Lifestyle of a refugee is always disaster. One of my hoby is writing. Sometime I write short stories and poems in Bengali. Most of the writings are reflection of refugee life. I welcome you to my writing world. Please inscribe a comment, if possible. Thank you. Writing blog, writing blog for money, writing blog on instagram, writing blog posts, writing blog site, writing blog job, blogger, blogger platform, best free blogger site, ব্লগার, বাংলা ব্লগ, গল্প, কবিতা, গল্প ও কবিতা, #goutamaalee .
রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৫
হে মহাজীবন
মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া কাটাতে মন চায় না। তাই জরুরি ভিত্তিতে গেলাম লবনহ্রদের মণিপাল হাসপাতালে। পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষে যখন হৃদয়ের চিন্তা হালকা হলো বাড়ি ফিরতে লিফটে উঠলাম। আমি লিফট থেকে বেরোচ্ছি - লিফটে উঠতে যাচ্ছে কবী ( শ্রদ্ধেয় কণিকা বিশ্বাস ও বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ছেলে) । জল ছলছল চোখ। ওর লিফটে ওঠা হলনা। আমার তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফেরা হলনা। হার্ট হালকা ছিল, হৃদয় ভারি হল।
কবী কান্না চেপে বললো - অলৌকিক ! কি অলৌকিক ঘটনা! মা হয়তো তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছে !
মা - মানে কণিকা বিশ্বাস, আলোর পথিক বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সহধর্মিনী , সহযোগী।
আবার লিফটে উঠলাম। বৌদি শুয়ে আছেন, একা। নাকে নল। শ্বাস উঠছে - পড়ছে। এই প্রথম বললেন না, আয়, বোস। তিনি অচৈতন্য। আমার অপেক্ষায় যিনি আছেন, তিনি আমাকে দেখলেন না। তার কিছু পরে তাঁর শ্বাস ওঠা - নামা বন্ধ হয়ে গেল।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গড়লেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সরকারের একমাত্র হিন্দু মহিলা সাংসদ কণিকা বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে খুন হলেন, দেশ ছেড়ে চলে এলেন পশ্চিমবঙ্গে। দেশ ছাড়লেন কিন্তু মানুষের পাশ ছাড়লেন না। দেশভাগের বিষাক্ত ব্যবস্থায় ছিন্নমূল অসহায় উদ্বাস্তু মানুষের জন্য বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের অকাল মৃত্যুতে তাঁর অপূর্ণ কাজের দায় কাঁধে নিয়ে জীবন কাটাবার ব্রত নিলেন কণিকা বিশ্বাস। আজীবন সে দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। মৃত্যুর কয়দিন আগেও তাঁকে চিন্তিত দেখেছি উদ্বাস্তু মানুষের নাগরিকত্বের যন্ত্রণায়।
সাহিত্যিক কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর লিখছেন :
" সমাজে এমন কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা কেবল তাঁর নিজের পরিবারের নন, তাঁকে ঘিরে থাকা সমাজ বৃত্তের, এমনকি একটি গোটা দেশেরও। তাঁদের উত্থান-পতন, সাফল্য ও ব্যর্থতার সঙ্গে মিশে থাকে একটি সমাজ বা জাতির সাফল্য ও ব্যর্থতার ইতিহাস। তেমন মানুষ সচরাচর মেলে না, মিললেও, ইতিহাস চেতনার অভাবে জীবদ্দশায় তাঁদের ভূমিকার যথাযথ মূল্যায়ণ আমরা করে উঠতে পারি না। আমাদের জীবন-সীমায় আমাদেরই ধরা-ছোঁয়ার মধ্যে এমনই একজন মানুষ ছিলেন-বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তাঁর অকাল প্রয়াণের পর, তাঁর জীবন-সংগ্রামের এক স্বর্ণোজ্জ্বল সময়ের সহযোদ্ধা, তাঁরই জীবনসঙ্গিনী ও আদর্শের অনুসারী শ্রীমতী কণিকা বিশ্বাস আরও চল্লিশটি বছর থেকে গিয়েছিলেন আমাদের মধ্যে। বীরেন্দ্রনাথকে হারিয়ে এক অস্থির ও ভঙ্গুর সময়ে ছিন্নমূল সমাজের কল্যাণব্রতী মানুষেরা নিরুপায় হয়ে তাঁরই চৌম্বক বিন্দুতে সম্মিলিত থেকে নিজেদের কর্মধারাকে সংহত ও প্রসারিত করার চেষ্টা করে গিয়েছেন। ভেতরে ভেতরে যতই ভেঙেচুরে যান, আমৃত্যু শ্রীমতী কণিকা বিশ্বাস মহীরুহের মতো নিজেকে প্রসারিত করে, সমস্ত কল্যাণকর্মে সকলকে প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। "
"... কণিকা বিশ্বাস আওয়ামী লীগের ছাত্রনেত্রী হিসেবে ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের উত্তাল রাজনীতিতে নজর কেড়ে পৌঁছে যান ধর্মনিরপেক্ষ দেশ গঠনের দাবি নিয়ে স্ফুটমান জাতীয় গণমুক্তি দল গঠনের মঞ্চে। রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তাঁর উত্থানের সম্ভাবনাকে নিষ্কণ্টক করতে সমাজনেতারা মহান শিক্ষাব্রতী ও জননেতা বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁকে মিলিয়ে দেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর্ব পেরিয়ে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একান্ত ইচ্ছায় একমাত্র হিন্দু মহিলা সাংসদহিসেবে তিনি মনোনীত হন। মুজিবোত্তর কালে ভারতে আশ্রয় নেবার পর ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের পাশে দাঁড়ান, সাহায্য ভাতার ব্যবস্থা করেন। জনতা সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সে ভাতা বন্ধ হয়। তাঁদের সাক্ষী হতে হয় মরিচঝাঁপিতে পুনর্বাস গড়ে তোলা স্বজন উদ্বাস্তুদের ট্রাজেডির। অব্যবহিত পরেই বীরেন্দ্রনাথের প্রয়াণ। ভারতীয় বাস্তবতায় ছিন্নমূল ও দলিত সমাজের মুক্তির আকুলতা নিয়ে তিনি যুক্ত হন মান্যবর কাঁশিরামজীর সঙ্গে। ২০০৩ সালের মুখ্যত বাঙালি উদ্বাস্তু সংহার আইন তাঁর সামনে যুদ্ধের নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। তিনি তাঁর বৃত্তের মানুষদের উজ্জীবিত করতে থাকেন সেই সংগ্রামে। "
(আমার ছোট্ট জীবন। কণিকা বিশ্বাস। সম্পাদনা - কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর।)
মতুয়া বাঙালির পীঠস্থান ওড়াকান্দি। হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের লীলাভূমি। সেই বাড়ির পাশের বাড়ির মেয়ে কণিকা বিশ্বাস।
পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করেন। তারপর পড়ার মত মেয়েদের স্কুল ছিল না। কিন্তু জেদি মেয়ের পড়াকে কেন্দ্র করে বয়েজ স্কুল পরিবর্তন হয় কো - এডুকেশনে। সে এক ইতিহাস।
ঘটনাবহুল কলেজ জীবন রামদিয়া কলেজে যা ছিল বাড়ির কাছেই। তারপর রাজনীতির মাঠে। সেই মাঠেই আলাপ গণমুক্তি দলের প্রতিষ্ঠাতা - নেতা, শিক্ষাবিদ, সমাজ সেবক বীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সঙ্গে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের জন্মের প্রাক মুহূর্তে, ১৯৭০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা।
আমি তখন স্কুল ছাত্র। স্কুলের কাছেই এক নির্বাচনী সভা। গণমুক্তি দলের প্রার্থী কার্তিক ঠাকুর। সে সভায় বক্তৃতা দিতে ওঠেন এক গৃহবধূ। লাল পাড় সাদা শাড়ি। মাথায় ঘোমটা। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে কোন ঘোমটা ছিল না।
তারপর দেখেছি ভারতের বাংলায়। সাদা শাড়ি তবে লালপাড় নয়। যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের মতই সমাজসেবায় মগ্ন থেকে অযত্নে অবহেলায় চলে গেলেন বীরেন্দ্রনাথ। দুটি অসহায় শিশু নিয়ে একা হয়ে গেলেন কণিকা বিশ্বাস।
তিনি আমার বৌদি। কিন্তু আমাদের সবার কাছে, যাঁরা শত ভাগে ভাগ হয়ে আছি, স্নেহশীল মায়ের মত, সবার শীতল আশ্রয়।
সে আশ্রয় হারিয়ে গেল কালের আবর্তে।।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
হে মহাজীবন
মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...
-
রোদ যখন উগ্র হয় মাটি ফাটে পুকুর শুকায়, গাছেরা দুর্বল হতে থাকে তবুও শিকড় খোঁজে অতল গভীরতা এই সত্য কোন সীমানা মানে না। প্রতিটি দেশে সংখ্য...
-
তোমার সামনে দাঁড়ালাম তুমি কি শিহরিত হলে আচম্বিতে! প্রতিক্ষার দীর্ঘদিন দীর্ঘশ্বাস অবসান হলো! সেই কবে কবে যেন অসংখ্য পায়ের ভিড়ে সংখ্যা...
-
( In Bengali and English) রাজুদা, কথা রাখলেন না কেন ? গৌতম আলী আচ্ছা রাজুদা, এটা কি আপনি ঠিক করলেন ? কথা দিয়ে কথা রাখলেন না ? এটা তো আপ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন