করণিক নয়। ব্যবস্থাপকও নয়। তবু করণিকের কাজ করেন তিনি। দশটা- পাঁচটার অফিসে তার আসল কাজটাই যেন ফাউ। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। চাকরির শর্তে বরাদ্দ কাজটা তাকে করতেই হয়। ফাউ-এর মত যেন ওই কাজটুকু না করলে কিছু যায় আসে না, কিন্তু করণিকের কাজ বা ভূমিকা তাকে পালন করতেই হবে। তা তিনি করেন। ব্যবস্থাপক যেমন নির্দেশ দেন তেমনি করেন। প্রয়োজনে ব্যবস্থাপকের ভূমিকাটাও তাকে পালন করতে হয়। সাধারণের চোখে কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হলেও ঘটনা এমনই ঘটে। সাধারণ মানুষের কাজ কখনো আটকে থাকে না, করণিক বা ব্যবস্থাপক না থাকলেও। ব্যবস্থাপক নির্ভয়ে চাবিসহ সমস্ত অফিসের দায় অলিখিতভাবে তার উপর ন্যস্ত করে বেড়াতে যান। কখনো নিজের বাড়ি, কখনো শ্বশুর বাড়ি বা অন্য কোথাও। বিনা ছুটিতে ছুটি কাটান। বিশ্বাসী মানুষটি সব দায় বহন করছে নীরবে। কাজ করেন নীরবে। দায় নেন। দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের শুরু থেকেই তার নীরবতা চলছে। যখন যে যা বলে মাথা নিচু করে শোনেন, নির্দেশমত সেটা পালন করেন।
দাই-এর হাতে জন্ম দিয়েছিল তার মা। শুনেছেন, আঁতুড় ঘর থেকে সুস্থভাবে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সুস্থভাবে ফিরে আসেনি তার মা। ওঁর জন্মের খেসারত দিতে হাড় জিরজিরে হয়েছিল। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভুগেছিল কিছুদিন। মায়ের দুধের মেয়াদ ফুরাবার অনেক আগেই প্রাণহীন হয়েছে তার মা। অবশ্য মাতৃহীন তাকে থাকতে হয়নি বেশি দিন। শৌচ কাটতেই বাবা ঘরে এনেছিল নতুন এক মাকে।
বোধহীন অবস্থা থেকে নতুন মায়ের হাতে বড় হয়েছেন। আসল নকলে তার কাছে পার্থক্য ছিল না। যদিও মাতৃহীন বালকের যতটুকু অবহেলা প্রাপ্য তা তিনি যথার্থই পেয়েছেন। সেই ছোট থেকেই নীরবে সবকিছু সইতে অভ্যস্ত তিনি। মায়ের বকুনি, শারীরিক লাঞ্ছনা, বাবার অবহেলা অথবা এড়িয়ে যাওয়া। ভালবাসার স্বাদ তার কাছে এরকমই স্বাভাবিক। এর মধ্যেই তিনি হেসেছেন, খেলেছেন, বড় হয়েছেন। সংসারের প্রয়োজনে, ভাইবোনের সঙ্গে নিজেও একজন হয়েছেন। গ্রামের অনেকের ‘আহা' শুনেছেন। মামা বাড়িতে দিদিমার চোখে জল দেখেছেন। মাসীর আদরে পিষ্ট হয়েছেন। মাসীর চাপা গর্জন শুনেছেন। দাদুর দীর্ঘশ্বাস দেখেছেন। সবই তার জীবনের অঙ্গ। কেন হয়, কি হওয়া উচিত, কেমন হওয়া দরকার এসব নানাবিধ প্রশ্ন তার মনে কখনো দেখা দেয়নি। মা বাবার আদর অনাদর মামাবাড়ির আদর-অনাদর সবটাই তার কাছে স্বাভাবিক। এসব তো তার একার জীবনের ঘটনা নয়। তার ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছে তেমনি তার সাথীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। অভাব অনটন যাদের নিত্যসঙ্গী তাদের জীবনে এই টানাপোড়েন কোন বিশেষ ভূমিকা নেয় না।
