
৫ লক্ষ বছর পর মানুষের মাথার আয়তন হল ১৪০০ থেকে ১৭০০ কিউবিক সেন্টিমিটার। এ বৃদ্ধি ডবলেরও বেশি। আগের ২ কোটি ৯০ লক্ষ বছরের জায়গায় মাত্র ৫ লক্ষ বছর ! এ ডবল অস্বাভাবিক।
বিস্ময়কর বিষয় হল, শরীরের আর কোন অংশের কোন বৃদ্ধি ঘটলো না। আর এই বিস্ময়কর পরিবর্তন আর কোন প্রাণীর মাথার ক্ষেত্রে ঘটলো না, কেবলমাত্র মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটলো। এই ঘটনা অস্বাভাবিক।
কারণ- ২
স্বতন্ত্র জীবনধারা।
পৃথিবীর প্রতিটা প্রাণীর নিজস্ব জীবনধারা আছে, যা সেই প্রাণীগোষ্ঠীর সবার জন্যই একরকম।কুকুর, বিড়াল, বানর, হাতি, ঘোড়া - যেকোন প্রাণী একটা নির্দিষ্ট কমন স্বত্বা নিয়ে চলে। কিন্তু মানুষের জীবনধারা আলাদা। প্রতিটি মানুষ প্রতিটি মানুষ থেকে স্বতন্ত্র।
মানুষের মাথার যে বৃদ্ধি ঘটেছে তা কিন্তু মাথা তথা ব্রেনের সব অংশে ঘটেনি। ভাবনা-চিন্তা ও কথা বলার যে অংশ ( ফ্রন্টাল ও টেম্পোরাল লোব )।কেবলমাত্র সেই অংশেই ঘটেছে। তাই মানুষ অন্য জন্তুদের থেকে স্বতন্ত্র। বিষয়টি প্রাণী-প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ।
কারণ-৩
মস্তিষ্কের ক্ষমতার বৈষম্য।
আমরা সাধারণ ভাবে দেখি, মানুষের স্মৃতিশক্তি এক নয়, আলাদা আলাদা। আবার তাদের চিন্তাধারাও আলাদা আলাদা। বিভিন্ন মানুষের চিন্তাভাবনা বিভিন্ন রকমের। পাশাপাশি থাকলেও কেউ কারো চিন্তার হদিস পায়না। আর ভিন্ন চিন্তাধারা সাম্য প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় অন্তরায়।
অথচ অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এই বৈষম্য নেই।
কারণ- ৪
সুদীর্ঘ শৈশবকাল।
মানুষের সাবালক হতে সময় লাগে ১৪/১৫ বছর। এই সময়ের মধ্যে অনেক প্রাণী জীবনচক্র শেষ করে ফেলে। পৃথিবীর আর কোন প্রাণীর এত দীর্ঘ শৈশবকাল নেই। এটা এক চুড়ান্ত প্রকৃতি বিরুদ্ধ ব্যতিক্রমী ঘটনা। আর এই সুদীর্ঘ সময়ে ভিন্ন পরিবেশে , ভিন্ন শিক্ষায় মানুষ আরও বেশি বৈষম্যময় বা আলাদা হয়ে ওঠে।
কারণ-৫
জনসংখ্যার বৃদ্ধি।
১০ লক্ষ বছর আগে মানুষের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার । ২০২০ সালে সে সংখ্যা ৭শো কোটি ৮০ লক্ষ। হিসাব পরিস্কার হচ্ছে না তো ? একেবারে লিখিত তথ্যে আসি।
১৮৩০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি। আর এটা হতে সময় লেগেছে ২০লক্ষ বছর।
১৯৩০ সালে সে সংখ্যা পৌঁছায় ২০০ কোটিতে। সময় লেগেছে মাত্র ১০০ বছর।
১৯৬০ সালে জনসংখ্যা ৩০০ কোটি, সময় ৩০ বছর।
১৯৭৫ সালে জনসংখ্যা ৪০০ কোটি, সময় ১৫ বছর।
১৯৯০ সালে জনসংখ্যা ৫৩০ কোটি, সময় ১৫ বছর।
অর্থাৎ ১৫ বছরে বৃদ্ধি ১৩০ কোটি আগে যা ছিল ১০০ কোটি। আর ২০২০ সালে সে সংখ্যা ৭শো ৮০ কোটি।
এই ডবল ডবল মানুষের দরকার ডবল ডবল বাসস্থান, ডবল ডবল খাদ্য। সেইজন্যে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ডবল ডবল অরণ্য আর প্রাণীকুল। বন জঙ্গল - জীববৈচিত্র্য না থাকলে প্রকৃতি ভারসাম্য হারাবে, তাপমাত্রা বাড়বে, করোনার মত অসংখ্য ভাইরাস প্রতিশোধ নিতে হাজির হবে। তারফলে ডাইনোসরদের মত তেরকোটি সময় ছোট হতে হতে ৩০০ বছরে দাড়াবে।
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন আরো ভয়ের কথা। বলেছেন, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে যদি।মানুষকে সংরক্ষণ করা না যায় তবে আর সময় পাওয়া যাবে না।
সম্প্রতি NASAর বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মাত্র ৮০ বছর পর পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না, ৪০০ বছর পর পৃথিবীতে কোন প্রাণ থাকবে না , মহাশশ্মানে পরিনত হবে।
তবে কী হবে ? মানুষ তথা পৃথিবীকে রক্ষা করার আর কি কোন উপায় নেই ? আছে বৈকি । যদি বিজ্ঞানর যথাযথ প্রয়োগ হয়, পৃথিবীর মানুষ যদি একজোট হয়ে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলে, হয়তো ২/৩ শতাব্দীর সময়কে পিছিয়ে দেয়া যাবে। অথবা প্রকৃতি যদি নিজেই নির্বাচন করে, করোনার মত কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পৃথিবীর ৯০/৯৫% শতাংশ মানুষ যদি মরে যায়, যারা থাকবে তারা যদি বিজ্ঞানকে, প্রকৃতিকে সঙ্গী করে চলে, হয়তো আরো সময় পাবে মানুষ পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য।
কিন্তু সেটা কতদিন ?
মানুষ এক সৃষ্টিছাড়া জীব, পৃথিবীর কারো সাথেই তার মিল নেই।
মানুষের বুদ্ধি, প্রকৃতির এক অপসৃষ্টি। প্রকৃতির এই ত্রুটির জন্যে মানুষ নামক বিপন্ন প্রাণীকে অতিদ্রুত নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে এই পৃথিবী থেকে। মানুষের বুদ্ধিপ্রসূত কোন ঈশ্বর, আল্লাহ, ভগবান তথা সৃষ্টিকর্তা মানুষের ফসিল হয়ে যাওয়া রোধ করতে পারবেনা।
সুতরাং মিথ্যে ধর্ম নিয়ে, অর্থনৈতিক দম্ভ নিয়ে, সাদা-কালো রং নিয়ে হানাহানি, ভেদাভেদ না করে সবাই মিলে এই সুন্দর পৃথিবীর যত্ন নিতে হবে। প্রকৃতির সৃষ্টি গাছপালা, জীবজন্তুকে ভালবাসতে হবে। যতদিন বাঁচা যায় সুন্দর ভাবে বাঁচতে সচেষ্ট হতে হবে।
###
সাম্প্রতিক খবর : Anandabazar Patrika : 30/09/2021 --" Earth will be alien Earth in 400 years."
Report : " United Nations Assessment of Nationally determined contribution."
Magazine : Global change Biology.
সব দেশ যদি গ্রীনহাউস কমানোর প্রতিশ্রুতি পালন করেও, আগামী ৭৯ (ঊনআশি) বৎসরে ২.৭ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়বে। ফলে দাবানল, ঝড়, খরা, বন্যা, তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ হবে। ২১০০ সালে আর পৃথিবী বাসযোগ্য থাকবে না। বাস্তুতন্ত্রের আমূল পরিবর্তন হবে। সভ্যতার শেষদিন ঘনিয়ে আসবে। কৃষিজমি অফসলি হবে। জলস্তর বাড়বে। আবার নদীর অববাহিকা শুকিয়ে যাবে। তাপপ্রবাহের তীব্রতার জন্য ট্রপিক্যাল রিজিয়ন অবাসযোগ্য হবে।
মানুষের তৈরি ইতিহাস দেখার মানুষ থাকবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন