মগডালের লোকাচার বনাম শীতঘুম
চিত্র : এক
- খুশি?
- জান, এতদিন পর একটু মানুষ মানুষ মনে হচ্ছে। এতদিন ধরে নিজেকে কেমন ছোট মনে হত। মনে হত কোন মুদির দোকানে কাজ করি। নতুন সংস্থা, মাইনে কম। গাঁয়ে গঞ্জে কাজ। সরকারি সংস্থা বললেও সবাই যেন নাক কুঁচকায়। বিয়ের পাত্রীদের কাছে কেমন ফেলনা ফেলনা ভাব। এতদিন পর উচ্চ ন্যায়ালয়ের নির্দেশে সমকাজে সমবেতন; সত্যি, নেতা হ্যায় তো অ্যায়সা-
- লড়াই, একেই বলে লড়াই। দীর্ঘ একযুগ ধরে একটানা লড়াই।
কর্মীদের মধ্যে হতাশা এলেও নেতা টলেননি। লক্ষ্য স্থির, সেখানে তিনি পৌঁছোবেনই। দূরদর্শী মানুষের মত তিনি যেন জানতেন—জয় আমাদের হবেই।
- কিন্তু দাদা, দাদাদের অবস্থা দেখেছেন? আহত বাঘ যেন-সামনে পেলেই আপনাকে ছিঁড়ে খাবে। দাদারা—মানে পোষক সংস্থার দাদারা। পোষক সংস্থার নেতা দাদারা যাঁরা আপনার আমার দাবির সমর্থনে পাশে দাঁড়াতে কুণ্ঠা বোধ করতো, তাঁরা এখন নিজেদের হাত কামড়াচ্ছে। দাদা সংস্থার পদস্থ ব্যক্তিরা, যাঁরা আমাদের দয়া করে ধন্য করতো, তাঁরা কেমন জাত গেল জাত গেল স্বভাবে তাকাচ্ছে। আর দাদা সংস্থার অ-পদস্থ কর্মীরা, যাঁরা শেষ পংক্তিতেও আমরা বসবার যোগ্য কিনা তাই ভাবত- তাঁদের গায়ে এখন বড় জ্বালা। উচ্চ ন্যায়ালয় আর খেয়ে কাজ পেল না! শেষ পর্যন্ত সমান বেতনের অধিকার দিল! অবশ্য কেউ কেউ আবার অন্যরকম ভাবে।
- ওদের ভাবনায় তো আর দেশ চলতে পারে না। দেশে আইন আছে। আইন সবার জন্যে। দেশে বাস করতে গেলে তো সংবিধানটাকে মানতেই হবে। যত যাই বলুক সাংবিধানিক অধিকার দিতে ওরা বাধ্য। সামনে এখনো অনেক লড়াই, অনেক কিছু পেতে হবে আরো। নেতৃত্বের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রেখে প্রতিটা কর্মীর সংবিধানগত অধিকার সুরক্ষা করাই আমাদের একমাত্র কাজ।
চিত্র : দুই
- ধুৎ, ভাল লাগেনা। এত বছর চাকরি হল অথচ কোন পদোন্নতি নেই।
লোকে জিজ্ঞেস করলে লজ্জা করে উত্তর দিতে। অন্য সংস্থায় দেখ কেমন টপাটপ করে পদোন্নতি হচ্ছে। আর আমাদের বেলায় সেই এক বাঁশি, ঘ্যানর ঘ্যানর বেজেই চলেছে- হবে -হবে।
- আঃ! এত অধৈর্য্য হচ্ছিস্ কেন? আমরা কি মিথ্যা বলছি নাকি? কেন, পদোন্নতি হয়নি? এই তো দশ জনের হোল।
- হ্যাঁ, দশ জনের হয়েছে; তবে দশ বছর আগে। তারপর সব বন্ধ কেন?
প্রতি বছরই তো পাঁচ সাতটা করে পদ তৈরি হচ্ছে। সেগুলো পূরণ হচ্ছে না কেন? শূন্য পদের সংখ্যা তো জমে জমে প্রায় অর্ধ-শতক। তা এতো পদ জমাচ্ছ কেন?
