শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫

সম্পর্কের গাঁটছড়া

সমুদ্রে কিছু ছুঁড়ে দিলে তা আবার ফিরে আসে, লোকে বলে। তেমনি ফেলে আসা অতীত হঠাৎ ফিরে এলো। স্মৃতির ফাঁকে এক চিলতে আলো। গত শতাব্দীর নয়ের দশকে একটা ছেলে এলো আমার ঘরে। আমি তখন বোহেমিয়ান জীবনের পাঠ নিচ্ছিলাম। অগোছালো ঘর, ছন্দহীন, তার মনে হয়েছিল। এমন অনেকেরই মনে হতো - অগোছালো ঘরে অগোছালো জীবন, যা ছিল আমার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। অল্প আলাপেই সে আমাকে বলল Dearest Dadu. Dearest হয়ে গেলাম dear হবার আগেই। সে তখন কৈশোর পেরোচ্ছে। বললাম, এ দেশে এসে কলকাতার কি ভাল লাগলো তোমার ? অকপটে সে সহজ সরল উত্তর দিল- কলকাতার মেয়েদের দিকে তাকালে আমার বুক ধরফর করে। যাবার আগে সটান গেল আমার বড়দার সামনে। বড়দা- যাকে আমরা অত্যন্ত সমীহ করতাম এবং ভয় পেতাম , সেই বড়দাকে প্রশ্ন করলো, গৌতম দাদুকে এতো অবহেলা করো কেন ? দাদা হতচকিত। সে যেন নির্দেশ দিয়ে বলল- আর অবহেলা করবে না। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী সে। তার জানার আগ্রহে সবাই অস্থির। নাম তার নিউটন। হয়তো তার মা বাবা চেয়েছিল ছেলে বড় হয়ে নিউটনের মত বিজ্ঞানী হোক। কি হয়েছে এখনো জানিনা। তবে সাড়ে তিন দশক পেরিয়ে হঠাৎই তার ফোন পেলাম আমেরিকা থেকে। অজ গাঁয়ের ধূলো কাদা মাখা ছেলেটা এখন আমেরিকা ! আমেরিকার বাসিন্দা। তিন সন্তানের বাবা। তার ঘরনী মেম সাহেব। মেম সাহেব বাংলা জানেন না। আমি বাংলা ছাড়া ঠুটো জগন্নাথ। বুঝলাম নাতবৌয়েরসাথে আমার পটবে না। আমার রাধা নাচবে না। একটানা প্রায় দুই ঘন্টা কথা বললো। মূলত সে ই বললো, আমি একনিষ্ঠ শ্রোতা। মেধাবীরা যখন মেধা কাজে লাগায় তখন কোন একটা বিশেষ অবস্থানে আটকে থাকে না। বুদ্ধিমত্তার সব শাখায় অবাধ বিচরণ করে। যেমন ড. বি আর আম্বেদকর, ড. মেঘনাদ সাহা। আমাদের আলাপচারিতায় উঠে এল বিজ্ঞান- ইতিহাস- ভূগোল- আইন - অর্থনীতি- ধর্ম..... সমস্ত বিষয় , সমস্ত কিছুতেই তার অবাধ যাতায়াত। যদিও আমি আনপড়। আমার বিশেষ উৎসাহ আছে নিজের শিকড় নিয়ে, বাংলার আদি জনজাতি নিয়ে, প্রাগৈতিহাসিকতা নিয়ে। এই স্বল্প সময়ে সে বেশকিছু তথ্য জানাল যা আমাকে উৎসাহিত করেছে। যেমন হরপ্পা সভ্যতার লিপির আজও পাঠোদ্ধার করা যায়নি কিন্তু পাঠোদ্ধার করতে না পারলেও পৃথিবীর অন্য প্রান্তে হুবহু হরপ্পা/ ইন্দাস ভ্যালীর লিপির সন্ধান দিল যা চমকপ্রদ। যদিও সেই আদিম মানুষের উত্তরসূরী থাকলেও এখনও পাঠ উদ্ধার করা