ব্যবস্থাপক শ্বশুর বাড়ি যাবেন। তিন দিন আগে বাড়ি থেকে ফিরেছেন। ভাউচার, ক্যাশ বই, লেজার যেখানে যত এন্ট্রি ছিল সব সই হয়ে গেছে। একেবারে আপ-টু-ডেট। আবার কয়েকদিনের বিশ্রাম চাই। ক্যাশিয়ারবাবুও আছেন। থাকবেন সপ্তাহের বাকি কটা দিন। নীরবে কাজ করছিলেন তিনি। ক্যাশিয়ারবাবুর ও ম্যানেজারবাবুর হয়ে ক্যাশবাক্স সিন্দুকে রেখে দিয়েছেন। এ কাজটা তাকেই করতে হয়। ম্যানেজারবাবু কাস্টমারদের সাথে কথা বলে ক্লান্ত হয়ে সিগারেট ধরান। আমেজে ধোঁয়া ছাড়েন। হয়ত প্রতিষ্ঠানের কথা ভাবেন। হয়ত বাড়ির কথা ভাবেন। হয়ত সারাদিনের কথা ভাবেন। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো অসম্পূর্ণ রেখে অল্পবয়সি বউটা যখন অগোছালো কাপড় নিয়ে ম্যানেজারবাবুর সামনে উবু হয়ে সই করছিল সেই সময়ের কথা অথবা স্কুলে যাবার পথে বাবার একাউন্টে টাকা জমা দিতে আসা কিশোরীর কথা। অথবা কিছুই ভাবে না। তবু ব্যস্ত থাকে, চেয়ার থেকে উঠে চাবি দিয়ে সিন্দুক খোলার সময়টা ম্যানেজার বাবুর হয় না। এক এবং অদ্বিতীয় তিনি তো আছেন। ক্যাশিয়ারবাবুও জানেন চেয়ার থেকে উঠে স্ট্রং রুমে যাবার কোন দরকার তার নেই। বরং গা ছেড়ে আয়েস করা যায় একটু। সেটাই সে করে। প্রতিদিনই। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ক্যাশবাক্স রেখে ক্যাশিয়ারকে বিরক্ত না করে লেজার এন্ট্রি করছিলেন তিনি। ভাবছিলেন বাড়ির কথা। ছোট বোনটার পরীক্ষা সামনে। বাড়ি ফিরে তাকে নিয়ে একটু বসতে হবে। সবাইকে তো টিউটর দিতে পারেননি। টানাটানির সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। ভাবছিলেন তিনি।
আজকে কিছু ডিম চাই। সিগারেটের ধোঁয়া ছেঁড়ে বিনা ভূমিকায় নির্দেশ দিল ম্যানেজারবাবু। তার ভাবনার সূতায় টান পড়ল। তিনি তাকালেন ছুটে আসা কথার দিকে।
তোর বৌদির কাছে কি খালি হাতে যাওয়া যায়? খুশী হবে সে, - ম্যানেজারবাবুর ঠোঁটে হাসি পাক খায়। ডিম চাই। হাসের ডিম, মুরগীর ডিম। পঁচিশ থেকে ত্রিশটি। নির্দেশের সঙ্গে এ কথা আর বলতে হয় না। বহু ব্যবহারে সিদ্ধ এ নির্দেশ। পঁচিশটা ডিম খুঁজে পেতে হবে তাকে। গ্রামের ঘরে ঘরে জিজ্ঞেস করে সংগ্রহ করতে হবে। হাটেও পাওয়া যায়। তাতে দাম একটু বেশি। তাছাড়া টাটকা হবে না তত। সুতরাং কম দামে টাটকা ডিমের জন্যে সন্ধ্যার দিকে পাড়ায় ঢুকতে হবে তাকে। তা তিনি ঢুকবেন। উপায় নেই। বোনের পড়াটা হবে না। মা'র বাক্যবান যথারীতি হজম করতে হবে। নির্দেশ অমান্য তিনি করতেই পারেন। কিন্তু কখনো করেন না। নীরবে পালন করেন। এবারও তাকে ডিম সংগ্রহ করতে হবে। সেগুলো তুলো বা কাপড় বিছিয়ে অ্যাটাচিতে সাজাতে হবে। এমন ভাবে সাজাতে হবে যাতে না নড়ে যায়। ধাক্কা লাগলেও না ভাঙ্গে। সেই অ্যাটাচি হাতে ম্যানেজার বাবু যাবেন শ্বশুর বাড়ি। সমস্ত ব্যবস্থা করতে লাগবে তার কয়েকঘন্টা। নিজের বা বাড়ির আর কোন কাজ হবে না। বুকের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ম্যানেজারবাবুর ধোঁয়ার সঙ্গে পাল্লা দেয় না। চোখ ফিরিয়ে কাজে মন দেন তিনি।
স্কুলের গন্ডি পেরোনো হয়নি তার। তার খেলার সাথী কেউ কেউ স্কুলে যেত, অনেকেই যেত না। বাড়ির দিক থেকে তেমন চাপ ছিল না। গেলে ভাল। না গেলেও ভাল। তাকে বরং সংসারের কাজে লাগানো যেত। এই সহজ প্রাপ্তিটা মা বাবাকে টানে। দু'চার পয়সা আয় করতে শেখে। চাষের কাজে লাগে। মাছ ধরতে লাগে। বরং স্কুলে গেলেই যত বিপত্তি। পড়তে পড়তে সবাই কেমন বাবু হয়ে যায়। সাধারণ কাজগুলো আর করতে চায় না। আবার পড়া শেষ না হলেও আয়ের কথা ভাবে না। মা-মরা ছেলের বাবু হবার কথা ভাবেনি তার মা-বাবা। তাই প্রথম দিকে তার দু'চারজন সাথী স্কুলে গেলেও তিনি যাননি। কিন্তু একদিন মাসির পাল্লায় পড়ে বাবা রাজি হয়েছে স্কুলে পাঠাতে। তবে ওর বাবু হয়ে ওঠা হয়নি। সংসারের কাজই প্রাধান্য পেয়েছে। স্কুল প্রাধান্য পায়নি কখনো। তার ক্লাসে ওঠা আটকায়নি। দু'এক বিষয়ে ফেল করা ছিল তাঁর ভবিতব্য। রেড- পি বা ব্লাক-পি-তে পাশ করেছে যথারীতি। তাতেই ধন্য তারা।
কিন্তু পঞ্চম শ্রেণী পেরিয়েই তার বাবার কাশিতে তোড় আসতে থাকে। মাঝে মধ্যে রক্ত মেশানো কফ। বিখ্যাত এক হাতুড়ে ডাক্তারের স্বনামধন্য শিষ্য বাজারের দোকানে তাস খেলতে খেলতে রুগী দেখেন। ওষুধ দেন। নানাবিধ ওষুধ খায় তার বাবা। প্রায় কমে, কিন্তু একেবারে কমেনা। আবার দেখা দেয়। মা ছোটে মামাবাড়ির কাছের সাধুর কাছে। তাবিজ বাঁধা হয় হাতের কব্জিতে, গলায় ।বাবার কাশি বাড়ে তবু। জ্বর হয়। সংসার অচল হতে বসে। দুই মামাবাড়ি থেকেই সাহায্য আসে কিছু কিছু। কিন্তু তাদের সামর্থ্যও তো সীমিত। বাবার খেপলা জাল নিয়ে রাত জেগে মাছ ধরেন তিনি। সেই মাছের পয়সায় সংসার চালান। দিনের বেলায় নানা কাজের সাথে প্রাধান্য পায় বাবা। বাবাকে নিয়ে সদর হাসপাতালে ছোটেন। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে রোগ। ডাক্তার জানিয়ে দেয় দীর্ঘ চিকিৎসার কথা। ডাক্তার বলে পথ্যের কথা। ভাল পথ্য চাই। তিনি শোনেন। ভাবেন সমাধানের কথা। পথ্য নিয়ে ভাবনা ততটা হয় না তার। শাক-সব্জি তাজা মাছ গেঁড়ি সে দিতে পারবে বাবাকে। সেই সঙ্গে হাটের দিন মাংসের দোকান থেকে ট্যাংরি বা ঐ জাতীয় বিনাপয়সার মাংস। এটা সে দিতে পারবে, দিতে তো তাকে হবেই। সমস্যা ওষুধ নিয়ে। এ পয়সার সংস্থান সে কোথায় পাবে? লোকের কাছে হাত পাততে হবে। মনে মনে একটা হিসেব করে। কিছু মানুষকে নির্বাচিত করে। দশদিন বা পনের দিনের ওষুধ সে দিতে বলবে এক একজনকে। একবারের বেশি চাইবে না, যদি না নিতান্তই সে অপারগ হয়ে ওঠে।
বাবার চিকিৎসা , ভাই-বোনের সংসার, সবার শত দায় মাথায় নিয়ে কৈশোরেই নিজেকে ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠেন তিনি। তার স্কুল চলতে থাকে তাকে ছাড়াই। ম্যানেজারবাবু বদলি হয়ে যায় হঠাৎ। কেউ কেউ অবাক হলেও অবাক হননা তিনি। পাঁচ বছরের চাকরি জীবনেই দেখেছেন নিয়ম থাকলেও সব নিয়ম সবার জন্যে প্রযোজ্য নয়। কারো কারো হাত যশ থাকে। বেনিয়মকে নিয়ম করেই চালায় তারা, যাদের হাত-যশ নেই নিয়মের প্রতীক হয়ে যায় তারা।