- আরে শোন্ শোন, এদিকে আয়। বোস্। বোকার হদ্দ-অত চেঁচাচ্ছিস কেন? নিজের ভালটা নিজে বুঝবি না? এই দেখ কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল দশ জনের। সিলেকশন পদ্ধতিতে দিল। ত্রিশ জনের মধ্যে পেল দশ জন। পক্ষপাতিত্ব বা অনিয়ম হলেও যে দশ জনের পাওয়া উচিত; নানা দিক বিচার বিবেচনা করে যাদের পাওয়া উচিত, তারাই পেল। সংস্থার সার্বিক ভালর জন্যেই সিনিয়র দশজনকে টপকে একজন জুনিয়রও পেল। কিন্তু গন্ডগোল করল তো ঐ বাদ পড়া সিনিয়র অন্য দশজন। আদালতে গেল ন্যায় বিচারের জন্যে। আর সেখান থেকেই সর্ষের মধ্যে থেকে ভূত বেরিয়ে গেল।
- ভূত বেরোল মানে?
- তাই তো বলছি রে বাবা। শোন্ না মন দিয়ে। শুধু আমাদের দোষ দিলে হবে? তোদের জন্যে এত করি আর তোরাই যত গন্ডগোল পাকাস। শোন্ বিচারক অন্তবর্তী রায় দিল-সংস্থার নীতি অনুসারে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে দিতে হবে। ফলে ঐ দশজনকেও পদোন্নতি দিতে হল। দশের জায়গায় হয়ে গেল কুড়ি জন।
- তাতে কি হয়েছে? আমাদের সংস্থার আরো দশজন তো পেল।
- ঠিকই বলেছিস্, আমাদের সংস্থারই কুড়িজন পেল। কিন্তু এইভাবে মানে এই নীতিতে যদি পদোন্নতি হয়-তোর আর এ জীবনে পদোন্নতির স্বপ্ন দেখতে হবে না।
- মানে?
— মানেটাই তো বলতে চাইছি রে বাবা। মনে রাখিস্-দুটো পদ্ধতি, একটা সিলেকশান, অন্যটা সিনিয়রিটি। সিলেকশানে একটু বেনিয়ম হলেও তোর পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সিনিয়রিটি হলে আঙ্গুল চুষতে হবে। সিনিয়রিটি মানেই তপশীলি জাতি/ উপজাতির জন্যে সংরক্ষণ দিতে হবে। একশটা পদের মধ্যে আঠাশটা। কি ভাবে দিতে হবে সে হিসাবও সরকারিভাবে করে দেওয়া আছে। আর সংরক্ষণ একটা সাংবিধানিক নির্দেশ। মানতেই হবে।
- ভাল তো মানতে যখন হবেই, তখন শুরুর থেকেই মানা ভাল। সবাই জানবে এটাই নিয়ম। মানসিক প্রস্তুতি থাকবে সবার।
— আরে বোকারাম, হিসেবটা একটু বোঝ। ধর, প্রতি বছর পাঁচটা করে শূন্যপদ তৈরি হল। আর প্রতি বছরই আমরা পাঁচজনকে পদোন্নতির ব্যবস্থা করলাম। কে কে পাবে? সংরক্ষণের রোস্টার অনুসারে এক, তিন আর পাঁচ নম্বর সংরক্ষিত পদ। তার মানে ওদের জন্যে তিন আর আমাদের জন্যে মাত্র দুই। এতে শতকরা হিসাব কোথায় যায় সেটা খেয়াল করেছিস্?
- কিন্তু ওদের সংখ্যা আর কত? নীতি মেনে দিলে প্রথম দিকে বেশি পেলেও শেষের দিকে পাবে না। সাংবিধানিক দায়টাও তো মানতে হবে।
- বছর বছর যদি তোর সংবিধান মানতে হয় তাহলে ওরা কেবল বেশি সংখ্যায় পদোন্নতি পাবে না-পরের ধাপে গিয়ে সিনয়িরিটিতেও এগিয়ে যাবে।
- হু, ঠিক বলেছ। বিষয়টা এমনভাবে কখনো ভাবিনি তো.....
— তাছাড়া, আরেকটা দিক ভাব। যাঁরা নেতৃত্ব দেয়, এত কষ্ট করে, তাদের কথাও ভাবতে হবে তো। আমার কথা অবশ্য আলাদা। আমি তো তোদের জন্যে সবই ত্যাগ করতে প্রস্তুত। বেশির ভাগ নেতাদের ক্রমিক নিচের দিকে। কয়েক বছরের পদ জড় করে যদি একসাথে দেওয়া যায় তবে সবদিকই রক্ষা। সংরক্ষণ দিলেও হিসেব ঠিক থাকবে, সিনিয়রিটি টপকাতে পারবে না আবার নেতারাও পেয়ে যাবে পদোন্নতি।
- ঠিক আছে। তা এবার একটু তাড়াতাড়ি করো। যাদের পাওয়া দরকার তারা তো মোটামুটি সবাই আওতায় এসে গেছে।
- আমাদের উপর একটু আস্থা রাখ। আরো অংক আছে। অংকগুলো একটু করতে দে। হিসাবটা পরে মিলাস। তার আগে ছোটজাতের নেতাদের দু'চারটে প্যাঁচ দেখাই। নেতাগিরি কাকে বলে তা একটু বোঝাই।
চিত্র : তিন
- কিন্তু স্যার, এমন সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
- আমি সিদ্ধান্ত নেবার কে ভাই? বোর্ডের কাছে আমার হাত পা বাঁধা। তাঁরা যা বলবে আমি মানতে বাধ্য।
- কিন্তু স্যার, আপনি তো সংস্থার মুখপাত্র। বোর্ডকে বোঝাবার মূল দায় তো আপনার।
- আমাকে আমার দায়িত্ব বোঝাতে এসো না। আমার দায়িত্ব আমি সঠিক ভাবেই পালন করেছি।
- কিন্তু আপনি আমাদের বলেছিলেন, তপশীলিভুক্ত কর্মীদের স্বার্থ যাতে সুরক্ষিত থাকে সে ব্যবস্থা আমি করব।
- দেখ, জাতপাত নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে এসো না। জাতপাত আমি মানি না। ব্যক্তিগতভাবে আমি সাম্যবাদে বিশ্বাসী। একজন প্রশাসক হিসেবেও আমি সবাইকে সমানভাবে দেখি। জাত-জাত করে মনটাকে এত ছোট করো কেন? মনটাকে একটু বড় করো, বৃহত্তর সমাজটাকে একটু দেখ।
- আমরাও তো স্যার তাই চাই। সবাইর প্রতি সুবিচার করুন এটাই চাই। সাংবিধানিক নিয়ম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হোক- এটাই চাই। আর সেইজন্যেই আপনাকে আমাদের অনুনয়।
- অমাকে সংবিধান দেখিও না। সংবিধান ভুল করলে সে ভুল আমি মানব কেন? আমার বিচার-বুদ্ধি অনুসারে যেটা সঠিক সেটাই করব। কারো অনুনয়- বিনয়ের জন্যে আমি কাজ করি না।
- কিন্তু স্যার, আমরা আপনাদের উপর নির্ভর করি সুবিচারের জন্যে। আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ করবেন বলেও এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?
- কেন, তোমাদের কি মনে হয় আমরা কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি?
- শুধু ভুল নয়, সুচতুর ভাবে পদোন্নতিতে সংরক্ষণ না দেবার সিদ্ধান্ত। দশ বছর আগে সংরক্ষণ না দেবার তাগিদ থেকেই সিলেকশন পদ্ধতিতে পদোন্নতি হল। কিন্তু অ-তপশীলি অফিসারদের বঞ্চিত করার জন্যে আদালত আপনাদের দায়ী করল। আদালত বলল-সিনিয়রিটিতে দিতে। সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপনারা ডিভিশন বেঞ্চে গেলেন। ডিভিশন বেঞ্চ বলল- আগের রায় অনুসারে পদোন্নতি দিতে। বাকি দশজনকে পদোন্নতি দিতে বাধ্য হলেন। অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ অনুসারে এক থেকে কুড়ি পর্যন্ত সিনিয়রিটি অনুসারে পদোন্নতি হল।
- ঠিক আছে। তো-তাতে কি হল?
- সিনিয়রিটিতে দিলেন অথচ নিয়মমত কুড়িটার মধ্যে ছয়টা সংরক্ষিত পদ পূরণ করলেন না।
- আরে বাবা, আমি কি বলেছি তোমাদের ব্যাকলগ পূরণ করব না? নিয়ম যদি থাকে তা আমি কেন, যে কেউ মানতে বাধ্য। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে-
আমি তো কোর্টের রায় মানছি না। এটা তো অন্তর্বর্তী আদেশ। চূড়ান্ত আদেশ যা হবে-তাই আমরা করব। তখন তোমাদের সম্পত্তি তোমরাই পাবে।
- কিন্তু স্যার, শূন্যপদগুলি যদি পূরণ করে নেন, তখন কোথায় লোক নেবেন? তাছাড়া আপনি তো আদালতের রায় মেনেই আবার পদোন্নয়ন করছেন।
- ভুল বুঝেছ তোমরা। আমরা দশ বছর আগের সিদ্ধান্ত মতই সিলেকশন পদ্ধতিতে পদোন্নতি করাচ্ছি।
- কিন্তু স্যার, এই দেখুন The gazette of India, No. 492, Sept. 28, 1988। এতে তো Selection বলে কিছু লেখা নেই। লেখা আছে Promotion will be on the basis of seniority-cum-merit.
- তোমরা তো 7(a) দেখালে, 7(c)টা একটু দেখ।
- কিন্তু স্যার, 7(c) তে লেখা Mode of selection.
- তার মানেই সিলেকশন।
- কিন্তু স্যার, সিলেকশানের পদ্ধতি আর সিলেকশন এক নয়। সিলেকশানের পদ্ধতি হচ্ছে দুটি- সিনিয়রিটি ভিত্তিক (নন সিলেকশন) আর সিলেকশন ভিত্তিক।
- তোমরা যদি বেশি বোেঝ আমার কিছু করার নেই। তাছাড়া seniority-cum-merit is nothing but selection.
- স্যার, আমাদের নিয়ামক সরকারি সংস্থার এই সার্কুলারটি দেখুন। নাম্বার IDD/RRB No. C-78/316(G)/87-88। এতে নির্দেশ পরিষ্কার বলছে non- selection. দেখুন স্যার, মেরিটকে ফিটনেসের সমার্থক ধরা হয়েছে। আবার
আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেখুন স্যার, সেখানেও বলেছে সিনিয়রিটিতে দিতে।
- ঠিক আছে। যা আছে তা তো আছেই। তোমাদের সাথে বৃথা তর্ক করে কোন লাভ নেই। তোমাদের তো আগেই বলেছি, বোর্ডের কাছে আমার হাত- পা বাঁধা; আমার কিছু করার নেই।
- ভুল বললেন স্যার। বলুন-সংরক্ষিত পদে যাতে কোন ভাবে তপশীলভুক্ত মানুষ পদোন্নতির সুযোগ না পায় তার ব্যবস্থা আপনি করবেনই।
- Stop it! পেয়েছ কি তোমরা? ভুলে যেও না তোমরা সংস্থার সর্বোচ্চ ব্যক্তির সামনে কথা বলছ।
- মাফ করবেন স্যার, আমরা জানি কার সামনে কথা বলছি। আমরা তো স্যার তেলের টিন নিয়ে আসিনি যে আপনার ধমক খেয়ে পায়ের নিচে কুঁই কুঁই করতে থাকব। শান্ত হয়ে চেয়ারে বসুন। আমাদের সর্বনাশ করতে আপনারা,
পৈতাধারী সাম্যবাদীরা কি সূক্ষ্ম চাল চেলেছেন—সেটা আমাদের মুখেই শুনুন।
- আমার.........
— আগে আমাদের কথা শুনুন। আদালতের নির্দেশ মানেন না মানেন না করছেন অথচ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করার সাহস আপনার নেই। সাহস নেই বলেই দশ বছর পরে আরো দশজনকে পদোন্নতি করিয়েছেন দশ বছর আগের তারিখ থেকেই, সাহস নেই বলেই সংরক্ষণ না দেবার উপায় খুঁজতে সংস্থার হাজার হাজার টাকা ব্যয় করে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যরিস্টার ধরেছেন। অবশেষে উপায় বাতলেছে তারা। ধরি মাছ না ছুঁই পানি। সাপ মারব অথচ লাঠি ভাঙবে না।
বোর্ডকে ভুল বুঝিয়ে সঠিক তথ্য পেশ না করে একটা পদ্ধতি বের করলেন- By selection on the basis of seniority-cum-merit. ভূ-ভারতে এমন একটা হাঁস-জারু পদ্ধতি দেখাতে পারবেন? পারবেন না। সত্যি এলেম বটে আপনাদের। পঞ্চাশ বছর ধরে স্বাধীনতাকে শুধু ধর্ষণ করেই গেলেন! একবারও ভাবলেন না, সেই ধর্ষণের ফলে কোন সমাজ তৈরি করছেন আপনারা?