যায়নি। ছবি..... যদি একটু ইতিহাস- ভূগোল ঘাটি তবে দেখবো - দক্ষিণ গোলার্ধের দক্ষিণ মহাসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপ Rapa Nui বা Easter Island. চিলির অধীন। চিলি থেকে 3500 কি মি দূরে। নিকটবর্তী মানুষের বাস 1900 কি মি দূরে Pitcairn Island. ত্রিভুজ আকৃতির ভূখণ্ড। আয়তন 165 বর্গ কিলোমিটার । জনসংখ্যা মাত্র ছযহাজার। তার মধ্যে আদিম মানুষের সংখ্যা অর্ধেকের কম। আদিম ভাষা রাপা নু ই (Rapa Nui) যা আকতেঁ পারে কিন্তু লিপি পাঠ জানেনা। ফলত ইন্দাস ভ্যালীর ভাষার যে পরিনতি তাদেরও তাই। আর সরকারী ভাষা স্প্যানিশ। তথ্য বলছে, 300( খৃঃ) বছর থেকে রাপাদের অবস্থান ঐ দ্বীপ বা পাহাড় চূড়ায। তাহলে ইস্টার আইল্যান্ডের আদিম মানুষের লিপি আর ইন্দাস ভ্যালীর লিপির মিল হয়েছিল কি করে? কোন যুক্তির উপর নির্ভর করে এটা হতে পারে ? ইন্দাস ভ্যালীর সভ্য মানুষ কি সেখানে গিয়েছিল ? কিভাবে গিয়েছিল ? 300AD তো সময়ের নিরিখে সেদিনের ব্যপার। তখন সমুদ্র আর বরফ যুগের মত শুকনো নেই যে হেটে হেটে চলে যাবে ! আবার হরপ্পা তথা ইন্দাস ভ্যালীর ব্যপ্তি ছিল 3300 খৃষ্ট পূর্ব থেকে 1300 খৃ: পূ: পর্যন্ত। অথচ তার 1600 বছর পরের ইস্টারদের সাথে সম্পর্ক হয়েছিল কীভাবে ? সম্ভবত- ১) লিপির মিল কাকতালীয়। যেমন, অনেক সময় দুইজন মানুষকে হুবহু এক রকম দেখতে পাই অথচ কোন কারণ খুঁজে পাইনা। এটাও তেমনি। আদিম মানুষের জীবনযাত্রা, চিন্তা ভাবনার সাদৃশ থেকে লিপির গঠন হয়েছে। অবশ্য কাকতালীয়তার পিছনেও কার্যকারণ থাকে। বর্তমান মানুষের আদি ছিল আফ্রিকায়। সুদীর্ঘ জীবন - পথে নানা বাঁক। জিন সমস্ত বৈশিষ্ট গেঁথে রাখে মালায়। সে বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটতে পারে জীবনের যেকোন পর্যায়ে। ২) সূদুর অতীতে যাঁরা ইন্দাস ভ্যালীতে সভ্যতার বিকাশ ঘটিযেছিল তাদেরই আত্মীয়রা তুষার যুগের প্রাক্কালে পৌঁছে গেছিল প্রশান্ত মহাসাগরীয অঞ্চলে , যেমন আফ্রিকার আদিম মানুষেরা ছড়িয়েছে সমগ্র পৃথিবীতে। আমাদের হাতে আছে তথ্যের ভান্ডার। যখন খৃষ্টপূর্ব 1300 এবং 300 খৃষ্টাব্দের বছরের সমাধান হবে, তথ্য পরিণতি লাভ করবে ইতিহাসের। আশাকরি বিজ্ঞান একদিন বাস্তবের সন্ধান হাজির করবে জনমানসে। ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

হে মহাজীবন

মাঝরাতে হৃদয় খুব উথাল পাথাল করছিল। সত্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হৃদয় বসন্তের ডাক শুনতে পায়না, পরপারের ডাক শোনে। আর সে ডাক শুনতে ভয় করে, এই সু...