একজন যায়, একজন আসে। যে আসে সব নিয়মকে নিয়ম হিসাবেই দেখতে চায়। সে যা চায় সেই ভাবে চলতে চান তিনি। কিন্তু বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয় না। অভ্যাস ফিরে আসে । নতুন ম্যানেজার বাবুর মায়ের শরীর খারাপ হতে থাকে মাঝে মাঝে। মায়ের অন্য সন্তান থাকা সত্বেও ম্যানেজারবাবুর উপস্থিতি একান্ত দরকার হয়। মাঝে মধ্যেই আপন শরীরের বিভিন্ন অংশে বিদ্রোহ ঘোষণা হতে থাকে। প্রতিটা কারণই বাড়ি থেকে দূরে থাকা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তাই ম্যানেজ করে বাড়ি যায় আর এই সব নানা কারণে অভ্যাস হতে হতেই একদিন ছাপানো কার্ড বিলি করে ম্যানেজারবাবু। বিয়ের পর ছুটির সংখ্যা আরেকটু বাড়ে। আরো বেশি নির্ভরতা আসে তার উপর। তিনি অভ্যস্ত হাতে কাজ চালান নীরবে। বিনাছুটির এই ছুটি আরো বিশ্বস্ত করে তাকে।
###
বাবা ভাল হন ধীরে ধীরে। বাবাকে আর জলে নামতে দেন না তিনি। সামান্য জমিটুকুতে সীমাবদ্ধ রাখেন। ভাইবোনদের পড়া চলতে থাকে। নিজের আর স্কুলে ফিরে যাওয়া হয় না। মাছ ধরা, বিক্রি করা তার মূল আয়ের উৎস হয়ে যায়। গ্রামের মোড়ল, মাস্টার মশাইরা তার নিয়মিত খদ্দের। সকাল বেলার মাছ এঁদের দোরে পৌঁছে যায়। বাকি যা থাকে তা আড়তদারের কাছে। এইসব মানুষের ফাই ফরমাসেরও এক নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত মানুষ হয়ে যান তিনি।
###
কয়েক বছর আগের কথা।
কিছুদিন ধরে কিছু শহুরে মানুষের আনাগোনা দেখা যায় তাদের বাজারে। মোড়লের বাজারের গুদাম ঘরটা কেন্দ্র করেই কথা ওঠে। চাউর হয়ে যায় চারিদিকে—ব্যাংক হবে বাজারে। মানুষের কথায় একটি নতুন শব্দ যোগ হয় । ব্যাংক।
ও খুড়া, শুনছ - বাজারে ব্যাঙ্ক হবে গ..
হ শুনছি, বাবুরা বলা কওয়া করছে...
ব্যাঙ্ক কী গ খুড়া...
জানিনা তবে শুনছি সরকারের দোকান, টাকা পয়সার দোকান...
গ্রামের অধিকাংশ মানুষের কাছে, নিরক্ষর মানুষের কাছে, ব্যাংক মানে মোড়লের একটি নতুন দোকান। হয়তো নতুন কিছু বিক্রি হবে সেখানে। কল্পনা জল্পনা শাখা বিস্তার করে আরো।
অবশেষে ব্যাংক হয়। মাইক বাজিয়ে কিছু বাবু মানুষ নানা কথা বলে ব্যাংক উদ্বোধন করেন। একজন ম্যানেজার একজন ক্লার্ক। ব্যাংকে আরেকজন লোক দরকার স্থানীয় ছেলে চাই। ঘর ঝাড় দেওয়া, জল তোলা, টেবিল গোছানো। মজুরি খুবই সামান্য। দিন মজুরের থেকেও অনেক কম। ব্যাংক থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় মোড়লকে। লোক ঠিক করার জন্যে। তার বাড়ির লোক হলে ভাল। নতুবা অন্য কেউ। মোড়ল নিজের ছেলের নামটা বলেন। প্রতিবাদ করেন ছেলে।
পরের গোলামী আমার দ্বারা হবনা বাবা...
আমি মোড়লের বেটা, আমার মানসম্মান আছে, ঐ ঝাড়ুদারের কাম করতে পারবনি...
পরের গোলামী করা তার পক্ষে সম্ভব নয়...
বেগার খাটার সময় আমার নাই।....
মোড়লের ছেলে হয়ে ঝাড়ু দেবার কাজ? তাছাড়া তার সময় কোথায় ? নাটক পাগল মানুষ সে। ব্লকের নানা অঞ্চল থেকে সখের নাট্যদল প্রায়ই আমন্ত্রণ করে তাকে। তাদের সময় দিতে হয়৷ এছাড়া আছে নিজের দল। বাবাকে জবাব দেয় সে।
মোড়ল চুপ করে যায়। পান চিবোতে থাকে একমনে। হিসাবি মানুষ। সরকারি সংস্থায় কর্মরত একজন নিচুস্তরের মানুষেরও অধিকার ক্ষমতা বিষয়ে সচেতন তিনি। এই অতি সামান্য কর্মচারীও বেশ কয়েকবার তার জীবনে অসামান্য ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু নিজের খেয়ালি ছেলেকে সেটা বোঝাতে ব্যর্থ সে। অবশেষে মোড়ল নাম বলে ছেলেটির। প্রতিদিন সকালে মাছ নিয়ে তার দরজায় হাজির হয়। মোড়লের নির্দেশ মাথা পেতে নীরবে মেনে নেন তিনি। ব্যাংকের আংশিক কর্মচারী হন। বাঁক নেয় তার জীবন।
###
কোন কোন ছুটির দিনে মহাভারত নিয়ে পড়তে বসেন বাবার সামনে।
ভাইবোনেরাও আসে। কাজ গুটিয়ে মা-ও আসে কখনো। হ্যারিকেনের আলোয় মাথা নিচু করে বই পড়েন। পঞ্চ পান্ডবের বীরত্বের কথা মুগ্ধ হয়ে শোনে সবাই।
একটার পর একটা গা ঝাড়া দেওয়া কাহিনী। তিনি পুরুর কাহিনী পড়েন, পিতা যযাতির জ্বরা নিজদেহে ধারণ করেছিল। একলব্যের সাধনার কথা পড়েন, অস্ত্র শিক্ষা না দিলেও হাতের বুড়ো আঙ্গুল গুরুকে কেটে উপহার দিয়ে নিজের সাধ
স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন তিনি। তিনি পড়েন,
দুর্যোধন পঞ্চপান্ডবকে পুড়িয়ে মারবার জন্য জতুগৃহে পাঠায়। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির ফন্দি করেন পালাবার এবং দুর্যোধনকে ধোঁকা দেবার। তাদের বদলে ছয়জন নিরীহ, অন্ত্যজ মানুষকে পোড়াবার
কথা ভাবেন। কোথায় পাবেন সেই ছয়জন যাদের পোড়া দেহ দেখে সবাই ভাববে যুধিষ্ঠিররা মারা গেছে ? খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেন। চার বর্ণের মানুষেরা আসে, খায়-দায়, চলে যায়। চার বর্ণের বাইরেও নিমন্ত্রণ পায় আরো ছয়জন জংলী মানুষ। নিষাদ পরিবার। এক মা, পাঁচ শিশু সন্তান। অভাবী তারা। দেবতা সমান রাজার ঘরে খাবার লোভ, পান করবার লোভকে এড়াতে পারে না। খাবার পর সবাই চলে গেলেও মা তার শিশু পুত্রদের নিয়ে যেতে পারে না অথবা যেতে দেওয়া হয় না। পূর্বের ফন্দি অনুসারে জতুগৃহে আটকে পড়ে তারা এবং অগ্নিদগ্ধ হয়। নিঃস্ব মানুষের খাবারের লোভের বিনিময়ে প্রাণ ফিরে পায় রাজপুত্রেরা।
নিষাদদের প্রাণদান মহত্ব পায়, মৃত্যুর পরে তাদের স্বর্গপ্রাপ্তির নিশ্চিত সম্ভাবনায় তুষ্ট হয় পাঠক, তুষ্ট হয় শ্রোতা। পরম বিশ্বাসে হাত ছোঁয়ায় কপালে।
বেড়ে ওঠা বড় বোনটার বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে বাবা। জুটেও যায় পাত্র। বছর কুড়ি বয়স। পান বিড়ির দোকান। হাটে হাটে বিক্রি করে। চাহিদা খুব সামান্য। ঘড়ি, আংটি, সাইকেল আর একটা ভাল রেডিও। সঙ্গে হাজার টাকা। এমন একটা ছেলে হাত ছাড়া করতে চায় না বাবা। নিজের কয়েক বছরের চাকরিতে যে সামান্য জমি কিনেছিল সেটা বন্ধক রাখতে হয়। ধার করতে হয় তারপরেও। কষ্ট হলেও বোনের বিয়ে হয়ে যায়।
মেয়ের বিয়ে দেবার পর নিজের ভাঙ্গা শরীরের দিকে আরো বেশি নজর পড়ে বাবার। ছেলের বউ দেখার ইচ্ছা হয় তার। ভাল মেয়ের খোঁজ যেমন মেলে তেমন মোটা টাকারও। বাবাকে বারণ করেন তিনি। ধার দেনার কথা বলেন। জমি ছাড়াবার কথা বলেন। আর দু'চার বছর দেরি করার কথা বলেন। কিন্তু বাবা শোনে না। নিজের শরীর আর মেয়ের বিয়ের খরচ পুষিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তার বাবা। অবশেষে সম্মত হন তিনি।
বিয়ে হয় তার। লিকলিকে, কালো, ড্যাবডেবে চোখের এক সুন্দরী মেয়ে জড়িয়ে যায় তার জীবনে। অন্য মাত্রা যোগ হয়। নীরবে কাজ করতে করতে বাড়ির বাইরের সময়টা কাটে। একটা মানুষের হাসি, রাগ, অভিমান আনাগোনা করে তার মনে ।
###
একটানা বৃষ্টি হয় কয়দিন। ব্যাংকের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন। কদাচিৎ দু' চারজন লোক আসে। টাকা তোলে বা জমা দেয়। ভল্ট থেকে টাকার বাক্স বের করে সে। ক্যাশ বাক্সে বান্ডিল করা টাকা। ভল্টের ভিতরে আরেকটা বাক্সে কাপড়ের প্যাকেট বান্ডিল করা, সোনার গহনা। গোল্ড লোনের গহনা। মাঝে মাঝেই গুণতে হয়। সে গোণে, আবার রেখে দেয়। টাকা বের করে, আবার রেখে দেয়। দিনের পর দিন। ম্যানেজারবাবু থাকলেও একাজ তাকে করতে হয়, না থাকলেও করতে হয়।
ইদানিং এই টাকা, সোনার গয়না দেখে নানা ভাবনা আসে মনে। এত টাকা সে প্রতিদিন ছোঁয়, এত সোনার গয়না সে নাড়াচাড়া করে, অথচ এসব তার কিছুই নয়। বাবার চিকিৎসা, সংসারের খরচ, ভাইবোনদের পড়া, বোনের বিয়ে নিজের বিয়ে—প্রতিটা ক্ষেত্রেই টাকার দরকার হয়েছে, কত কষ্টে সে সব যোগাড় করতে হয়েছে। বিয়ের পর ম্যানেজার বাবু তাকে জিজ্ঞেস করেছিল—কিরে ফুলশয্যার রাতে বৌকে কি দিলি? প্রথমে বুঝতে পারেনি, লজ্জায় নত হয়েছিল মুখ। বুঝতে পেরে অবাক হয়েছিল সে। ফুলশয্যার রাতে বৌকে সোনার কিছু দিতে হয় ! এটা যে একটা নিয়ম তা সে জানত না। তার বৌও জানে না। গ্রামের সাধারণ মানুষ তারা। এইসব নিয়মের বাহুল্য তাদের কখনো নেই। বৌ তো কোন অভিযোগ করেনি। তবু মনে মনে সংকোচ বোধ করেন। নিজের আয় থেকে বৌকে কিছু দেননি। এত সোনা তাঁর মনকে উদাস করে, কেমন ছোট মনে হয় তার।
বর্ষার জল জমে রাস্তায়। কাদা হয়। পিচ্ছিল কাদায় পা হড়কে যায় ম্যানেজার বাবুর। কোমরে ব্যথা লাগে। ঠান্ডা লেগে সাইনাসের ব্যথা জোরালো হয়। দুদিনের জন্যে এসেই বাড়ি ফিরে যান। অগ্রিম সই করা কিছু কাগজ পত্র রেখে যান। চেকেও সই করেন। প্রয়োজনে টাকা তুলতে পারে। দুই নম্বর অফিস অর্ডারের খাতায় সই করে দায়িত্ব দিয়ে যান। ছুটির দরখাস্ত রেখে যান, প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য। যদি বাইরের কেউ আসে সেই জন্যে। নতুবা ফিরে এসে ছিঁড়ে ফেলেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন। পিঁপড়ের সারি দেখে গ্রামের মানুষ যেমন আসন্ন ঝড় বা বন্যার আভাস পান, তেমনি তিনিও বুঝতে পারেন সপ্তাহখানেকের মধ্যে ম্যানেজারবাবু আর এমুখো হবে না। ক্যাশ মিলিয়ে হাঁক পাড়ে ক্যাশিয়ার। বাক্সটা ভল্টে রাখতে হবে। নিজে ড্রয়ার থেকে চটকদার সিনেমার পত্রিকাটা বের করে পড়ায় বা ছবি দেখায় মন দেয়। ক্যাশ বাক্স আর দু’গোছা চাবি নিয়ে স্ট্রং রুমে ঢোকেন তিনি। ইদানিং যে ভাবনাটা মনের মধ্যে উঁকি দেয়, সেটাই ভাবেন। বৌয়ের মুখে হাসি ফোটাবার রসদ তার কাছেই আছে। বৌয়ের খালি আঙ্গুলে যদি একটা সোনার আংটি পরাতে পারেন ভারী খুশী হবে। স্বামী হিসাবে এটুকু দিতেই পারেন। সবশেষে যে গোল্ড লোন হয়েছে সেখানে একটা সুন্দর পাথর বসানো আংটি আছে। তার অভিজ্ঞতায় জানেন অন্তত দুই বছরের আগে এ ঋণ শোধ হবে না। অর্থাৎ তিনি হাতে সময় পাবেন দুই বৎসর। এদিকে ম্যানেজার বাবু বা ক্যাশিয়ার কখনো অবিশ্বাস করবে না তাকে। মিলিয়েও দেখবে না। মনে মনে হিসাব করেন তিনি। অল্প-স্বল্প জমালে এক বছরের মধ্যেই ঠিক একই রকম একটা আংটি তৈরি করাতে পারবে। আসলটা প্যাকেটে রেখে দিলেই সব ঝামেলা মিটে যাবে।
বাইরে বৃষ্টি। ভিজে রাস্তা ঘাট। প্রায় জনশূন্য বাজার। সিনেমা পত্রিকায় নিবিষ্ট ক্যাশিয়ার। ম্যানেজলিভে ম্যানেজার। এইসব কর্মীদের দায়িত্ব জ্ঞানহীনতার শিকার হন তিনি। অবারিত সুযোগে লোভ জয়ী হয়। সর্বশেষ ঋণের সোনার প্যাকেটটা পকেটে পুরে ভল্ট বন্ধ করেন তিনি।
###
কৃপ ও কৃতবর্মাকে শিবিরের দ্বারদেশে দেখে অশ্বত্থামা প্রীত হয়ে মৃদুস্বরে বললেন, আমি শিবিরে প্রবেশ করে কৃতান্তের ন্যায় বিচরণ করব, আপনারা দেখবেন যেন কেউ জীবিত অবস্থায় আপনাদের নিকট মুক্তি না পায়। এই বলে অশ্বত্থামা অদ্বার দিয়ে পান্ডব শিবিরে প্রবেশ করলেন।
পড়া থামালেন তিনি। খানিকক্ষণ চুপ থেকে মহাভারতখানা বন্ধ করলেন। না- আজ আর তার কিছু ভাল লাগছে না। সব কিছু কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। সব হিসাব উল্টে যাচ্ছে। বৌয়ের কাছে কথাটা পাড়তে হবে আজ রাতে। স্বামী হিসাবে গর্ব করে যে আংটিটা পরিয়েছিলেন স্ত্রীর মধ্যমায়, সেটা আজ ফেরত চাইতে হবে।
###
বিনা মেঘে বজ্রপাত বোধহয় একেই বলে। শহর থেকে দূরের এই দ্বীপভুমিতে সাধারণত ঊর্ধ্বতনরা যায় না। কিন্তু একদিন হঠাৎ হাজির হয়। তারা প্রতিটি জিনিস খুটিয়ে দেখে। প্রতিটা টাকা, প্রতিটি সোনার প্যাকেট। আর তখনি ধরা পড়ে একটা প্যাকেট নেই। সবাই চাপ দিতে থাকে তাকে। কারণ তিনিই ভল্টের অলিখিত দায়িত্বে আছেন দীর্ঘদিন।
প্রথমে অস্বীকার করার কথা ভাবেন। কার্যত তিনি তো ভল্ট খুলতে পারেন না। ও কাজটা ম্যানেজার বাবু ও ক্যাশিয়ারের। তিনি যে ভল্ট খুলেছেন—এটা
প্রমাণ করা খুব কষ্টকর। প্রাথমিকভাবে সব দায়িত্ব তো ম্যানেজারদের।
কিন্তু সহজ সরল মানুষ সত্যকে অস্বীকার করতে পারেন না। সত্যের মুখোমুখি হন তিনি। তিনি স্বীকার করেন তার অপরাধের কথা। লোভের কথা। সব গহনা ফেরত দেবার অঙ্গীকার করেন তিনি।
কিন্তু সমস্ত গহনা ফেরত পেলেই সমস্যার সমাধান হবে না। ম্যানেজার- ক্যাশিয়ারের দোষ এড়ানো যায় না—তাদের অবহেলার কথা লিখতেই হয় তদন্তকারী অফিসারদের।
আসরে নেমে পড়েন নেতারা। ম্যানেজারের বন্ধু এক ইউনিয়নের নেতা, তিনি বন্ধুকে বাঁচাতে পথ খোঁজেন। ক্যাশিয়ারের বন্ধু আরেক ইউনিয়নের নেতা। তাঁর ও নেতা। কিন্তু ক্যাশিয়ারের শহুরে আড্ডায় ঢেউ তোলা বন্ধু সে, তাই ক্যাশিয়ারের দিকেই ঝোঁকেন। সবাই তাকে ভয় দেখায়—তার চাকরি থাকবে না। ভয় পান তিনি। নতুন বউয়ের কথা ভাবেন, সংসারের কথা ভাবেন। অসহায়তা কাঁধে চেপে ধরে। কিন্তু তিনি ভেবে পান না—তার একার দোষ সবাই দেখছে কেন! তিনি অন্যায় করেছেন ঠিকই, কিন্তু এই অন্যায় করতে তো সবাই বাধ্য করেছে। দিনের পর দিন তাকে লোভের সামনে ঠেলে দিয়েছে, নিজেরা ফাঁকি দিয়েছে। ম্যানেজাররা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করত— তবে তো তিনি এই অপরাধ করতে পারতেন না। কথাটা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন নেতাদের। কিন্তু নেতারা বিজ্ঞের মত কেবল বলেছে, বিশ্বাসের মূল্য সে রাখেনি, সুতরাং অপরাধী সে। এ অপরাধের দায় সম্পূর্ণ তাকে নিতে হবে নতুবা চাকরি খোয়াতে হবে। অবশেষে ইউনিয়নের নেতারা, পর্যবেক্ষকরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করে। তিনি লিখিতভাবে জানাবেন, ম্যানেজার এবং ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে চাবি চুরি করে তিনি সোনার গয়না সরিয়েছেন। এ চুরির দায় সম্পূর্ণভাবে একা তার। যদিও নানা প্রশ্ন দেখা দেয় তাতে, কিভাবে দুটো চাবি চুরি হয়? সবার উপস্থিতিতে কিভাবে ভল্ট খুলে চুরি হয়? এবং চুরি হবার দুইমাসের মধ্যেও কেন সে চুরির খবর থানা বা কর্তৃপক্ষের কাছে যায় না? অভিজাতদের বাঁচাতে সবাই একজোট, সুতরাং এসব প্রশ্ন অবান্তর। উচ্চবর্ণ বা গোষ্ঠিপ্রিয় মানুষের এই সম্প্রীতি তাকে দয়ার পাত্র করে তোলে।
... বিশাল পৃথিবী, নদী, সমুদ্র, পর্বত, বৃক্ষাদি, উপনিষদ উপবেদমন্ত্র ইতিহাসাদি সমেত চতুর্বেদ, বাসুকী প্রভৃতি নরগণ, মাঙ্গলিক পশুপক্ষী এবং দেবর্ষি ব্রহ্মর্ষি ও রাজর্ষি অর্জুনের পক্ষ নিলেন। ...
অনন্য নজির গড়েন তিনি। যদিও তার প্রতিষ্ঠানে ইতিপূর্বে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরূপ হয়েছে, তাদের কাউকে দোষী হিসাবে প্রমাণ করা যায়নি। একমাত্র তিনি সমাধান সূত্রের অঙ্গীকারপত্র লিখে প্রতিষ্ঠানের সর্বপ্রথম প্রথম প্রমাণিত অপরাধী গণ্য হন।
মহাভারতের পাতা উল্টে যায়।
...ব্রহ্মা ও মহেশ্বর বললেন, অর্জুনের জয় হবে তাতে সন্দেহ নেই, কারণ ইনি খান্ডব দাহ করে অগ্নিকে তৃপ্ত করেছিলেন, স্বর্গে ইন্দ্রকে সাহায্য করেছিলেন, কিরাতরূপী বৃষধ্বজকে তুষ্ট করেছিলেন, এবং স্বয়ং বিষ্ণু এঁর সারথি।...
তিনি ভাবেন কাউকে তৃপ্ত করার ক্ষমতা তার নাই। তাই পরাজয় তাকে মাথা পেতে নিতে হবে। বৌয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে নিঃস্ব মানুষের মত সব অপরাধ স্বীকার করে মধ্যমার আংটি ফেরত চাইতে হবে। ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকেন তিনি।
...কর্ণ বিষণ্ণ দুই হাত নেড়ে বললেন, ধর্মজ্ঞগণ সর্বদাই বলেন যে ধর্ম ধার্মিককে রক্ষা করেন। কিন্তু দেখছি ধর্ম ভক্তগণকে রক্ষা না করে বিনাশই করেন। ...
উদাস চোখে তিনি দেখেন, ধর্মহীন ক্ষতবিক্ষত কর্ণের রথের চাকা ভূমি গ্রাস করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন