আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাক্কালে "পথসংকেত পত্রিকা"র সম্পাদক বললেন, কবিতা চাই। নাছোড়বান্দা। অগত্যা ভাবতে শুরু করলাম কি লেখা যায়। কিছু শব্দ/লাইন মনের মধ্যে এলো ঘুরপাক খেতে লাগলো। পালিয়ে যেতে পারে- এই ভয়ে বাস স্টান্ডে বসেই টুকে রাখলাম।
শতছিন্ন বাংলা, মধ্যরাতের সূর্য
সে আমার বঙ্গভূমি
খুকু চেঁচিয়ে বলল দেখ আমার কত মুখ
ভাঙ্গা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমার ভবিষ্যত
আমার মুখ কি খুঁজে পাবে কোনদিন
বিহার উড়িষ্যা আসাম ত্রিপুরা
যেসব বাংলাজনপদ হারিয়ে গেছে
মিমিক্রি যাদের মুখের ভূষণ
এবং দেশভাগ হারিয়ে দিয়েছে যাদের
বুনোকুকুর তাড়াখেয়ে পথহারা
প্রভু বদলায় প্রতিনিয়ত বদলায়
অবশেষে হারিয়ে ফেলে নিজের নাম
বাংলা নিয়ে ভাবেনি কেউ
মরমী বাতাস বয়নি বাংলার বুকে
শিকড়ের অভাবে গাছ মরবেই
চারিদিকে কেবল মায়াকান্নারোল
দ্বিতীয় চেষ্টা।
বাড়িতে এসে কলম নিয়ে বসলাম।
আমার বাংলা, আমারই বাংলা ভাষা।
সুন্দরবনের বাঘ কখনো আদিবাসিন্দা নয়
উপমহাদেশের সমগ্র জঙ্গলে ছিল বিচরণ
ক্রমে মানুষ বসতি খড়ির গন্ডি এঁকে দিল
ভুলে গেল ভাইয়ের কথা, বোনের কথা
আত্মপরিচয়ের নতুন মাত্রায় হলো
রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
ওঁরাও ভুলে গেছে বিস্তৃত পরিচয়,
বাংলা যার নাম বাঙ্গালী স্পন্দন
ওঁরা কেউ ওড়িয়া কেউ বিহারী কেউ আসামী
কেউ ত্রিপুরী, খড়ির গন্ডিতে আবদ্ধ জাতিসত্তা।
কেউ কি ভেবেছে ভাষার ধমনীবেয়ে
ভারতের প্রান্তে প্রান্তে বাংলার কথা
কেউ কি ভাবি চলতি ভিড়ে কারো মুখের শব্দে
আমরা পরিচয় খুঁজে পাই ঘটি বাঙ্গাল অথবা
ভারতের লোক, তির্যক ভাষায় সশব্দ রাজধানী ঢাকা ও কলকাতার রাজপথ।
ভাষার জাতপাতে বিদ্ধ আমরা, বাংলার কথা
বাঙালির কথা ভাবতে পারিনা, ভাবতে পারিনা
শতছিন্ন মাতৃভূমিতে, খড়ির গন্ডির দাগ উপেক্ষা
করে আপন পরিচয়ের সত্বায় আছে
রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
অথবা
আমার এই বাংলা, আমারই বাংলা ভাষা।
একদা বাঘেরা বেড়াতো আসমুদ্র হিমাচল
সময়ের বেড়াজালে স্বাধীন সত্বা হারানো
কেউ কেউ আটকে গেল খড়ির গন্ডিতে
এই বাংলায়, প্রান্তবাসী হলো।
অতীতের সত্বা ভুলে পেল নতুন পরিচয়
রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
ভুলে গেল ভাই, ভুলে গেল বোন
ভুলে গেল ভাষা , যা ছিল মায়ের, প্রাণের।
ওঁরাও ভুলে গেছে বিস্তৃত পরিচয়
বাংলা যার নাম, বাঙ্গালী স্পন্দন।
সীমানার বজ্রকঠিন ঘেরাটোপে ওঁরা কেউ
ওড়িয়া কেউ বিহারী কেউ আসামী, কেউ ত্রিপুরী
গন্ডিতে আবদ্ধ জাতিসত্বা।
ভদ্রলোক বাঙ্গালী ভাবেনি বাংলার কথা,
লুঠের বাতাসা হয়ে আজ পরিচয় বিলীন
ভদ্রলোক বাঙ্গালী ভাবেনা ভাষার মর্মবাণী
ডুমুরের ফুল যেমন, ভাষা বাঁচতে ব্যস্ত গ্রাম বাংলায়, যদিও আগ্রাসী রাষ্ট্রীয় কীট শানায় আক্রমণ।
আমার এই বাংলা, আমারই বাংলাভাষা
খন্ডিত পরিসরে কি হতে পারেনা রয়েল বেঙ্গল।
২১/০২/২০২২
একুশের সকালে মন খুসখুস। আবার কলম নিয়ে বসলাম।
#
ঢাকার রাজপথে হাটছিলাম বন্ধুর সাথে
সে বলল তোর কথা শুনলে যেকেউ
বুঝে যাবে তুই হিন্দুস্তানী।
বান্ধবীর সাথে ঝালমুড়ি খেতে খেতে
কলেজ স্ট্রীটের ফুটপাতে হাটছিলাম
সে বলল জাত বাঙ্গাল তুই, মানুষ হলিনা।
অংক মেলেনা আমার, ভাষার স্বদেশ
কেবল লুকোচুরি খেলে।
------------
কিন্তু মন মানেনা। আবার চেষ্টা করি।
###
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
এ উচ্চারণ বাংলায় নয়, ভাষা আন্দোলন
ধারণ করে মাতৃভাষাকে গর্বিত করেছে যে দেশ
সেই বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম উচ্চারণ।
শহর গঞ্জ বা গ্রাম সর্বত্রই
কোন ফিসফাস নয়, সগর্বে ভিন্ন ভাষা বিচ্ছুরণ
কথার শুরু মধ্য বা শেষ
বাংলাভাষাকে ধনী করতে অন্য ভাষার সাদর আমন্ত্রণ।
কারো সাথে দেখা হলেই অন্তস্থল থেকে
বেরিয়ে আসে আসলায়ে আলায়কুম অথবা গুডমর্নিং অথবা নমস্তে,
বিদেশি শব্দে নিজের ভাষাকে সাজাতে সাজাতে
হারিয়ে ফেলছি মায়ের জৌলুস।
হে একুশের বীর সেনানী, তোমরা উপড়াতে
চেয়েছিলে আগাছার ঝোপ, অথচ তাকিয়ে দেখ
আগাছার দোদন্ড প্রতাপে শুকিয়ে যাচ্ছে
রক্ত গোলাপ।
হে একুশের রক্তসাথী ভাইয়েরা আমার
অমরত্বের রথ ছেড়ে নেমে এসো বাংলার ধূলায়
আবার আনতে হবে ফাগুনের জোয়ার।
এবার লড়তে হবে বিদেশি শাসক নয়,
বিদেশি ভাষা-সঙ্গীনধারী স্বদেশী বন্ধু পরিজনে।
হে বীর, এবার এসো আবেগময় বাঙ্গালী অন্তরে
ফুলের জলসা ছেড়ে আলপনার পথ ধরে
ছড়িয়ে পড়ো প্রান্তরে প্রান্তরে,
রক্তনেশা জাগাও বাংলাভাষার বিশুদ্ধ উচ্চারণে।
####
না হচ্ছে না। চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে অনেক ফারাক। আমার সামর্থ্যের দৌড় এই পর্যন্তই।
আপনার মতামত জানালে খুশি হব, দরকারে আবার চেষ্টা করবো।