- চুপ কর! আমি তোমাদের সাথে কোন আলোচনা করতে চাই না। চুপ না করলে-
- চিৎকার করবেন না। আপনার চিৎকার শুনে আপনার কোন বাপ আপনাকে উদ্ধার করতে আসবে না। এখন কথা বলব আমরা, শুনবেন আপনি।
ভাষার জাদুকর আপনারা। দেবেন সিনিয়িরিটিতে সেটাতো স্বতঃসিদ্ধ। মেরিটের জুজু দেখিয়ে সিলেকশান লিখলেন। অথচ মেরিটের মেরিট খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলেন সার্কুলারে। নম্বর বন্টন করলেন-সিনিয়রিটি-৫০, দক্ষতা-২৫ আর ইন্টারভিউ-২৫; মোট-১০০। আবার বললেন দক্ষতা ও ইন্টারভিউ মিলে যোগ্যতাসূচক নম্বর-১৫। আরো বললেন দক্ষতা যত খারাপই হোক ৫ নম্বর পাবেই আর ইন্টারভিউ বোর্ডে হাজির হলেই ৫ নম্বর। অর্থাৎ ১০ নম্বর বাঁধা। স্যার, আপনি-আমি প্রত্যেকেজানি পনের বছর ধরে অনেক ঝড়-ঝাপটা সহ্য করে যে সমস্ত দায়িত্বশীল কর্মী সংস্থাটিকে লাভজনক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে—বাকি ৫ নম্বর তারা পাবেই। অর্থাৎ যোগ্যতা সূচক মান অর্জন করবে সবাই, যদি না ইচ্ছাকৃত ভাবে কাউকে কোপ বসানো হয়। অবশ্য সে ইচ্ছা পূরণের জন্যে তো বলির পাঁঠা আমরা, তথাকথিত নিচুতলার মানুষরা, আছিই।
স্যার, ল্যাং মারলেন এরপরই। পরিষ্কার করে বললেন- যদি যোগ্যতা মান অর্জন করতে পারে তবে পদোন্নতি হবে কেবল মাত্র সিনিয়র ব্যক্তিরই। অর্থাৎ সার্বিক ভাবে কোন জুনিয়র যদি অনেক বেশি নম্বরও পায় তবু সে পদোন্নতি পাবে না। তার মানে ঘুরিয়ে নাক দেখানোর মত বললেন আদালতের নির্দেশ মাফিক সিনিয়রিটিতেই দেবেন।
কিন্তু স্যার, By selection শব্দ যোগ করলেন কেন? একটাই কারণ সাংবিধানিক নির্দেশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কোন সংরক্ষণ না দেওয়া।
আরেকটা কথা স্যার, আজকের মত শেষ কথা। শেষ কথাটাও আমাদের। মনে রাখবেন, ঘোড়া যত বেপরোয়া হোক না কেন তার লাগাম থাকে সওয়ারের হাতে। আর আমরা এখন সওয়ার হতে চাইছি।
চিত্র : চার
— আইয়ে। বৈঠিয়ে প্লিজ। বাঁতায়ে ম্যায় ক্যা কর সকতাহু আপকা লিয়ে।
— আমরা বড় হতভাগা স্যার। কেউ আমাদের কথা শুনছে না। সবাই যেন আমাদের কথা, আমাদের সমস্যা জানে, তাই আগে থেকে তারা স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছে। আপনারা আমাদের নিয়ামক সংস্থা। বড় ভরসা করে পরামর্শ পেতে এসেছি। দয়া করে অন্যদের মত আগে থেকেই সিদ্ধান্ত জানাবেন না। একটু কষ্ট করে আমাদের আবেদন শুনবেন স্যার।
- অত অনুনয় করছেন কেন? আমি তো আপনাদের মতই। সরকার মাইনে দেয়-বিনিময়ে কাজ করি। সাধ্যমত সহযোগিতা করাই আমার কাজ।
- এই দেখুন স্যার, সরকারি নির্দেশের পাহাড়। প্রত্যেক বোর্ড মেম্বারকে দিয়েছি, এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কেন্দ্র রাজ্য আমলাদের দিয়েছি; যথাসাধ্য বলে বোঝাতে চেষ্টা করেছি। অবশেষে আপনার কাছে এলাম।
- হ্যাঁ, আপনাদের কেসটা আমার কাছে এসেছে। যথারীতি আমি বিষয়টা নিয়ে চর্চা করেছি। আপনাদের যুক্তির জায়গায় আমি সহমত পোষণ করি। কিন্তু-
- কিন্তু কি স্যার?
— আসলে যাঁরা বিষয়টি রূপায়ণ করবে সেই আমলাতন্ত্র যদি আপনাদের সহায়ক না হয়, শত সরকারি নির্দেশ থাকলেও কিছু হবে না। আসুন আপনাদের সাথে আরেকটু খোলামেলা কথা বলা যাক। এক মিনিট-
এই দেখুন আপনাদের বিষয় নিয়ে আমার বা আমাদের বিভাগের একটি নোট। সমস্যা তো আপনাদের সংস্থার না, সারা ভারতের সমস্যা। আজ থেকে এগারো মাস আগে এই নোেট আমি আমার উর্ধ্বতনকে দিয়েছি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাঠানো এবং সিদ্ধান্তের জন্যে। দুঃখের বিষয় নোটটি এখনো তার ফাইলে চাপা পড়ে আছে। আমি নিশ্চিত ওটা আর কোনদিন প্রকাশ্যে আসবে না। কি করতে পারি আমি?
সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের একটা রায় (CIVIL/RR No. 6441/95 dt. 19 April, 1996) বলছে-যে সমস্ত পদের ক্ষেত্রে মূল বেতন ২২৫০/- টাকা বা তার উপরে সে ক্ষেত্রে কোন সংরক্ষণ নেই। সত্য কত নির্মম দেখুন, ১৯৯৬ সালে যখন সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় এই কথা বলছে, তার সাত বছরেরও আগে সরকারি বিভাগ সার্কুলার করে (OM No. 36012/12/88EStt (SCT) dtd. 2.9.1989) বলছে ২২৫০ টাকা নয় সংরক্ষণ থাকবে মূলবেতন ৫৭০০/- টাকা পর্যন্ত। অথচ আপনারা যে পদের জন্যে সংরক্ষণ চাইছেন তার মূলবেতন কত? মাত্র ৩০৬০ টাকা। তবু আমলাদের যাঁতাকলে পড়ে আপনারা সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন না।
- আরেকটা আদালতের রায় দেখুন। উচ্চ আদালতের রায়। আদালত ১৯৮৯ সালের একটি সরকারি নির্দেশ-নামা উল্লেখ করে বলছে-কোন ক্ষেত্রে যদি ৭৫% এর বেশি সরাসরি নিয়োগ হয় তবে শূন্যপদের ক্ষেত্রে প্রমোশনে কোন সংরক্ষণ থাকবে না। (অর্থাৎ যদি ৭৫% এর কম থাকে তবে সংরক্ষণ থাকবে।) এই কথা বলেই ন্যায়ালয় দিন দুপুরে পুকুর চুরি করল। ভুল ব্যাখ্যা করল। বলল- যেহেতু এই ক্ষেত্রে সরাসরি নিয়োগের কোন ব্যাপারই নেই সুতরাং আবেদনকারীর অভিযোেগ ভুল। অর্থাৎ ০% সরাসরি নিয়োগ হওয়া সত্বেও সংরক্ষণের অধিকার আদালত দিল না। সরকারি নিদেশ উল্টে দিল। কি করবেন আপনি?
- এসব কেমন করে হয়?
- এ অসম্ভবও সম্ভব হয় ভুল উপস্থাপনার জন্যে। বিচারক প্রাপ্য তথ্য ও যুক্তির ধারের উপর নির্ভর করেন। এই সব মামলার উকিলদের খোঁজ নিন- একজনও আপনার গোষ্ঠীর লোক নেই। তারা কাজ করেছে দায়হীন ভাবে। ভিতরের তাগিদ না থাকলে সঠিক মূল্যায়নে বিস্তর বাঁধা এসে দাঁড়ায়।
- একটু পরামর্শ দেবেন, কি করা উচিত আমাদের?
- লড়াই। আপোষহীন ভাবে লড়াই। যদি আমিও ভুল করি আমার বিরুদ্ধেও লড়াই। সত্য প্রতিষ্ঠার আকুতি যদি থাকে, লড়বার মানসিকতা যদি না মরে যায় পথ খুঁজে পাবেন নিজেরাই। যে আদালত ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেই আদালতের কাছ থেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত বের করতে হবে।
চিত্র : পাঁচ
- আজ দেখা হবে না। পরে আসুন।
- আজ জরুরী মিটিং, স্যার একদম সময় দিতে পারবেন না। স্যর এক্ষুনি বেরিয়ে যাবেন। দয়া করে যদি.....
- দয়া করা যাবে না। দয়া দুইদিন করেছি। আজ দেখা করবই-
- আসব স্যার? মাত্র দশ মিনিট।
- কিন্তু ভাই আমাকে যে এক্ষুণি-
- আপনি একজন বামপন্থী নেতা তথা বুদ্ধিজীবী, অথচ-
— বসুন। আমি বামপন্থী, শ্রেণী-ব্যবস্থা নিয়ে ভাবি, জাত-ব্যবস্থা নিয়ে নয়।
- ধন্যবাদ স্যার। এই ভারতবর্ষে জাত-পাত সমস্যাকে বাদ দিয়ে শ্রেণী ব্যবস্থার পরিবর্তন কিভাবে করবেন? জাত-পাতের অন্তর্নিহিত ক্ষয় রোগ কি শ্রেণীসংগ্রামের গরম পোষাক গায়ে চাপালে সারবে?
- থাক ওসব। ভুমিকা ছাড়া বলুন কি দরকার।
— আপনারা আমাদের পোষক সংস্থা। এই আমাদের সরকারি নির্দেশ। এটা আদালতের রায়। এটা নিয়ামক সংস্থার। এটা বোর্ডের নোট। তপশীলিদের সংরক্ষণ না দেবার সার্বিক চেষ্টা চলছে। আপনি যদি যুক্তিতে সহমত পোষণকরেন,
নির্দেশ দিন আমাদের সংস্থাকে।
- আপনাদের সাথে নীতিগতভাবে আমি একমত। কিন্তু একটা অটোনমাস বডিকে আমি নির্দেশ দিতে পারি না। তারা যদি আমার কাছে জানতে চায়- তখন জানাতে পারি।
- তারা তো জানতে চেয়েছে। আর আপনি যা জানিয়েছেন তা আমাদের সহায়ক নয়। আপনি যদি স্পষ্টভাবে বলেন কোন্ পদ্ধতি সংস্থা অবলম্বন করবে।
- আপনাদের কর্তৃপক্ষ জানতে চেয়েছে-সিলেকশান পদ্ধতিতে সংরক্ষণ থাকবে কি না। তাঁরা কখনোই জানতে চাইছে না-কোন্ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। আশা করি আমার বাঁধাধরা অবস্থান আপনাদের বোঝাতে পেরেছি।
- ধন্যবাদ স্যার। আমরা ভাবতাম আপনি একজন বামপন্থী নেতা। আসলে আপনিও একজন আমলা, যে ক্ষমতা থাকতেও আমলতান্ত্রিক ফাঁস কেটে বেরুতে পারে না বা বেরোয় না।
চিত্র : ছয়
— আমরা অধিকাংশ তপশীলিভুক্ত কর্মচারী আপনার ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য। আমরা নিয়মিত চাঁদা দিই, মিটিং মিছিলে যোগ দিই। সংগঠন নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে চলি। দেশের সাংবিধানিক নির্দেশ মেনে চলার দায়িত্ব আমাদের সবার। আমাদের সংস্থা একতরফাভাবে সেই সরকারি নিয়মকে অমান্য করছে। আমাদের দাবি যদি অযৌক্তিক না হয় ট্রেড ইউনিয়ন আমাদের সহযোগিতা করুক। আমরা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলছি না। সংস্থা নির্দিষ্ট একটি নিয়ম মেনে পদোন্নতি করুক।
- হু - হু.........ঠিকই তো আছে। নিয়ম থাকলে না দিয়ে যাবে কোথায়?
- কিন্তু মানছে না। আপনারা বৃহত্তম সংগঠন যদি চাপ সৃষ্টি করেন, সংস্থা সেটা ভাবতে বাধ্য।
- আরে বাবা বলছি তো। বারবারই তো বলছি নিয়ম যদি থাকে-
- এসব কাগজপত্র দেখে আপনার কি মনে হচ্ছে কোন নিয়ম আছে?
- সেটাই তো বলছিরে। নিয়ম যখন আছে দিয়ে দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়।
- আমরা অন্যদের সাথে কথা বলব, আপনারা সবাই যদি একসঙ্গে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেন..
- দেখ কে কি করবে না করবে সে সব দেখার কাজ আমার নয়। আমি তো তোদের বলছি-সাংগঠনিকভাবে আমরা বলেছি আবারও বলব। কিন্তু এত বলা সত্বেও যদি না দেয় কি করা যাবে বল।
- এক কাজ করুন না, যদি লিখিতভাবে বলেন..........
- দেখ এত চ্যাটাং ফ্যাটাং ভাল লাগে না। এমনভাবে জেরা করছিস্ যেন কোন কেলেঙ্কারীতে জড়িয়ে গেছি। মুখের কথা যদি বিশ্বাস না করতে পারিস্- কি আর করতে পারি বল্।
- সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের এই সারকুলার দেখুন। এতে স্পষ্টভাবে বলেছে পদোন্নতি হবে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে এবং যথারীতি সংরক্ষণ থাকবে। সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের নির্দেশ অনুসারে এই সারকুলার। সারকুলারে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যেন রাজ্য ইউনিটগুলি যথার্থ ভূমিকা নেয় যাতে তপশীলি কর্মীরা সঠিকভাবে সংরক্ষণের সুবিধা পায়। আমাদের সংগঠন কেন সক্রিয় ভূমিকা নেবে না?
- দেখ ভাই, আজ যদি তোদের পক্ষ নিয়ে আমরা কথা বলি তবে অ- তপশীলিরা ক্ষেপে যাবে। তারাও তো আমাদের সদস্য?
- তাই বলে নীতি বলে কিছু থাকবে না? কেন্দ্রীয় সংগঠনের নির্দেশ মানবে না? এই তো এই সার্কুলারেই একটা তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যাদের কাজ হবে রাজ্যস্তরে সমস্ত সংস্থায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা ঠিকমত সুরক্ষিত হচ্ছে কিনা তাই দেখা। সেই তিন জন সদস্যের অন্যতম সদস্য আপনি। অথচ আপনিই আপনার নিজের সংস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ করছেন? সংরক্ষণ ব্যবস্থা যাতে না বাস্তবায়িত হয় সেই পন্থায় মদত দিচ্ছেন? মিথ্যে সিলেকশনের নামে শতাধিক জুনিয়র ছেলেকে ইন্টারভিউর সামনে হাজির করছেন?
- মানে- --কমিটি তৈরি হয়েছে ঠিকই...... কিন্তু তার কোন মিটিং এখনো হয়নি.... তাই......
- থাক আপনাকে আর অযথা কারণ খুঁজে বেড়াতে হবে না। আমাদের বঞ্চিত করার জন্যে এত যে কারচুপি করছেন—আমরা কি সংগঠন সদস্য নই?
- কে বলেছে তোরা সংগঠন সদস্য নোেস্? তবে ওদের তো আমরা ক্ষেপিয়ে তুলতে পারি না।
চিত্র : সাত
- বন্ধুগণ, এই আমাদের অবস্থা। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিচারের জন্যে গিয়েছি, সুবিচার পাইনি। আমরা নিয়ামক সংস্থায় গিয়েছি, পোষক সংস্থায় ধর্ণা দিয়েছি, বড় মেঝ-সেঝ সমস্ত সংগঠনের কাছে অনুনয় করেছি। সবাই যেন এক অদৃশ্য সূতায় বাঁধা। এক সুর। আমাদের সামনে এখন একটাই পথ খোলা আইনের দ্বারস্থ হওয়া। দাঁতে দাঁত চেপে, কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে লড়াই করা। যদিও অসম লড়াই তবু লড়তে হয়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে না উঠলে মাথা নত করতে হয়। আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন-নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে, মর্যাদা রক্ষার জন্যে, অধিকার রক্ষার জন্যে, আমরা কি করব? আমরা কি আইনের দ্বারস্থ হবো?
- হ্যাঁ, হ্যাঁ আমরা আইনের দ্বারস্থ হতে চাই।
- আমরা সুবিচার চাই।
- আমরা মামলা করতে চাই।
— যে সব ট্রেড ইউনিয়ন আমাদের ন্যায্য দাবির প্রতি নুন্যতম সহানুভূতি বা সহাযোগিতা করছে না, আমরা কি তাদের রক্ত চক্ষুকে ভয় পাব?
- কোন রক্তচক্ষুকে আমরা ভয় করি না।
- কোন রক্ত চক্ষুকে আমরা ভয় করব না।
- কোন সংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করব না।
-- আমরা আমাদের দাবি আদায় করবই। দরকারে সব ইউনিয়ন ছেড়ে দেব।
- ইউনিয়ন ছাড়লে ভয় দেখাবে।
- দেখাক।
- অন্যায় বদলি করবে।
- করুক।
- প্রতিটি ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করবে।
- আমাদের সমস্যা আমরা মেটাব। আমরা থাকব পাশাপাশি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিরোধ গড়ব আমরা।
- আমাদের ডাক লড়াইয়ের।
- আমাদের ঠিকানা লড়াইয়ের ময়দান।
কম্পোজিশান
প্রথম সপ্তাহে ট্রেড ইউনিয়ন থেকে ইস্তাফাপত্র জমা পড়ে এগারটা।
দ্বিতীয় সপ্তাহে পঁচিশটা।
তৃতীয় সপ্তাহে উনপঞ্চাশটা।
অতপর পরাধীন অস্তিত্বে বেড়ে ওঠা মানুষগুলি গা ঝাড়া দিয়ে স্বাধীন হতে থাকে। সবাই জমা হতে থাকে নিজেদের তৈরি সংগঠনে।
দীর্ঘতর শীতঘুমও একদিন ভাঙে।
*****
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন