সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

হিয়ারোপোলিস

হিয়েরাপলিস হিয়েরাপলিসকে দোজখের দরজা বলা হয়। তুরস্কের প্রাচীন এক শহরের নাম হিয়েরাপলিস। অনেকে ‘নরকের প্রবেশদ্বার’ বলতো। এর কারণ হচ্ছে এখানে অনেক প্রাণীর হিসেবে মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। এটাও পৌরাণিক গল্পের অংশ যে গল্পের সত্যতা রোমান বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করবার চেষ্টা করেছেন। করতে সক্ষম হয়েছেন। জমাটবদ্ধ চুনাপাথর অবস্থান: হিয়েরাপলিস তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত এক সুপ্রাচীন শহর । এই শহরের চারদিকে সমতল ভূমিও রয়েছে, তবে পাহাড়ি অঞ্চলের সমভূমি যেমন হয় তেমনি। হিয়েরাপলিস হচ্ছে মঞ্চসহ একটি বৃহৎ স্থাপনা যা খুবই চোখে পড়ার মতো। হঠাৎ করে দূর থেকে দেখলে মনে হবে ভবনটি শ্বেতপাথরে তৈরি। কাছে থেকে একেবারেই অন্যরকম এবং কিছুটা ধাঁধাও তৈরি করে দেয়। নির্মাণ উপকরণ: পানিতে থাকা চুনাপাথরগুলো ৪ লাখ বছর ধরে জমে জমে তৈরি করেছে এ এলাকা। চুনাপাথর হচ্ছে অন্যতম নির্মাণ উপকরণ। আশেপাশে অনেক জলাধার আছে; স্বচ্ছ জল, নীল রং, নীচে জমাট থাকা সাদা চুনাপাথর। পাহাড় থেকে নিচে পানি প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছু অংশ বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। তবে রেখে যায় উজ্জ্বল সাদা ক্যালসিয়াম কার্বনেটের বিশাল ভাণ্ডার। ফলে ধীরে ধীরে তৈরি হয় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৬০ মিটার উঁচু এক বিশাল চুনাপাথরের জমাটবদ্ধ রূপ। বিশ্বে চুনাপাথর জমে এমন স্থান আরও অনেক আছে; যেমন চীনের হুয়াংলং ও ইয়েলোস্টোন জাতীয় উদ্যানের ম্যামথ হট স্প্রিংস। তবে রোমান মিথ বলি আর গঠনগত দিক থেকে বলি যেকোনো বিচারেই প্লুটোর দরজা তর্কাতীতভাবে সেগুলোর চেয়ে সেরা। তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান এটি। স্থানটি প্রতœতাত্ত্বিক বিচারে এতটাই দর্শনীয় যে, ১৯৮৮ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নাম করে নেয় এটি। করোনা মহামারী আঘাত হানার আগ পর্যন্ত বছরে ২.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ইজমির বা ইস্তাম্বুল থেকে এখানে ঘুরতে যেত। মালভূমির চূড়া থেকে ট্যুর বাসগুলো ছড়িয়ে পড়ার সময় থেকে শুরু করে জাহাজে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত অনেকেরই ভ্রম হতে পারে কোনো চিনির ঢিবির ওপরে চলে এলাম না তো! ধীরে ধীরে তারা বুঝতে পারে না চিনি নয়, আশপাশে দিগন্তে যেদিকে চোখ যায় কেবলই জমাটবদ্ধ চুনাপাথর সবখানে। প্রাচীন শহর হিয়েরাপলিস তৈরি হয়েছে চুনাপাথরে আর এই জমাট বাঁধা চুনাপাথরই যে কারও কাছে অনন্য করে তুলেছে এ শহরকে। রোমান পুরাণ থেকে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের শেষ দিকে পারগামনের আত্তালিড রাজারা হিয়েরাপলিস প্রতিষ্ঠা করেন। তখন পর্যন্ত হিয়েরাপলিস রোমানদের দখলে যায়নি। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩ অব্দে রোমানদের হাতে গিয়ে পড়ে শহরটি। রোমান শাসনামলে এটি একটি সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হয়। এটির নাম হয়ে দাঁড়ায় খনিজের শহর। এই খনিজ কেবল চোখ জুড়ানোর জন্যই যথেষ্ট নয়, তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে দর্শনার্থীদের ভেতরে এই শহরটি জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়ায়। রোমান সাম্রাজ্যের এই এক দর্শনীয় স্থানেই সারা বিশ্বের মানুষের ঢল নেমে আসে। জনমানুষে ধারণা জন্মে, এ বিশেষ জলে স্নান করলেই নিরাময় হবে সব রোগ। শহরের প্রবেশমুখে তাই আকর্ষণীয় খিলান তৈরি করা হয়। রোমান সাম্রাজ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতাত্ত্বিক ডক্টর সারাহ ইয়োম্যানস বলেন, ‘খুব সম্ভবত তাপীয় জল এই শহরের প্রাথমিক ভিত্তি। দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে হিয়েরাপলিস একটি সুন্দর, জমজমাট স্পা-শহর। তখনো বিশ্বের নানা স্থানে স্পা করার উপযোগী স্থান বা শহর ছিল। কিন্তু সবগুলো ছাপিয়ে কল্পনাতীত সুন্দর ছিল হিয়েরাপলিস। সে সময় নানারকম মানুষের আনাগোনা এই শহরটিকে গতিশীল ও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছিল।’ হিয়েরাপলিস রোমান বিশ্বে আরও একটি কারণে জনপ্রিয় ছিল। রোমান পুরাণে সে কারণটিকে একটু অশুভ বিবেচনা করা হয়। হিয়েরাপলিসের আরেক নাম ছিল নরকের প্রবেশদ্বার। এ স্থানের বিশেষ বিশেষ কিছু স্থান থেকে পাতালপুরীর দেবতারা বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলত। সে বিষাক্ত নিঃশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে তারা নিশ্চিত শিকার দাবি করত। ফলে পাতালপুরীর দেবতাদের শান্ত করা খুবই জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। রোমান পুরাণে প্লুটো ছিলেন পাতালপুরীর দেবতা। প্লুটোর স্মরণে এ শহর তৈরি করা হয়। সেই শহরে তৈরি করা হয় একটি মাজার। সে মাজারটি বর্তমানে নরকের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত। সেদিক থেকে প্রাচীন তুরস্কের উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি নরকের প্রবেশদ্বার। প্রাচীন তীর্থযাত্রীরা পশু বলি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এখানে যেতেন। এই শহরের ভেতরে প্রবেশ করলে বলির প্রাণীরা মারা যেত। সে সময় তীর্থযাত্রীরা তাদের হয়ে প্লুটোর স্মরণে পশু বলি দেওয়ার জন্য মন্দিরের যাজকদের অর্থ দিতেন। তাদের ধারণা ছিল, পশু বলি দেওয়া হলে তারা ওই অঞ্চলে নির্বিঘেœ ভ্রমণ করতে পারবেন। যে ধর্মগুরুদের তত্ত্বাবধানে এই কাজগুলো করা হতো তারা সবসময় সাবধানে থাকতেন বলি দেওয়া শেষে তারা যেন অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে পারেন। রোমান ঐতিহাসিক প্লিনি দ্য এল্ডার ও গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবোসহ সে সময়ের লেখকদের অনেকেই হিয়েরাপলিসে পশু বলি দেওয়ার বিষয়টিকে একটি করুণ দৃশ্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একজন যাজক ভেড়া বা ষাঁড় বলি দেওয়ার উদ্দেশ্যে মাজারে নিয়ে যেতেন। বিষয়টিকে ঐশ্বরিক হিসেবে দেখানো হতো। ঈশ্বরের হাত ধরে প্রাণীটি তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুবরণ করবে আর পুরোহিত জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে যাবেন। স্ট্রাবো তার ভূগোল বিশ্বকোষের ১৩তম খণ্ডে উল্লেখ করেছেন, ‘বলি দেওয়ার নির্ধারিত স্থানে আমি চড়–ইদের ছুড়ে ফেলেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো মারা যায়।’ দৃশ্যটি দেখে স্ট্রাবো খুবই বিস্মিত হয়েছিলেন। প্রবেশদ্বারের বর্তমান রূপ বর্তমানে প্লুটোর দরজা ঘুরতে গেলে যেকেউ ভাববেন এসব ঘটনা অতিরঞ্জিত। এসব নাটকীয় দৃশ্য বাস্তবে কল্পনা করা কঠিন। পুনরায় এটি খনন করা হয়েছে। পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এর অতীত। এখন এটি শান্ত জায়গা। এখানে এখন আর শিকারের সন্ধানে কেউ বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলেন না। প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার ঝকঝকে জলে ভরা একটি আয়তকার বেষ্টনী দিয়ে প্রবাহিত খনিজ চুনাপাথর দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রবেশদ্বার। পাশে রাখা হয়েছে প্লুটোর ছোট্ট প্রতিমূর্তি। রোমান মৃত্যুপুরীর বর্তমান দৃশ্য দর্শনার্থী আবারও ধাঁধায় ফেলবে। দর্শকের জন্য নির্ধারিত স্থানে তারা হাঁটাচলা করতে পারেন। বর্তমান দর্শক ভাববেন রোমান পুরাকথায় উল্লিখিত সবকিছু বানোয়াট। তাই-ই যদি না হবে তাহলে পশু মারা গেলে পুরোহিতরা বেঁচে থাকতেন কীভাবে? জার্মানির ডুইসবার্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ হার্ডি পিফাঞ্জ। তিনি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার সময় জিওজেনিজ গ্যাস নিয়ে গবেষণা করেন। একই প্রশ্ন তাকেও করা হলো। হার্ডি পিফাঞ্জ জানালেন একই প্রশ্ন তাকেও ভাবিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘প্রাচীন লেখকদের বর্ণনা পড়ে আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম এ ব্যাখ্যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কী? বা আদৌ কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা। প্রথম প্রথম ভেবেছিলাম নরকের প্রবেশদ্বারে কোনো আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে হবে।’ নিজের ভাবনা পরীক্ষা করতেই হার্ডি পিফাঞ্জ ২০১৩ সালে হিয়েরাপলিস ঘুরে দেখতে আগ্রহী হন। এটুকু বলতেই হেসে ফেললেন। জানালেন, ‘আমরা নিশ্চিত ছিলাম না যে আমরা কী খুঁজে পাব। একটা মনগড়া ধারণা তৈরি করা যেত, তবে তাতে করে বিশেষ কিছু হতো না। আমরা অবশ্য এত দ্রুত উত্তর খুঁজে পাওয়ার আশাও করিনি।’ রহস্যের সমাধান ২০১৩ সালে হার্ডি পিফাঞ্জ যখন নিজের মনে তৈরি হওয়া প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন তখনই তিনি জানতেন কিছু না কিছু তিনি খুঁজে পাবেনই। তিনি বলেন, ‘নরকের প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢোকার সময় আমরা কয়েক ডজন মৃত প্রাণী দেখেছি। মৃতদেহের মধ্যে ছিল ইঁদুর, চড়ুই, ব্ল্যাকবার্ড, অনেক ধরনের গুবরে পোকা ও পোকামাকড়। সুতরাং অবধারিতভাবেই আমরা জানতাম যে, পৌরাণিক গল্পগুলো সত্য।’ হার্ডি পিফাঞ্জের গবেষণার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চল ঘিরে ভেসে বেড়ানো পৌরাণিক গল্পের অবসান হয়। তদন্তকারী প্রতœতাত্ত্বিকরা এর রহস্য খুঁজে বের করেন। হিয়েরাপলিসে যাওয়ার সময় হার্ডি পিফাঞ্জ একটি বহনযোগ্য গ্যাস অ্যানালাইজার নিয়ে গিয়েছিলেন। বলি দেওয়া গুহার চারপাশের বায়ু পরীক্ষা করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে পৌরাণিক গল্পের পেছনে থাকা সত্যের দেখা মেলে। পিফাঞ্জ খুঁজে পান বলি দেওয়া গুহা ও তার সংলগ্ন স্থানে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা খুবই বেশি। সাধারণত বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা ০.০৪ শতাংশ। পিফাঞ্জকে হতবাক করে দিয়ে সেখানে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা ৮০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছিল। তিনি বলেন, ‘মাত্র ১০ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড কয়েক মিনিটের ভেতরে যেকোনো মানুষকে খুন করতে পারে। আর সেখানে ৮০ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা সত্যিই মারাত্মক।’ কিন্তু কেন এই উচ্চমাত্রার কার্বন ডাইঅক্সাইড? হিয়েরাপলিসের ভূতাত্ত্বিক ব্যবস্থা খেয়াল করলে দেখা যায়, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া উষ্ণ জলের ধারা ধীরে ধীরে চুনাপাথরের স্তূপ জমায়। প্রাকৃতিকভাবে একটি ভূপ্রাকৃতিক ফাটলের ওপরে হিয়েরাপলিসের অবস্থান। প্রায় ৩৫ কিলোমিটার জুড়ে সে ফাটল বিস্তৃত। দীর্ঘদিন ধরে সেটি সক্রিয় আছে। সেখানে পৃথিবীর ভূত্বকের ফাটলের মধ্য দিয়ে উঠে আসে খনিজ সমৃদ্ধ জল ও কয়েক ধরনের মারাত্মক গ্যাস। সেগুলোর ভেতর দিয়ে একটি ফাটল চলে গেছে শহরের নিচে ও প্লুটোর দরজার দিকে। ইয়োম্যানস বলেন, ‘প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় প্লুটোর দরজার অবস্থানের সঙ্গে গ্যাস নির্গমনের সরাসরি যোগাযোগ আছে। পাতালপুরীর পৌরাণিক গল্প ও গল্পের দেবদেবী তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের ধর্মীয় লোকাচারের উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল। তবে এটি বোঝা যায়, তারা বেছে বেছে এমন একটি স্থানে মন্দির নির্মাণ করেছে যা তৎকালীন বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল। পাতালপুরীর কাহিনীকে সত্য প্রমাণ করার জন্য এটি তাদের প্রয়োজন ছিল।’ কিন্তু প্রকৃতির শক্তির সঙ্গে এ ধরনের নৈকট্য বেশ ভয়াবহ। এজন্য তাদের বেশ চড়া মূল্যও দিতে হয়েছিল। এরকম সক্রিয় ফাটলের ওপরে অবস্থিত যেকোনো স্থান খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৭ ও ৬০ অব্দে এবং সপ্তদশ ও চতুর্দশ শতকে চার চারটি বিশাল ভূমিকম্প শহরটিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। অবশেষে সর্বশেষ ভূমিকম্পের পর হিয়েরাপলিস পরিত্যক্ত হয়। গবেষণার সময় একটি জিনিস পিফাঞ্জকে মুগ্ধ করেছিল। যদি এ অঞ্চলটি এতই মারাত্মক হয় তাহলে বলি দেওয়ার সময় ধর্মযাজকরা কেন মারা যাননি। পরের বছর তিনি আবার হিয়েরাপলিসে ফিরে আসেন। এবার আরও গভীর অনুসন্ধানের জন্য দিনের বিভিন্ন সময়ে গ্যাসের ঘনত্ব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি বলেন ‘আমরা লক্ষ করেছি যে, দিনের বেলায় যখন রোদ থাকে তখন কার্বন ডাইঅক্সাইড দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু যেহেতু কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসের চেয়ে ভারী, রাতে এটি শীতল হয়; তখন এটি প্রবেশদ্বারের আশপাশের অঞ্চলের জন্য মারাত্মক গ্যাসের হ্রদ তৈরি করে।’ যেসব প্রাণীর উচ্চতা খুব বেশি নয়, নাক মাটির কাছাকাছি; তারা দ্রুততম সময়ে এই কার্বন ডাইঅক্সাইডের মেঘে দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। কিন্তু ধর্মযাজকরা লম্বা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। খুব ধীরে শ্বাস নিতেন তারা। ফলে খুব সহজেই বেঁচে থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন। বর্তমানে হিয়েরাপলিসের নাম পামুক্কালে। পামুক্কালে শব্দটি এসেছে তুর্কি ভাষা থেকে। এর অর্থ তুলার দুর্গ। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়ও এর নাম পামুক্কালে। নামকরণের কারণ হিসেবে বারবার এসেছে এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের প্রাকৃতিক গঠন। এ অঞ্চলটিতে প্রবাহিত জলের ধারায় কার্বনেটের খনিজের পরিমাণ বেশি। বছরের বেশিরভাগ সময় এখানে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া থাকে। বর্তমানে প্লুটোর দরজা ইট দিয়ে বাঁধা হয়েছে। এর পাশে তৈরি করা হয়েছে একটি হাঁটা পথ। মারাত্মক মাত্রার গ্যাস উৎসের কাছাকাছি না গিয়েও তারা এই কিংবদন্তি স্থানটি দেখার সুযোগ পান। পিফাঞ্জ বলেন, ‘আমি যখন প্রথমবারের মতো বুঝতে পেরেছিলাম যে হিয়েরাপলিসের কিংবদন্তি সেই বিষাক্ত নিঃশ্বাস আসলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, তখন আমি ঠিক প্রবেশদ্বারের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমরা প্রাচীন রহস্যের সমাধান করেছি। এটি সত্যিই চমৎকার অনুভূতি ছিল!’ হিয়েরাপলিসের থিয়েটার হল রোমান আমলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এটি দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষ দিকে এবং তৃতীয় শতাব্দীর শুরুতে নির্মিত হয়েছিল, যখন রোমান সম্রাট সেপটিমিয়াস সেভেরাস এবং তার উত্তরসূরীদের শাসন চলছিল। থিয়েটারটি পাহাড়ের ঢালে নির্মিত হওয়ায় এটি দর্শকদের জন্য প্রাকৃতিক ঢালুর সুবিধা নিয়ে করা হয়েছিলো এবং এর আসনগুলি একসাথে প্রায় ১২,০০০ থেকে ১৫,০০০ দর্শক ধারণ করতে পারত। এই থিয়েটারে ৫০টিরও বেশি সারি আসন রয়েছে এবং এটি তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত ছিল—ভিয়ামা (প্রবেশ পথ), অর্কেস্ট্রা এবং দর্শক বসার স্থান। মূল মঞ্চটির পিছনের অংশটি বিশেষভাবে সাজানো এবং এতঅসাধারণ খোদাই এবং কলামযুক্ত গ্যালারির সমাহার দেখা যায়। প্রাচীন সময়ে এখানে নাটক, সংগীতানুষ্ঠান, এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হতো। হিয়েরাপলিসের থিয়েটারটি ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেকবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, রোমান ও বাইজেন্টাইন শাসনকালে এটি মেরামত করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি পুরাতাত্ত্বিক এবং পর্যটকদের জন্য একটি চিত্তাকর্ষক আকর্ষণীয় স্থান, যা রোমান নির্মাণশৈলী ও স্থাপত্যের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

হে মহাজীবন

মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...