Lifestyle of a refugee is always disaster. One of my hoby is writing. Sometime I write short stories and poems in Bengali. Most of the writings are reflection of refugee life. I welcome you to my writing world. Please inscribe a comment, if possible. Thank you. Writing blog, writing blog for money, writing blog on instagram, writing blog posts, writing blog site, writing blog job, blogger, blogger platform, best free blogger site, ব্লগার, বাংলা ব্লগ, গল্প, কবিতা, গল্প ও কবিতা, #goutamaalee .
সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫
পঞ্চাশ বছর পর
50 bochhor por..
পঞ্চাশ বছর পর একজন মানুষকে দেখতে গেলাম, কয়েকজন মানুষ দেখলাম। সেদিনের ফুটফুটে পরীর মত মেয়েটি এখন বুড়ি হয়ে গেছে, সেদিনের প্রানচঞ্চল অষ্টাদশী এখন চোখে ঝাপসা দেখে, কানে শোনেনা, কোমর বেঁকে গেছে। স্মৃতি চড়ায় গভীরতাহীন। হাতড়ে হাতড়ে যখন তল পায় তখন চোখের কোনে জল।
শহর কলকাতা থেকে কতটুকু পথ? সাকুল্যে সময় লাগলো আড়াই ঘন্টা- অথচ এই পথ পেরোতে কেটে গেল পঞ্চাশ বছর! সব দায় কী নাগরিক জীবনের ?
অবসর জীবনে কল্পনার জগত যখন ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে তখন মন উতল হলো পরেশকে দেখার জন্য। বাল্য কৈশোরের খেলার সাথী। থাকে নদিয়া জেলার বগুলায়। পরশুর হিসাব মেলেনা তাই কাল যাব ভাবলাম। পরের দিন চেপে বসলাম গেদে লোকালে।
দিন বারটায় পৌঁছে গেলাম বগুলা। কিন্তু কোথায় থাকে? কোন গ্রামে ? মনে করতে পারছি না। এক বন্ধুকে ফোন করে পেলামনা। আরেকজন জানে না। আরেকজনকে বলেও না পেয়ে এক পরিচিতের বাড়ির দিকে হাঁটলাম। ঠা ঠা রোদ্দুরে মাইলদেড়েক হেঁটে গ্রামের নাম জানতে পারলাম। আবার খানিক হেঁটে অটো রিকশা। আমার গন্তব্য সাহাপুর।
আমাদের বাড়ির দক্ষিণ প্রান্তে ঘর ছিল কানাইদার। পাড়ার একমাত্র দর্জি। ডাক নাম কেনাই। আমার মত কালো। কিন্তু বৌদি ছিল টুকটুকে ফর্সা। সব সময় হাসি মুখী। বিয়ের বেশ কিছু বছরে বাচ্চা হয়নি বলে নানা জনে নানা কথা বলত। তাতে বৌদির মুখের হাসি পাল্টায়নি। আমার আড্ডার এক প্রিয় স্থান ছিল দাদা বৌদির ঘর। আমার সাথে একটা মিষ্টি সম্পর্ক ছিল বাপের বাড়ির দিক থেকে - আমার নাতনী। কিন্তু এত ছোট ছিলাম যে ওই সম্পর্ক দানা বাঁধেনি।
পঞ্চাশ বছর পর সেই সোনামুখ নেই, তামাটে হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে দুই ছেলের মা হয়েছে, ঠাকুরমা হয়েছে। দাদা নেই। আগে তুমি বলতো এখন তুই বলে। সব হারালেও হাসি হারায়নি। বয়সে যেন পাথর বেঁধে আছে।
পান চিবোতে চিবোতে হাসি ঝরিয়ে বলল - গান শুনবি ?
- গান গাও ? শোনাও তবে।
- দাড়া, হারমোনিয়াম নিয়ে আসি।
আমার সময়ের অভাব। বললাম - না না, খালি গলায়
গান করো।
কিন্তু তিনি তো খালি গলায় গাইবেন না। অবশেষে বললাম - থাক, পরের বারে এসে শুনবো।
পরের বার ? সে কি আর হবে ?
পঞ্চাশ বছরে আরেক পরিবর্তন, ' আপনি ' ছেড়ে অবলীলায় ' তুমি ' বললাম। বয়স ছেলেমি ত্যাগ করলো আপন খেয়ালে। তবে যথাযোগ্য মর্যাদায়। এই ত্রুটির কথা সবিনয়ে জানালাম বুলবুলি বৌদিকে। তাঁর হাসির ঝর্ণায় সব গ্লানি ধুয়ে গেল।
এবার পাশের বাড়ি, পরেশের বাড়ি। ঘুরপথের সময় বাঁচাতে দেয়াল টপকালাম। মনে হলো বুড়োত্ব নিম্নগামী।
শৈশব ও কৈশোরের সাথী। শুধু কৈশোর বলা পূর্ণতা পায় না, কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে পৌঁছে আমাদের ছাড়াছাড়ি। পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে যে আমার সামনে এসে দাঁড়াল - না চেনার আবরণ জমে গেছে তার চেহারায়। সেই গাট্টা গোট্টা পরেশ হারিয়ে এক বিধ্বস্ত ক্লান্ত পরেশকে পেলাম। কর্মজীবন কেটেছে আরব দুনিয়ায় নির্মাণ কার্যে। স্ত্রী মারা গেছে। বৌমা হাল ধরেছে সংসারের। আমার পরিচয় দিতে গিয়ে ঠোট কাপলো কয়েকবার। ফিসফিসিয়ে বললো - কত কথা, কত কথা....।
আসলে দীর্ঘ পনের ষোল বছরের কথা দু এক কথায় বলা যায় না। সেও বলতে পারেনি আমিও বলতে পারবোনা। যদি কখনো বলার অবকাশ আসে, বলবো হারিয়ে যাওয়া শীতল পাটির গল্প।
ছোট ছোট কথায় বেলা হেলে গেল। বুলবুলি বৌদি খেতে বলল, খেলাম না। পরেশ খেতে বলল, খেলাম না। আমার টার্গেট - নিয়তি। নিয়তির হাতের খাবার খাব। কে এই নিয়তি?
পাঁচ বছরের এক মেয়ের সাথে বিয়ে হোল জিতেনের। ছোট্ট বৌমাকে কোলে করে, পালা করে পাঁচ/ছয় মাইল রাস্তা হেঁটে নিয়ে এলাম বাড়িতে । নিয়তি সেই বৌমা। জিতেন গ্রাম সম্পর্কে ভাইপো, পরেশের দাদা। সে স্কুলের ছাত্র। তার মা মারা গেছে অনেকগুলো ছেলে মেয়ে রেখে। সংসারের হাল সামলাতে গৃহিণী দরকার। তাই দাদা নিজে বিয়ে না করে ভাইপোকে বিয়ে দিয়ে বৌমা আনলো সঙ্গে বৌমার বিধবা মাকে।
সেও অনেক কাহিনী।
এবার আর পরের বাড়ি নয়, অনেকগুলি বাড়ি পেরিয়ে খুঁজে পেলাম জিতেনের বাড়ি। ষাট ছুঁই ছুঁই যে মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম জিতেনের কথা, সে ই নিয়তি। নিয়তির ফেরে নিয়তি এখন সমঝদার গিন্নি। কেউ কাউকেই চিনতে পারতাম না বলে না দিলে।
পঞ্চাশ বছর আগে নিয়তি আমার কাছে পড়তে আসতো সকালে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। সন্তান সম্ভবা। বয়স বারো বছরের আশেপাশে।
সে সন্তান বাঁচেনি। কিন্তু ঘটতে পারত উলটো। তাহলে আমাদের এই দেখা কাল্পনিক হয়ে যেত। বেঁচে থেকে তিনটে সন্তানের মা হয়েছে।
জিতেন আমার বড় কিন্তু ভাইপো বলে তুমি সম্বোধন করতাম। খুব ভাল ছাত্র ছিল। প্রথম পাঁচজন ছাত্রের মধ্যে একজন। কমার্স গ্রাজুয়েট। কিন্তু কোন কাজে লাগেনি। দেশভাগ তাঁকে উপড়ে ফেলেছে। সে পড়া কোন কাজে লাগেনি নতুন দেশে। অতএব সেন্টারিং বা কৃষি কাজের মত শ্রম নির্ভর জীবন।
জিতেন - নিয়তির দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলের বউ সন্তান ছেড়ে বাপের বাড়ি। এখন নাতি নির্ভর সংসার।
নিয়তিকে আমি ছোট থেকেই মা সম্বোধন করতাম। এসেই বলেছি - মায়ের হাতের খাবার খাব, সে যা ই হোক। সে খুব খুশি। যখন শুনলো তার হাতের রান্না খাবো বলে আর কোথাও খাইনি, সে খুশি উপচে পড়লো।
মোটা চালের ঠান্ডা ভাত, বেগুন ভাজা, ডাল। চেটে পুটে মহানন্দে খেলাম। মনে হলো - কত যুগ পরে গ্রামের বাড়িতে মাটির দাওয়ায় বসে মায়ের দেয়া খাবার খাচ্ছি। নস্টালজিয়া...।
কথা বাড়ে বেলা গড়ায়। ফিরতে হবে বগুলা বইমেলা হয়ে। কিন্তু আরেক বাড়ি যে না গেলেই নয় । সে আমার বৃন্দাবনের সহচরী। সে এক নতুন ভূবন । কত কথা কত হাসি কত ঠাট্টা আমাদের সে বৃন্দাবনের ।তিনি ছিলেন লাজবতী , কথা নয় শুধু লজ্জায় আনত হয়ে ড্যাবডেবিয়ে তাকানো । তার সাথেই দেখা না করলে এ যাত্রা পূর্ণতা পাবেনা।
পা চালালাম। কতটা পথ জানিনা । পাকা রাস্তা । দুধারে গাছ গাছালি, বাড়ি ঘর । কিন্তু মনের মধ্যে পাকা রাস্তা নেই, উঠানের পর উঠান- আমি হেঁটেই চলেছি অনন্তকাল । পঞ্চাশ বছর পরেও সেকি তেমনই আছে? সে কি ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে আমাকে চিনতে পারবে ? সে কি আমাকে জড়িয়ে ধরে অভিমান ভরে বলবে- তোমার আসতে এতো দেরী হলো কেন ?
হেম পিসির ছেলে অসিত আর পেম পিসির মেয়ে প্রীতি । এই প্রীতির সাথেই আমার পিরিতি। হেম ও পেম দুই বোন। আসলে তারা আমার পিসি নয়, ভাইঝি। বয়সে বড় তাই সন্মানের সাথেই পিসি ডাকি সাথে তুই বা তুমি নয় - আপনি বলে সম্বোধন করি। তাদের ছেলে ও মেয়ের নাম অসিত ও প্রীতি । আর এদের দৌলতে স্কুল বয়সেই আমি দাদু হয়ে গেছি। এই পদমর্যাদায় তখন আমার ধারে কাছে কেউ ছিল না। তখন আমি কলির হিরো।
পাকা রাস্তা ছেড়ে কা৺চা রাস্তা, তারপর আমবাগান বাঁশবাগানের পাশ দিয়ে হাজির হলাম পেম পিসির উঠোনে।
পেম পিসি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। কোমরে বাক ধরেছে। মাথা ভর্তি জট । মোটা হয়েছেন। চোখে কম দেখেন । কানে আরো কম শোনেন।
পিসির দুই মেয়ে দুই ছেলে। বড় ছেলে দিল্লি থাকে, বৌমা এখানেই। বৌমার এক ছেলে এক মেয়ে ।
পিসির ছোট ছেলে বিয়ে করেনি, বাড়িতেই থাকে।
আমি আশেপাশে তাকাই - তিনি কোথায় ?
পঞ্চাশ বছরে অনেক জল গড়িয়েছে। সে বৃন্দাবন নেই , সে রাধাও নেই ।
পিসি বললেন , প্রীতি আছে এই গ্রামেই- উল্টোদিকে মানে পরেশের বাড়ি ছাড়িয়ে । মনে মনে হতাশ হলাম। বাসনা যতই তীব্র হোক এখন ভাটির সময়, উজিয়ে যাওয়ার সময় হাতে নেই। বাড়ি ফেরার তাগিদ আছে।
আমার হতাশা কাটিয়ে দিল এই বাড়ির নাতবৌ। ভারি মিস্টি মেয়ে, হাসি খুশি আলাপী। তারসাথে রসালাপ করে সময় ফুরুৎ করে উড়ে গেল। দাদু ভাইয়ের সাথেও ফোনে কথা বললাম। চা খাওয়ালো জোর করে। তারপর টা টা ।
কথা দিলাম আবার আসবো। কিন্তু সে সময় কত দিনে হবে ? আমার যে প্রীতি দর্শণ হলোনা !
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
হে মহাজীবন
মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...
-
রোদ যখন উগ্র হয় মাটি ফাটে পুকুর শুকায়, গাছেরা দুর্বল হতে থাকে তবুও শিকড় খোঁজে অতল গভীরতা এই সত্য কোন সীমানা মানে না। প্রতিটি দেশে সংখ্য...
-
তোমার সামনে দাঁড়ালাম তুমি কি শিহরিত হলে আচম্বিতে! প্রতিক্ষার দীর্ঘদিন দীর্ঘশ্বাস অবসান হলো! সেই কবে কবে যেন অসংখ্য পায়ের ভিড়ে সংখ্যা...
-
( In Bengali and English) রাজুদা, কথা রাখলেন না কেন ? গৌতম আলী আচ্ছা রাজুদা, এটা কি আপনি ঠিক করলেন ? কথা দিয়ে কথা রাখলেন না ? এটা তো আপ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন