কবিতা: আমার স্বাধীনতা, বিপন্ন স্বাধীনতা।
বাবা বৃটিশ দম্ভের পতাকা দেখেছে
পতপত করে উড়তে,
সাতচল্লিশে দেখেছে সে পতাকার অবতরণ,
দেখেছে চাঁদ-তারা পতাকার উড্ডয়ন।
দশবছর পর পৃথিবীর জঞ্জাল হয়ে জন্ম,
চৌদ্দই আগষ্টের স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিয়েছি,
কৈশোরের চঞ্চলতায় শিরদাঁড়া সোজা করে
স্যালুট জানিয়েছি চাঁদ-তারা পতাকায়।
একুশের স্পর্ধা বুকে পুষে সত্তরের দামামায়
অবিচল থাকতে চেয়েছি,
আর তখনি চাঁদ-তারা পতাকার পতপত
শুনিয়েছে সাম্প্রদায়িকতার গান।
ভয় -ভয় -ভয়-
প্রাণকে সঙ্গী করে ছুটে এসেছি
সীমান্তের বেড়া টপকিয়ে
তেরঙ্গা পতাকার ছত্রছায়ায়।
সত্তরের চৌদ্দই আগষ্ট বিলীন,
স্বাধীন, সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ তেরঙ্গা পতাকা
আমার আশ্রয়,
আমার স্বাধীনতা পনেরই আগষ্ট।
নিশিডাক শুনতে পেলাম একাত্তরে,
আমার জন্মভূমি আমায় ডাকছে,
আয় খোকা আয়, মায়ের কোলে আয়
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার আঁচল পেতে বসে আছি তোর অপেক্ষায়।
বিজয়ের ঘোড়ায় চড়ে
ফিরে গেলাম মায়ের কোলে।
চৌদ্দই আগষ্ট নয়, পনেরই আগষ্ট নয়
আমার স্বাধীনতা এবার পচিশে মার্চ,
সবুজ ধানের খেত আর লালসূর্যের নীচে
আমার পতাকার ধ্বনি সোনার বাংলা।
সময়ের সাথে সাথে আমার স্বাধীনতা
রঙ পাল্টায়; সবুজ খেত আর লালসূর্য
ধূসর হতে থাকে ক্রমাগত,
অবিশ্রান্ত ক্ষমার তান্ডবে বিপন্ন হতে থাকে
আমার স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার শত্রুরা মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়ায়
হুঙ্কার ছাড়ে - আল্লাহু আকবর,
চাঁপা স্বর ক্রমশ উচ্চকিত হতে থাকে-
মালাউন মালাউন মালাউনের বাচ্চা।
আবার ভয়, ভীরুতা আমার কন্ঠরোধ করে,
আবার সীমানা টপকাই
আবার তেরঙ্গা পতাকার নীচে দাড়াই
আবার আমার স্বাধীনতা শিরদাঁড়া সোজা করে
আবার স্যালুট জানায় তেরঙ্গা পতাকায়।
জীবনসায়াহ্নে এসে আমার স্বাধীনতা
অস্থির হয়ে ওঠে,
ঘরপোড়া গরুর মত সে দেখে
স্বাধীনতার শব্দ যাচ্ছে পাল্টে
জাতীয়তার ভাবনা যাচ্ছে পাল্টে
গণতন্ত্রের ভাষা যাচ্ছে পাল্টে
ধর্মনিরপেক্ষতা ছুটে যাচ্ছে মহাকালের খাদে
নিকষকাল গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসছে
স্বাধীনতার শত্রুরা,
নতুন ভাষায় শোনাচ্ছে স্বাধীনতার গান
সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে সুমধুর বাণী।
আমার স্বাধীনতা আজ হাড়িকাঠে
গুনছে বিসর্জনের বিশুদ্ধ উচ্চারণ।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন